
খাদি কাপড় ও রসমালাইয়ের জন্য বিখ্যাত কুমিল্লার অধিকাংশ মানুষ ধর্মপ্রাণ। সামাজিক বন্ধনেও এই জেলার বাসিন্দাদের প্রশংসা দেশজুড়ে। স্বাধীনতার পর থেকেই ইসলামপন্থি, জাতীয়তাবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদদের সহাবস্থান ছিল। পাশাপাশি বসে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান হাসিমুখে উপভোগ করেছেন নেতারা। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার পর সেই ঐতিহ্যের ছন্দপতন হয়। সাড়ে ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শোষণে এখানকার মাটি নরকে পরিণত করেছিল শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার। নির্বিচারে খুন করা হয়েছে ৮৭ জনকে, আর গুমের শিকার হয়েছেন তিনজন।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন সব আদর্শ ও মতের রাজনৈতিক নেতারা। আবার ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানেও কুমিল্লার মানুষের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা ছিল অপরিসীম। মাঝে দেড় দশকের অপশাসনে এই জেলার মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে কিছু দানব বানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তাদের দিয়ে খুন-খারাবি, অত্যাচার-নির্যাতন এমনকি গুমের মতো জঘন্য অপরাধ করিয়েছেন শেখ হাসিনা।
কুমিল্লায় বিএনপির ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী মতাদর্শের কোণঠাসা করার জন্য কয়েকজন নেতাকে মাফিয়া বানান হাসিনা । তাদের মধ্যে অন্যতম সদর আসনের ক্ষমতাচ্যুত সংসদ সদস্য আকম বাহাউদ্দিন বাহার, যিনি এলাকায় ফেরাউন হিসেবে পরিচিত। দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের ক্ষমতাচ্যুত সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক । তারপরে আছেন সাবেক এলজিডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসনের বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর ছাড়া করে রাখতেন। সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে চালাতেন খুন-খারাবি ও অত্যাচার-নির্যাতন। দেশের আলোচিত গুমের শিকার হিরো ও হুমায়ুনও এই লাকসামের সন্তান। নিখোঁজের একযুগ পার হলেও এখনো হদিস মেলেনি তাদের। আরো এক মাফিয়া ছিলেন, তিনি কুমিল্লা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল)।
হাসিনার দুঃশাসনের সাড়ে ১৬ বছরে বিএনপির ৪২ নেতাকর্মী খুন, আহত সহস্রাধিক, গুম হওয়া ৩ জনের বিষয়েও পাওয়া যায়নি কোনো তথ্য। জামায়াতের পাঁচ নেতাকর্মী হত্যা ও শতাধিক ব্যক্তিকে আহত করা হয়েছে । জুলাই বিপ্লবেও কুমিল্লায় শহীদদের সংখ্যা ৪০ জন। সে হিসেবে ১৬ বছরের অপশাসন ও জুলাই বিপ্লব মিলে ৮৭ প্রাণ কেড়ে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও ফ্যাসিবাদী সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
২০০৯ সালের সাজানো নির্বাচনের পর ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালের ভোট খেয়ালখুশি মতো করার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম দমনের নামে বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখার জন্য শতাধিক অস্ত্রধারী ক্যাডার ব্যবহার করেন বাহার। চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনেও এসব অস্ত্রের মহড়া দেখেছে দেশবাসী।
মামলার পাহাড়
হাসিনার দুঃশাসনে বিএনপি ও জামায়াতকে দমিয়ে রাখার জন্য ১ হাজার ২০০ মামলায় ৮০ হাজার নেতাকর্মীকে জড়ানো হয়েছিল। কুমিল্লা বারের তথ্য অনুযায়ী মামলা নিষ্পত্তির জন্য ৭৬০টি আবেদন পড়েছে । এর মধ্যে দুই ধাপে ১৪৯ ও ১১টি মিলে ১৬০টি মামলা প্রত্যাহার করার আবেদন করা হয়েছে। বিভিন্ন জটিলতার কারণে সব মামলা নিষ্পত্তির আবেদন এখনো করতে পারেননি দলগুলো।
