Image description

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ঘিরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় নানা প্রস্তাব উঠে এসেছে। তবে কোন পদ্ধতি বেছে নেয়া হবে, তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত ঐকমত্য তৈরি হয়নি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, কমিশনের হাতে কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়ার ক্ষমতা নেই। তারা শুধু বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ করতে পারবেন। বিএনপি বলছে, সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত বিষয় বাদে বাকি যেসব বিষয়গুলো আশু বাস্তবায়ন সম্ভব। সেসব বিষয় নির্বাহী আদেশ বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।  জামায়াতে ইসলামী বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের দাবি তুলেছে। আবার কেউ গণভোট, কেউ রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বা উচ্চ আদালতের মতামত নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। ফলে জুলাই সনদ কার্যকরের সামনে আপাতত পাঁচটি সম্ভাব্য পথ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে।

গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সনদের বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে।

ওদিকে গতকাল রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়া পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সনদে স্বাক্ষরের জন্য শনিবারের মধ্যে প্রত্যেক দলের দুইজন করে ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে বলা হয়েছে।

ক্ষেত্রে সেটাকে প্রাধান্য দেয়া যেতে পারে। বাকি সব ক্ষেত্রে সংবিধান যেমন আছে তেমনই থাকবে।
তিনি বলেন, ৫-৭ই আগস্ট সরকারের অনুপস্থিতিতে জনগণের ইচ্ছাই কার্যকর ছিল। সেটিই সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ‘সলোমন এক্সপ্রেশন অব দ্য উইল অব দ্য পিপল’। এটি বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে প্রতিফলিত হলে আগামী নির্বাচন জুলাই সনদের ভিত্তিতে করতে আর কোনো আইনগত জটিলতা থাকবে না।

শিশির মনির বলেন, সংবিধানের ১৫৩ অনুচ্ছেদের মধ্যে ইতিমধ্যে ৫৭টি অনুচ্ছেদ অকার্যকর হয়ে গেছে। অভ্যুত্থান ঘটে গেছে, এ জন্যই আমরা বলেছি নতুন সাংবিধানিক আদেশ জারি করার জন্য। এ ছাড়াও কেউ কেউ বলছেন সংসদে এসে করবেন, রেফারেন্ডামের মাধ্যমে, প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে অধ্যাদেশ জারি আবার কেউ কেউ বলেছেন ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চাওয়ার মাধ্যমে করবেন। আমরা যেটা আলোচনা করবো বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করে আগামীতে সংবিধানের উপরে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশকে প্রাধান্য দিয়ে,  ৫ই আগস্ট থেকে কার্যকর দেখানো। তবেই সেটা যেসব ভ্যাকুয়াম দেখা যাচ্ছে, এই ভ্যাকুয়ামগুলো ফুলফিল করে সম্মুখপানে অগ্রসর হওয়া সম্ভব। 

এ সময় জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, গণভোটকে আমরা বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে রেখেছি। যদি এটা না হয় তাহলে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে হবে, সেজন্য গণভোটকে সাপোর্ট করি।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ৩১শে জুলাই পরবর্তী অনেক দিন পর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজকের বৈঠকে মূলত আলোচনা হয়েছে জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়িত ও কার্যকর করা যাবে। জুলাই সনদ ও অঙ্গীকারনামা কমিশন পবরবর্তীতে উত্থাপন করবেন। কমিশন এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো কপি উত্থাপন করেন নাই। সকাল থেকে সম্ভাব্য পথগুলো কী কী হতে পারে,  সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 

তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে তারা উত্থাপন করেছেন সংবিধান সম্পর্কিত বিষয়গুলো অধ্যাদেশ জারি করে এগুলোকে কার্যকর করা, বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন এটাকে সাংবিধানিক অধ্যাদেশ আকারে কার্যকরী করা যায় কিনা, নির্বাহী আদেশ, গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ ও সংবিধানের  ১০৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে উচ্চ আদালতের মতামত চাওয়ার বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এখনো এ বিষয়গুলোতে আমরা ঐকমত্যের জায়গায় আসতে পারিনি। 

তিনি বলেন, গণভোটের সুযোগ নেই। গণভোটের সুযোগ নেই এ কারণে যে অনেকগুলো বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। এত বড় নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে গণভোটের প্রশ্নে যাওয়ার সুযোগ নেই। শত আলোচনা সমালোচনা থাকার পরও বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে সরকার শপথ নিয়েছেন প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উচ্চ আদালতের মতামত নিয়ে। যেহেতু সংবিধান আছে, সংবিধান সভার নির্বাচনের আলোচনা জোরালো আলোচনার মধ্যে নেই।  সংবিধান সভার নির্বাচন হয় দেশে সংবিধান না থাকলে। সংবিধানের সংশোধন,  সংযোজন ও গণতান্ত্রিক রূপ দিতে পারেন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। যেখানে জনগণের ম্যান্ডেট লাগবে। প্রেসিডেন্টের অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটি হলে এটি খুব বাজে উদাহরণ হিসেবে থাকবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন শুরুর দিকে যেমন গতি ছিল। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনায় তেমন গতি নেই। ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সকল দলের আলোচনায় একটি ঐকমত্য এসেছে, জুলাই সনদের যে বিষয়গুলো সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়; সেগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে। ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার এসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত ২০টি বিষয়ের মধ্যে ১৯টি বিষয়ে এখনো বিতর্কের অবসান হয়নি। এ বিষয়ে এখনো মতৈক্য তৈরি হয়নি। গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে জাতিকে একটি নতুন সংবিধান উপহার দেয়া। আমরা যেসব বিষয়ে জুলাই সনদে ঐকমত্য হয়েছি সবাই হয়েছি। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে এর মাধ্যমে আগামীতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। 

বৈঠকে কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী,  জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।