
নেপালে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে কাঠমান্ডুর একটি পাঁচতারকা হোটেলে এক বাংলাদেশি পরিবারকে মারধর করেছেন বিক্ষোভকারীরা। একই সঙ্গে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকারসহ আনুমানিক ৮ লাখ টাকার সম্পদ লুট করে নেন তারা।আরেক ঘটনায় বিমানবন্দরের পথে থাকা এক বাংলাদেশি নারী পর্যটককে বহনকারী বাসে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। এতে তার পাসপোর্ট ও অন্যান্য জিনিসপত্র পুড়ে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে কাঠমান্ডুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস দ্রুত জরুরি পদক্ষেপ নেয় এবং ৩০ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে।এরপর বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ বিমানবাহিনী উদ্ধার অভিযানে নেমে জাতীয় ফুটবল দল, কর্মকর্তাসহ ক্রীড়া সাংবাদিকদের অন্তর্ভুক্ত মোট ৫৫ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনে।
হোটেলে হামলা: বাংলাদেশি পরিবারকে মারধর, ডলার-গয়না লুট
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) আবু ইউসুফ ও তার পরিবারের তিন সদস্যের ওপর হোটেলকক্ষে বিক্ষোভকারীরা হামলা চালান। বিক্ষোভকারীরা তাদের মারধর করেন এবং প্রায় ৮ লাখ টাকার সমমূল্যের মার্কিন ডলার ও স্বর্ণালংকার লুটে নেন।
- হোটেল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসা ও বিকল্প আবাসনের প্রস্তাব দিলেও আতঙ্কিত পরিবার সেখানে থাকতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তাদের কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে সরিয়ে নেওয়া হয়, যেখানে তারা চিকিৎসা ও নিরাপত্তা পান।
নারী পর্যটকের বাসে আগুন, পাসপোর্ট নষ্ট
অন্য এক ঘটনায় ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রারত এক বাংলাদেশি নারী পর্যটকের বাসে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। এতে তার পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র পুড়ে যায়। তিনি এবং অন্য যাত্রীরা নিকটবর্তী একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং সেখান থেকে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে দ্রুত উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বিভ্রান্তিতে কূটনৈতিক গাড়ি আক্রান্ত
জাতীয় ফুটবল দলের সহায়তায় যাওয়ার পথে রাষ্ট্রদূতের সরকারি গাড়িও বিক্ষোভকারীদের মাঝে পড়ে যায়। কেউ কেউ গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা দেখে ‘বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশ’ স্লোগান দেন এবং কূটনৈতিক কর্মকর্তাকে শুভেচ্ছা জানান। তবে অন্যরা কূটনৈতিক মর্যাদা চিনতে না পেরে গাড়ির সাইড মিরর ভেঙে ফেলেন। পরে বিক্ষোভকারীদের একাংশ তাদের থামান। গাড়িটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে পরদিন দূতাবাসে ফেরত আনা হয়।
দূতাবাস উদ্ধার করলো ৩০ বাংলাদেশিকে
কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৩০ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়েছে—এর মধ্যে ১০ জন বিমানবন্দর থেকে এবং ২০ জন কাঠমান্ডুর বিভিন্ন স্থান থেকে। সবাই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যাত্রী ছিলেন এবং বর্তমানে দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে এয়ারলাইন্সের নির্ধারিত নিরাপদ হোটেলে অবস্থান করছেন।
বিমানবাহিনীর জরুরি সহায়তা
নিরাপত্তা পরিস্থিতি অবনতির কারণে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বিএফএফ) সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে জাতীয় দল ও সাংবাদিকদের ফিরিয়ে আনার অনুরোধ জানায়।প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটি থেকে একটি পরিবহন বিমান পাঠায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। একই দিন বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে বিমানটি ৫৫ জনকে নিয়ে দেশে ফেরে। তাদের মধ্যে ছিলেন ৩৮ জন ফুটবলার, কোচ, দলের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি; ১৬ জন ক্রীড়া সাংবাদিক এবং একজন ছাত্র সমন্বয়কারী।
অবতরণের পর সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের অপারেশনস ও পরিকল্পনা পরিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আলিমুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সর্বদা দেশ ও দেশের বাইরে নাগরিকদের সুরক্ষায় প্রস্তুত। এই অভিযান নির্ভুল ও জরুরি ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়েছে, এর মাধ্যমে নেপালের অবনতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের ক্রীড়াবিদ ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেছে।সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিমানবাহিনী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বিমানবন্দরে দলকে অভ্যর্থনা জানান।
সর্বোচ্চ সতর্কতায় দূতাবাস
কাঠমান্ডুর বাংলাদেশ দূতাবাস নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং নেপালে অবস্থানরত সব বাংলাদেশিকে সর্বদা কনস্যুলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার আহ্বান জানিয়েছে।