
জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহিদ রংপুরের আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে সুরতহাল প্রতিবেদনে এমন তথ্য না দিতে হুশিয়ারি দিয়েছিলেন তৎকালীন সহকারি পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনালে এমন সাক্ষ্য দেন এস আই তরিকুল ইসলাম।
এসময় তিনি বলেন ১৬ জুলাই বিকেলে তিনি তাজহাট থানায় ডিউটিরত ছিলেন। এমন অবস্থায় তাকে ওয়ারল্যাস বার্তায় জানানো হয় রংপুর মেডিকেলে থাকা একটি মরদেহ দেখে আসতে। প্রথমে আন্দোলনের মধ্যে তিনি গেলেও দেখতে পারেননি। পরবর্তীতে উধ্বর্তন কর্মকর্তারা তাকে ফের যেতে বলেন। রংপুর মেডিকেলে গিয়ে তিনি দেখতে পান আবু সাঈদের মরদেহ পরে রয়েছে। যেখানে অসংখ্য গুলি তার শরীরে। মাথার পেছনে থেতলানো। এসময় সহকারি কমিশনার আরিফুজ্জামান তাকে সরাসরি বলেন সুরতহাল রিপোর্টে গুলিতে মারা গেছে এটা বলা যাবেনা। এসআই তরিকুল এটা শুনতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে বলা হয় "ব্যাটা তুই কথা শুনবি না, তুই জামাত, শিবির করিস" এভাবে হুমকি দিয়ে তিনি চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দেন। এর আগে সকালে এ মামলার চতুর্থ দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছিল ২৮ আগস্ট। ওই দিন শহিদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন জবানবন্দি দেন। একই সঙ্গে রংপুরে কর্মরত এনটিভির সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট একেএম মঈনুল হকও জবানবন্দি দেন, যদিও তার জেরার কাজ এখনো শেষ হয়নি। সোমবার ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ শুরুতেই সাংবাদিক মঈনুলকে জেরার বিষয়টি আসামিপক্ষের আইনজীবীরা পেনেলে উপস্থাপন করবেন।
মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার ২৭ আগস্ট সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ৬ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল ৩০ আসামির বিরুদ্ধে ফর্মাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
মামলায় বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ জন আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন। তাদের পক্ষে ২২ জুলাই সরকারি ব্যয়ায় চারজন আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়।
৩০ জুলাই পলাতক আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত চারজন আইনজীবী। এর মধ্যে পাঁচজনের হয়ে লড়েন আইনজীবী সুজাত মিয়া। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মামুনুর রশীদ। এছাড়া শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত জাহান ও শহিদুল ইসলাম। ২৯ জুলাই তিনজন আসামির পক্ষে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শরিফুলের পক্ষে লড়েন আইনজীবী আমিনুল গণি টিটো, কনস্টেবল সুজনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু এবং ইমরানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সালাহউদ্দিন রিগ্যান।
২৮ জুলাই প্রসিকিউশন প্যানেল ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ করে। ট্রাইব্যুনাল ৩০ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করেন। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ২৪ জুন জমা দেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। এ মামলায় মোট ৬২ জন সাক্ষীর বিবৃতি নেয়া হবে।