
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ঝাড়ুদারদের দুর্নীতি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মাসিক বেতন মাত্র ১৭ হাজার টাকা হলেও বহু পরিচ্ছন্নতা কর্মী কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন। রাজনীতির প্রভাব ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পত্তি, বিলাসবহুল বাড়ি, এমনকি বিদেশে সন্তানদের পড়াশোনার ব্যবস্থাও করেছেন। অথচ সাধারণ ঝাড়ুদাররা আজও নুন আনতে পান্তা ফুরোয় এমন অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
হাজারীবাগের গণকটলির ছয়তলা আলিশান ভবনের দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী আব্দুল লতিফ। একই ভবনের আরেকটি ফ্ল্যাটেরও মালিক তিনি। যদিও লতিফ এ মালিকানার কথা অস্বীকার করেন, তবে তার স্ত্রী স্বীকার করেছেন বিষয়টি। লতিফ তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন সাধারণ ঝাড়ুদার হিসেবে। কিন্তু গত ১৬ বছর ধরে স্ক্যাভেঞ্জারস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে প্রভাবশালী অবস্থান ধরে রেখেছেন। সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে তিনি শুধু গত ১৬ বছরেই সংগ্রহ করেছেন প্রায় ১৭ কোটি টাকা। কোয়ার্টার পাইয়ে দেওয়ার নামেও শ্রমিকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন তিনি। ঢাকায় ফ্ল্যাট ও ভবনের পাশাপাশি কুমিল্লার হোমনায়ও রয়েছে তার বিপুল সম্পত্তি। সেখানে তার কসমেটিক্সের দোকান ও ফার্মেসি পর্যন্ত রয়েছে। ছেলেকে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন কানাডায়।
শুধু লতিফ নন, সহকর্মী ঝাড়ুদার আব্দুল জলিলও একইভাবে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাসে মাত্র ১,২৫০ টাকা বেতন নিলেও রাজধানীর রায়েরবাগে তিনতলা ভবনের মালিক তিনি। অভিযোগ আছে, কামরাঙ্গীরচরেও তার একাধিক সম্পত্তি রয়েছে। জলিল এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এমন কোটিপতি ঝাড়ুদারের তালিকায় রয়েছেন আরও অন্তত ১১ জন। হাজারীবাগের গণকটলির একটি ভবনের ১৬টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১১টির মালিকও এসব পরিচ্ছন্নতা কর্মী। অভিযোগ আছে, তারা নিজেরা ঝাড়ু দেওয়ার কাজ না করে অন্যদের দিয়ে করান, অথচ পুরো বেতন নিজেরাই ভোগ করেন। চাকরির ক্ষেত্রেও অনিয়ম চলছে। যাদের প্রকৃত প্রয়োজন, তারা চাকরি পান না; বরং যারা টাকা দিতে সক্ষম, তারাই চাকরি কিনে নিচ্ছেন।
কেরানীগঞ্জের খোলা এলাকার পাঁচতলা ভবনের মালিক এখলাসও একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। একই সঙ্গে পাশের নির্মাণাধীন ভবনেও রয়েছে তার শেয়ার। অথচ তিনি এখনো সিটি কর্পোরেশনের কোয়ার্টারে সরকারি ফ্ল্যাট দখল করে বসবাস করছেন।শ্রমিকদের যখন দৈনন্দিন জীবন চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, তখন ইউনিয়ন নেতাদের রান্নাঘর পর্যন্ত টাইলস বসানো। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা এসব কোটিপতি ঝাড়ুদার নেতা এখন নিজেদের বিএনপি নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চেষ্টায়ও সক্রিয়। সাধারণ ঝাড়ুদারদের ভাগ্য অপরিবর্তিত থাকলেও প্রভাবশালী কয়েকজন সংগঠক রাজনীতি ও চাঁদাবাজির সোনার কাঠি ছুঁয়ে রাতারাতি বনে গেছেন কোটিপতি।
সূত্র: নিউজ 24