সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকার হঠাৎ করেই পাকিস্তানের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে ভাটা পড়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য। বাংলাদেশ থেকে পাট ও অন্য টেক্সটাইল ফেব্রিকস, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, পেপার ও পেপারবোর্ড লেবেল, ছেলেদের শার্ট, মেডিকেল সার্জিক্যাল ও ডেন্টাল ইক্যুইপমেন্টসহ আরও কয়েকটি পণ্য রপ্তানি করে। আবার পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে জাহাজে পণ্য পরিবহনে সরাসরি কোনো সার্ভিস শিপিং কোম্পানির নেই। বেশিরভাগ পণ্য কনটেইনারে ভর্তি হয়ে করাচি বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর বন্দরে যায়। সেখান থেকে আরেকটি জাহাজ করে চট্টগ্রাম পৌঁছায়। এতে ট্রানজিট টাইম ছাড়া অন্তত ১২ দিন সময় লাগে। আর আকাশপথে পণ্য আমদানি করা হয় দুবাই, শারজাহ বা কাতার হয়ে। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের আমদানি পণ্যের তালিকায় কাপড়, বিভিন্ন রাসায়নিক, খনিজ ও ধাতব উপাদান এবং বৈদ্যুতিক সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি আমদানি করছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে রপ্তানি হয় ৬ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের পণ্য। আর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ৬৫ কোটি ৫ লাখ ডলারের পণ্য। তবে ভারতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আগের সব রেকর্ড ভেঙে ২১৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তান থেকে ২০২৩ সালে পণ্য আমদানি হয়েছে ৬৯০ মিলিয়ন ডলারের। ২০২২ সালে এর পরিমাণ ছিল ৮৩৯ মিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে ছিল ৮১৩ মিলিয়ন ডলার। গত ১৭ বছরের মধ্যে পাকিস্তান থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হয় ২০২২ সালে। লবণ, সালফার, পাথর, সিমেন্ট ও সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি করা হয় ৫৪ মিলিয়ন ডলারের। তেলবীজ, ফল, বিভিন্ন খাদ্যশস্য আমদানি করা হয় ৩৮ মিলিয়ন ডলারের। বাকি পণ্য আমদানি হয়েছে খুবই অল্প পরিমাণ।
২০২৪ সালের এপ্রিলের রপ্তানির হিসাবে দেখা যাচ্ছে ২০০ একক কনটেইনার রপ্তানি পণ্য পাকিস্তান গেছে। তার মধ্যে ১৪০ একক কনটেইনার ছিল পাট, পাটজাত পণ্য। ১০ একক কনটেইনার ছিল চা পাতা। এ ছাড়া ছিল টুপি, মেডিসিন ও বাঁশ। আগে প্রচুর বাঁশ ও চা যেত পাকিস্তানে। এখন এসব পণ্য অনেক কম যাচ্ছে।বেবিচকের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ফ্লাইট চলাচল শুরু হচ্ছে। তার আগেও শুরু হতে পারে। প্রথমে ঢাকা-করাচি রুটের ফ্লাইট কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। তারপর ইসলামাবাদে চলবে ফ্লাইট। পিআইএ ও জিন্নাহ এয়ারলাইনস ফ্লাইট চালাবে। তিনি আরও বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও ইউএস বাংলা করাচি ও ইসলামাবাদে ফ্লাইট চালাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যে আমরা মন্ত্রণালয় থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছি। পাকিস্তানের সঙ্গে আকাশপথে যাত্রীবাহী বা পণ্যবাহী সরাসরি সার্ভিস নেই বাংলাদেশের। ফ্লাইট চলাচল শুরু হলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।
বেবিচক সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তান থেকে সব পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছিল। দেশটির পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার পর শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষে অনুমোদন পেলেই শুধু ছাড় দেওয়া হতো পণ্য। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভিন্নদিকে চলে যায়। কোনো দেশের সঙ্গে শত্রুতা তৈরি না করে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে তৎপর অন্তর্বর্তী সরকার। সেই আলোকে পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ নিয়ে পাকিস্তানের হাইকমিশনার অন্তর্র্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে দেশটি থেকে পণ্য আমদানি সহজের দাবিও জানিয়েছিলেন। বৈঠকের পর পাকিস্তান ভ্রমণে ভিসা সহজের ঘোষণা আসে। একই সঙ্গে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ফি বাদ দিয়ে এবং সরাসরি ফ্লাইট চালু করার আগ্রহ দেখায় পাকিস্তান সরকার।ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত সৈয়দ আহমেদ মারুফ সম্প্রতি বাংলাদেশে সফররত পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। রাষ্ট্রদূত বলেছেন, পাকিস্তান-বাংলাদেশ সরাসরি আকাশপথে যোগাযোগে দুই দেশের সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। যেকোনো সময়ই সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে আবারও সরাসরি ফ্লাইট চালু করতে চায় ইসলামাবাদ। এই বাবদে দেশটি বাংলাদেশকে অনুরোধও করেছে। পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস (পিআইএ) আগে ঢাকা ও করাচির মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালাত। পিআইএ কর্মী ও যাত্রীদের হয়রানির অভিযোগ তুলে এয়ারলাইনসটি ২০১৫ সালে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়।