মুরাদনগরের সন্তান ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেন হাসিনা। গত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সময় দাউদকান্দি উপজেলায় সাড়ে ১৬ বছরের ৩৮৯টি মামলায় ১০ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া ৯টি খুনসহ ছাত্রদল নেতা সাইফুল ইসলামকে গুম করা হয়েছে। চৌদ্দগ্রামের ১৩ ইউনিয়নের জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শতাধিক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। ৭ জনকে নির্মমভাবে খুন করেছে। মহাসড়কের নোয়াবাজারে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে ৮ জনকে পুড়িয়ে মেরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল হুদাসহ কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়। সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের কারণে পুরো এলাকায় একনায়কতন্ত্র ও ত্রাসের রাজত্ব চলছিল। সাধারণ মানুষ ভয়ে কিছুই বলার সাহস পেত না।
কুমিল্লা বারের পাবলিক প্রসিকিউটর কাইমুল হক রিংকু আমার দেশকে বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে মিথ্যা ও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছে প্রায় ৮০০ মামলার। এর মধ্যে ১৬০টি মামলা যাচাই-বাছাই করে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অন্যগুলো যাচাই-বাছাই চলছে । বাকি মামলাগুলোও মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসক কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে।
মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়ছার আমার দেশকে বলেন, ৭৬টি মতামতের মধ্যে ৪২টি মামলা নিষ্পত্তির জন্য গত ১৯ জুন সভায় সিদ্ধান্ত হয় এবং নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াধীন আছে। পিপি থেকে আমরা ৬০১টি আবেদন পেয়েছি। ৭৩৮টি আবেদন ডিপি বরাবর পাঠানো হয়েছে। নতুন করে আরো ৯৬টি আবেদন জমা পড়েছে । সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে।
বিএনপি ও জামায়াতের অফিস-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল
কুমিল্লায় বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং কার্যালয় দখল করে ছিল আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা । কুমিল্লা সদর, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের অফিসটি করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ও এক হিন্দু ব্যক্তির জায়গা দখল করে । যে জমির মূল্য প্রায় শত কোটি টাকা । এছাড়া কুমিল্লায় সরকারি বিভিন্ন জায়গা দখল করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর।
দেশে আওয়ামী লীগের শীর্ষ মাফিয়াদের মধ্যে শামীম ওসমানের পরই আছে কুমিল্লার বাহাউদ্দিন বাহারের নাম। কুমিল্লা বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের মামলা হামলা দিয়ে হয়রানি করতেন বাহার। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর পুরো কুমিল্লা জুড়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছড়িয়ে দেন এই দানব। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের দমানোর জন্য কোতয়ালী ও সদর দক্ষিণ থানায় দুই শতাধিক মামলা করা হয়েছিল।
২২ মামলার আসামি কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু আমার দেশকে বলেন, কুমিল্লার সন্ত্রাসী সাবেক এমপি বাহার মহানগর নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতন করেন । মহানগরে আমাদের দুজন কর্মীকে হত্যা করেছে । সাধারণ মানুষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও জমি দখল করেছে। বাহার হিন্দুদের জায়গাও দখল করেছেন। কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবুর নামে ২০টি, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল কাইয়ুমের নামে সর্বোচ্চ ৪৩টি মামলা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
