Image description

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে রাখাইনে ফিরলেই সমস্যার সমাধান হবে না। মিয়ানমারের ভেতরেও অনেক রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদেরও নিরাপদে নিজ ভূমে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে। মিয়ানমারের সাংবাদিক, অধিকারকর্মীসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন এ কথা। আর বাংলাদেশ বলেছে, সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার সরকার এবং আরাকান আর্মি দুই পক্ষের সঙ্গেই আলোচনা চলমান। 

মিয়ানমারের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত, বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেষা রাখাইন প্রদেশ। ২০২৪ সালের পর থেকে প্রদেশটি দখলে রেখেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ হচ্ছে সেনাবাহিনীর। ফলে দেশটির ভিতরে বাস্তুচ্যুত হয়ে বসবাস করছে ৫ লাখ ৫০ হাজার ৫২৪ রোহিঙ্গা। প্রদেশটিতে রাখাইন জনগোষ্ঠীর পর দ্বিতীয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গা।

নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে। যাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে চ্যানেল 24’র সঙ্গে কথা হয় মিয়ানমারের সাংবাদিক, ন্যাশনাল ইউনিটি সরকারের প্রতিনিধিসহ বিদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে। তারা বলছেন, রোহিঙ্গা সমস্যাটি বহুমাত্রিক এবং জটিল। শুধুমাত্র নাগরিকত্ব বা প্রত্যাবাসন করলেই সমস্যার সমাধান হবে না বলে মত তাদের।

ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জাভিয়েট ইয়ালুম বলেন, রোহিঙ্গারা মূলত সামষ্টিক পরিচয়ের কারণে নির্যাতিত। সমস্যার প্রথম সমাধান হতে পারে তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া। রাখাইনের ভেতরে যারা এখনো বাস্তুচ্যুত, তাদের যদি নিরাপদে নিজ গ্রামে ফেরানো যায়, তবেই বলা যাবে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

মিয়ানমার নাও এর সাংবাদিক সু চে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। তাই পারস্পরিক আস্থা গড়ে তোলা জরুরি। ২০২১ সালের পর মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ রোহিঙ্গাদের দুর্দশা সম্পর্কে বেশি সচেতন হয়েছেন এবং ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে।

 

বিআরওইউকের প্রেসিডেন্ট তুন খিন বলেন, বর্তমানে রাখাইন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। তারা এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনী উভয়ই অপরাধ করেছে। তাই সমাধানে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ফরটিফাই রাইটস বলছে, এই সমস্যা রোহিঙ্গাদেরই সমাধান করতে হবে।

ফোরটিফাই রাইটসের পরিচালক জন কিনলে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া সম্ভব নয়। নাগরিকত্ব প্রশ্নে বড় বাধা রয়েছে। তবে যুদ্ধাবস্থা বন্ধ করাটাই এখন সবচেয়ে জরুরি।

বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলছেন, সমস্যা একদিনে সমাধান হবে না। জানান, সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার সরকার এবং আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনা চলছে।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, এই সংকট একদিনে সমাধান সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে মিয়ানমার প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করেছে। নাগরিকত্ব দেয়ার বিষয়টি মিয়ানমার সরকার ঠিক করবে। তবে বাংলাদেশ মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মি উভয়ের সঙ্গেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গা সংকটটি আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরার জন্য এ মাসেই নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হবে কনফারেন্স। এটি সফল হলে পরবর্তীতে কাতারেও আয়োজন করা হবে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের।