Image description

জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত ও শর্তের কারণে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সময় বাড়িয়েও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হওয়ায় আবারও কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট মহলে সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন করে সংশয় দেখা দিয়েছে।

গতকাল মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগে কমিশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না এলেও কয়েকটি দল কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবার চূড়ান্ত ধাপে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার সর্বশেষ চেষ্টা চালানো হবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর অনড় অবস্থানের কারণে সফলতার সম্ভাবনা নিয়েই প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে।

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেয়া ৩০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে অন্তত দুই ধরনের স্পষ্ট মতবিরোধ রয়েছে-

বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বলছে সংবিধান সম্পর্কিত বিষয় বাদ দিয়ে অন্য প্রস্তাবগুলো নির্বাহী আদেশ বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয় সংসদ থেকেই চূড়ান্ত করতে হবে।

জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও আরও কিছু ইসলামী দলগুলো চায় নির্বাচন পূর্বেই জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিয়ে তা পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে, এই সনদের ভিত্তিতেই পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, "নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার—এই তিনটি ভিন্ন বিষয়। একটিকে অন্যটির ওপর নির্ভরশীল করা যাবে না। নির্বাচন তার নির্ধারিত সময়েই হতে হবে।"

তিনি আরও বলেন, "যেসব বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে নোট অব ডিসেন্টসহ সংবিধান সংশ্লিষ্ট ১৯টি বিষয়ে আমরা আলাদা মতামত দিয়েছি।"

এদিকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন,"আগামী নির্বাচন যদি জুলাই সনদের ভিত্তিতে হয়, তাহলেই তা হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য। সনদ বাস্তবায়নে প্রয়োজনে গণভোট কিংবা প্রভিশনাল কনস্টিটিউশনাল অর্ডার ব্যবহার করা যেতে পারে।"

এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, "রাষ্ট্রকাঠামোগত যেসব পরিবর্তন প্রস্তাব করা হয়েছে, তা সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তন। তাই শুধু সংশোধনী নয়, গণপরিষদ গঠন করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমেই এই সংস্কারগুলো টেকসই করা সম্ভব।"

জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, "জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় আসতেই হবে। এখান থেকে বের হওয়ার কোনো পথ নেই। নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই হবে এবং সেটি হবে জাতির নবজন্মের নির্বাচন।"

তিনি আরও বলেন,"ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আমাদের যে সুযোগ এনে দিয়েছে, সেটি ইতিহাসে বিরল। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার সময় এখনই।"

প্রধান উপদেষ্টার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, "যদি আমরা একমত হতে পারি, তবে এই কমিশনের কাজ বিশ্বে একটি অনুসরণীয় মডেল হয়ে থাকবে। এটি যেন খুঁতখুঁতেভরা দলিল না হয়, বরং নিখুঁত, নির্ভুল ও ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়।"

দলগুলোর পক্ষ থেকে ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আরও বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। এর ফলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর চূড়ান্ত মতামত জানা যাবে এবং জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া স্পষ্ট হবে।

কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, বিএনপি’র সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের হামিদুর রহমান আযাদ, এনসিপির আখতার হোসেন প্রমুখ।

শীর্ষনিউজ