মামলায় সর্বস্বান্ত হয়েছে এমন শতাধিক নেতাকর্মীর মধ্যে অন্যতম কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে কুমিল্লায় আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লায় চাঁনপুর এলাকায় ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ আমাকে গুলি করে হত্যা করার ঘোষণা দিয়েছিল। ২৭টি মামলা হয়েছে আমার নামে। মামলার কারণে আমার শিক্ষা ও পারিবারিক জীবনের চরম ক্ষতি হয়েছে। আমার বন্ধুরা আর্থিক ও সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী হলেও একমাত্র বিএনপির রাজনীতি করায় আমাকে পথে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।
আওয়ামী অত্যাচারের শিকার
আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মল্লিকার দীঘি গ্রামের বাসিন্দা ছাত্রদল নেতা গোলাম কিবরিয়ার দুচোখ উপড়ে ফেলে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে কুমিল্লা-৫ আসনের সাবেক এমপি এম এ জাহের ও তার ভাতিজা নিষিদ্ধ সংগঠন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু তৈয়ব অপির নির্যাতনে দুচোখ হারাতে হয়। তারা ছুরি দিয়ে চোখ দুটি উপড়ে ফেলে। এ সময় বৈদ্যুতিক শকও দেওয়া হয়। এ অবস্থায় মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
টার্গেট কিলিং ও গুম
২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর ‘গুম’ হন লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম হিরু এবং লাকসাম পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজ। সম্পর্কে তারা চাচা-ভাতিজা। স্বজনদের দাবি, তখন র্যাব ১১-এর সদস্য পরিচয়ে দুজনকে তুলে নেওয়া হয়। কোনো সুরাহা করতে না পেরে ঘটনার ছয়মাস পর মামলা করেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু আজ পর্যন্ত ‘নিখোঁজ’ দুই ব্যক্তির সন্ধান মেলেনি। নেই মামলারও কোনো অগ্রগতি।
হুমায়ুন কবির পারভেজের একমাত্র ছেলে শাহরিয়ার কবির রাতুল বলেন, ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর সাইফুল ইসলাম হিরু ও হুমায়ুন কবির পারভেজকে র্যাব ১১-এর সদস্যরা তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আমরা বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে ধরনা দিয়েও সাড়া পাইনি। তবে সে সময় র্যাব ১১-এর অধিনায়ক (সিইও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ আমাদের বলেছিলেন, ‘আপনারা স্থানীয় সংসদ সদস্যের (তাজুল ইসলাম) সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে আসেন। তারপর আপনাদের বিষয়টি দেখব’। তখন আমরা তাজুল ইসলামের সঙ্গেও দেখা করেছিলাম। তার কাছে হিরু-হুমায়ুনকে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি-মিনতি করেছিলাম। তারপরও তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। পরে র্যাবের তারেক সাঈদও আর আমাদের সঙ্গে দেখা দেননি।
২০২৩ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে যে আন্দোলন হয়, সে আন্দোলনে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্র মনোহরগঞ্জ উপজেলার উত্তর হাওলা ইউনিয়নের বরলা গ্রামের হাফেজ রবিউল আলম পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও শহীদ পরিবারের বক্তব্য
জুলাই বিপ্লবে ২০২৪ সালের ১১ জুলাই প্রথম কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে হয় শিক্ষার্থীদের। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মাসুমসহ প্রাণ হারান ৪০ জন। তাদের তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়ছার।
জুলাই বিপ্লবে কুমিল্লায় সর্বোচ্চ দেবিদ্বারে শহীদ হয়েছেন ১০ জন, মুরাদনগরে ৭, দাউদকান্দি ৪, বরুড়া ৩, নাঙ্গলকোট ৩, চৌদ্দগ্রাম ২, তিতাস ২, হোমনা ১, চান্দিনা ১, লাকসাম ২, সদর দক্ষিণ ২, মেঘনা ২ ও মনোহরগঞ্জে একজন।
