Image description

সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না। হারানো টাকা-পয়সা বা সম্পদ কোনোভাবে ফিরে পাওয়া সম্ভব হলেও একবার চলে যাওয়া সময় আর কখনোই ফিরে আসে না। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে বিশ্ব, পাল্টে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা। এক্ষেত্রে নব্বইয়ের দশকের মানুষ যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, তা আজকের কিংবা আগামী প্রজন্ম কেবল গল্পেই শুনবে।


কুয়া: পানির প্রাচীন উৎস

গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই একসময় কুয়া ছিল। মাটি খুঁড়ে, ইট-সিমেন্টের স্ল্যাব বসিয়ে তৈরি হতো কুয়া। সেখান থেকেই পানির চাহিদা মেটাতো পরিবারগুলো। এখন আর কুয়া চোখে পড়ে না। এর জায়গা নিয়েছে টিউবওয়েল ও বৈদ্যুতিক মোটর।


গরু ও লাঙল দিয়ে হালচাষ

ফজরের আজানের আগেই কৃষকরা গরু, লাঙল ও জোয়াল নিয়ে মাঠে যেতেন। গৃহিণীরা রান্না করে খাবার পৌঁছে দিতেন খেতে। গরুর জোয়ালে ভর করে দিনভর চলত হালচাষ। আজ সেই দৃশ্য আর দেখা যায় না; এর জায়গা দখল করেছে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার।


হুঁকা: কৃষকের অবসর সঙ্গী

নারিকেলের খোল ও বাঁশ-কাঠ দিয়ে বানানো হতো হুঁকা। ধূমপানের নেশা চেপে ধরলে কৃষক খেত থেকে হাঁক দিতেন, আর স্ত্রী হুঁকা সাজিয়ে নিয়ে আসতেন। খেতের আইলে বসে ধোঁয়া টানতেন কৃষক। এক সময় গ্রামীণ জীবনের অংশ হলেও এখন হুঁকা কেবলই স্মৃতির পাতায়।


সাদাকালো টেলিভিশন: পারিবারিক বিনোদনের নাম

রঙিন টিভি আসার আগে সাদাকালো টিভিই ছিল বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু। শুক্রবার বিকাল ৩টার বাংলা সিনেমার জন্য দুপুরেই সবাই কাজ শেষ করে বসে যেতেন টিভির সামনে। ব্যাটারি চার্জ করে টিভি চালানো হতো। আজকের মতো একা একা নয়, পরিবারের সবাই মিলে দেখাই ছিল আসল আনন্দ।

ফেলে দেওয়া বেয়ারিং, কাঠ ও বাঁশ দিয়ে বানানো হতো গাড়ি। একজন গাড়িতে বসত, আরেকজন পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে চালাত। গ্রামের পথে ছুটে বেড়ানো এসব গাড়িই ছিল শিশুদের প্রিয় খেলা। আজকের প্রজন্ম এসবের নামও জানে না; তারা ব্যস্ত মোবাইল গেমসে।


হারিয়ে যাওয়া মাঠের খেলা
বৌ-ছি, গোল্লাছুট, কানামাছি—এসব খেলায় বিকালবেলা মুখর থাকত গ্রাম-গঞ্জ। দল বেঁধে ছুটোছুটি, দৌড়ঝাঁপ আর হাসি-আনন্দে ভরে থাকত শিশুদের সময়। আজ সেই খেলার মাঠ নেই, শিশুরাও ব্যস্ত মোবাইল আর ইন্টারনেটে।


নব্বইয়ের দশক শুধু একটি সময় নয়, ছিল ভিন্ন রকম জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি। প্রযুক্তি ও সভ্যতার বিকাশে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি অনেক মূল্যবান স্মৃতি। প্রজন্ম বদলাচ্ছে, কিন্তু সেই দিনের আনন্দ-খেলাধুলা আর পারিবারিক একতার মুহূর্তগুলো আজও থেকে গেছে নস্টালজিয়ার মতো অমলিন।