Image description

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গতবছরের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। ভারতে থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন এবং একের পর উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সাবেক এ সরকারপ্রধান। প্রায় সময়ই ‘বাংলাদেশে ঢুকে পড়বেন’ বলে নেতাকর্মীদের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে তার সে তর্জন-গর্জন এখন পর্যন্ত ‘কাগুজে বাঘ’ হিসেবেই দেখছে সচেতন নেতাকর্মী ও বিশ্লেষকরা।

 

তবে এর মধ্যেও আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আবারও চাউর হচ্ছে ‘ষড়যন্ত্রতত্ত্ব’। দুর্গাপূজার পরই দেশে ফেরার লড়াইয়ে নামবে কলকাতায় থাকা আওয়ামী লীগের নিউটাউন শাখা। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরে শেখ হাসিনার গুম-খুনকে পাশ কাটিয়ে আবারও তাকে প্রাসঙ্গিক করার অপচেষ্টায় ব্যস্ত ভারত ও তার প্রক্সিগুলো। এ লক্ষ্যে সচল করা হচ্ছে আওয়ামীপন্থি বিভিন্ন এজেন্সিকে। তাদের তৎপরতায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—ফ্যাসিবাদী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি সত্যিই দেশে ফিরছেন? ভারতীয় মিডিয়ার একাংশ এবং কিছু বুদ্ধিজীবীর তৎপরতা এ জল্পনাকে আরো উসকে দিয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (‘র’) মদতে হাসিনার পক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগের একটি সম্মেলন। এ সম্মেলনের নেপথ্যে ভারতের ‘র’-এর সমর্থন রয়েছে বলে অভিযোগ। সেখানে অংশ নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় সারির কমিউনিস্ট নেতা গৌতম রায়। নিজ রাজ্যে তেমন গুরুত্ব না পেলেও, বারবার হাসিনার প্রশংসা করে নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখার চেষ্টায় থাকেন গৌতম। তার একটি বইয়ের ভূমিকাও লিখেছেন শেখ হাসিনা।

সম্মেলনে গৌতম রায় দাবি করেন, ৩৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে হাসিনা দুপুরে ভাত খাওয়ার তেমন সুযোগ পাননি। কাজের চাপে বেশির ভাগ সময় তিনি চা আর টোস্ট বিস্কুট খেয়েছেন। তিনি হাসিনার এ সরল জীবনযাত্রার প্রশংসা করে তাকে সুফিয়া কামাল, সুচিত্রা মিত্র ও গৌরী আইয়ুবের মতো নারীদের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

শুধু সম্মেলন নয়, ডিজিটাল মাধ্যমেও হাসিনার পক্ষে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, পশ্চিমবঙ্গের একটি ওয়েব পোর্টাল নিয়মিত আওয়ামীপন্থিদের অনুষ্ঠান প্রচার করছে। এর পরিচালক ধবল সরকার (নাম পরিবর্তিত) নাকি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা পেয়েছেন। এছাড়া অসংখ্য ফেসবুক ইনফ্লুয়েন্সারকেও টাকা দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট করানো হচ্ছে।

এ তৎপরতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, ভারত ও বাংলাদেশের একটি অংশ পরিকল্পিতভাবে হাসিনার প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে।

 

রাজনৈতিক সমীকরণ ও বাস্তবতার দ্বন্দ্ব :

রাজনীতির মাঠ গরমে শেখ হাসিনার একের পর বাগাড়ম্বর দেখা গেলেও বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত শুল্কের কারণে চাপে আছেন। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা কতটুকু সফল হবে—তা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন রয়েছে।

তবে এর মধ্যেও দিল্লিতে আওয়ামী লীগের নেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। সম্প্রতি ওবায়দুল কাদের দিল্লিতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে হাসিনার ঘনিষ্ঠ কলকাতার কিছু বুদ্ধিজীবীকে তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তারা আগামী দিনে মিডিয়ায় আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য কী ভূমিকা রাখবেন—তা নিয়ে আলোচনা করছেন। শোনা যাচ্ছে, পূজার পরই কলকাতার হাসিনাপন্থি বুদ্ধিজীবীরা এ বিষয়ে বড় পদক্ষেপ নিতে পারে। এর পেছনে ‘র’-এর পূর্ণ সমর্থন থাকবে বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে। এ কলকাতার বুদ্ধিজীবী ও আওয়ামী লীগের মধ্যে পিডিএফ প্রচারে পুস্তক, নানা ধরনের ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

প্রচারে এসব ভুয়া তথ্য-উপাত্ত দিয়ে তাদের বলা হচ্ছে, সেগুলো কলকাতা, দিল্লি, ঢাকায় শেয়ার করার জন্য। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ও ব্যক্তি ইউনূসের বিরুদ্ধেও তারা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন। এ প্রোপাগান্ডা আরো জোরেশোরে চালাতে কাজ করছেন তারা। একাধিক গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, সে সব নীলনকশা চলছে দিল্লিতে হাসিনার আশ্রয়স্থলে বসেই।

সব মিলিয়ে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের এ তৎপরতা নতুন এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি দেশে ফিরতে পারবেন কি না—তা সময়ই বলে দেবে বলে জানিয়েছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।