শহীদ হামিদুর রহমান সাদমানের মা কাজী শারমিন বলেন, ছাত্রদের উপর এত অত্যাচার-নির্যাতন আমি সহ্য করতে পারিনি, এজন্য আমি মা হয়েও কুমিল্লায় আন্দোলনে গিয়েছিলাম। যখন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে, তখন আমিও কান্দিরপাড় এলাকায় বিজয় মিছিল করছিলাম। এমন সময় ফোন আসে যে সাদমানের গুলি লেগেছে । আমি বিশ্বাস করিনি। সাদমানের বন্ধু রাফি ফোন দিয়ে বলল আন্টি সত্যিই গুলি লেগেছে
ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পরেও তার নিঃশ্বাস ছিল । বাঁচবে না বলে জীবন্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল মর্গের ভেতরে তাকে রাখা হয় । যখন তার বুকে গুলি লাগে তখন একবার চিৎকার করেছিল এবং যখন তাকে রিকশায় তোলা হয় তখন তিনবার আম্মু বলে ডাকে । লাশ গুম হতে পারে জেনে তার বন্ধু রাফি ও আল আমিন অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ কুমিল্লা নিয়ে আসে । কুমিল্লা রাজগঞ্জ দেশওয়ালি পট্টির বাসায় এনে পরদিন সদর দক্ষিণ উপজেলা দিগলগাঁও গ্রামে তাকে দাফন করা হয়।
বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন
কুমিল্লায় নিহতদের মধ্যে অন্যতম হলো জামায়াত নেতা আলাউদ্দিন মিয়া, আবদুল আজিজ, নাঈম উদ্দিন মুরাদ, মুহাম্মদ ইব্রাহিম, রুহুল আমিন দুলাল, মনোহরগঞ্জের মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন । আওয়ামী লীগের নির্যাতনে নিহতদের কথা বলতে গিয়ে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ‘আওয়ামী দুঃশাসনের বিগত ১৬ বছর ছিল জুলুম-নির্যাতন এবং দমন-পীড়ন মামলা-হামলা, গুম, আয়নাঘর, ক্রসফায়ারের এক অবর্ণনীয় অধ্যায়। মিথ্যা মামলায় জামায়াতের জাতীয় নেতা বিচারিক হত্যাকাণ্ড ঘটানোসহ জেল-জুলুম তো নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় ছিল। জামায়াতের কেন্দ্র থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত সব অফিস বন্ধ করে দেওয়া, নেতা থেকে কর্মী পর্যন্ত সবাইকে মামলা-হামলায় জড়ানো হয়েছিল। যার কারণে কেউ ঘরে থাকতে পারত না। এমনকি ইসলামপ্রিয় মা-বোনদেরও জেল-জুলুমের শিকার হতে হয়েছিল। বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করা, বুলডোজার দিয়ে জামায়াত নেতাদের বাড়ি-ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া। তাছাড়া জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের মারধর করে হাত-পা ভেঙে ফেলা, চোখ উপড়ে ফেলা এবং পায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে দেওয়া ছিল নিয়মিত ঘটনা।
শীর্ষ নেতাদের ভাষ্য
একাধিকবার হামলার শিকার বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হাজী আমিন রশিদ ইয়াছিন বলেন, মামলা-হামলা গুম-খুন, অত্যাচার-নির্যাতন সবচেয়ে বেশি হয়েছে কুমিল্লায় । হাসিনা পতনের পর মামলা নিষ্পত্তির আবেদন করা হয়েছে প্রায় আট শতাধিকের মতো। আদালতের পিপি মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে উদাসীন। ধীরগতিতে কাজ করার কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে। মামলা নিষ্পত্তি সংক্রান্ত কমিটি এ বিষয়ে আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন ।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ড. মোবারক হোসেন বলেন, জঙ্গি তকমা দিয়ে জামায়াতের নেতাকর্মীদের গুম ও হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। দেশে সবচেয়ে বেশি অত্যাচারের স্বীকার জামায়াত ও শিবির। আমরা নিজেদের ঘরে ঘুমাতে পারিনি। হামলা, মামলা দিয়ে আমাদের দূরে রাখা হতো। আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির স্বীকার হয়েছি।
বর্তমানে মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার নাজির আহমদ খাঁন বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সময় কুমিল্লায় আট শতাধিক মামলা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি মামলা নিষ্পত্তির কাজ করছে। কিছু মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।