Image description

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হতাহত ও কবর থেকে লাশ তুলে পোড়ানোর ঘটনায় এলাকায় এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। জনমনে বিরাজ করেছে গ্রেফতার আতঙ্ক।

গ্রেফতার আতঙ্কে উপজেলার অধিকাংশ মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা গা-ঢাকা দিয়েছেন। এমনকি বাজারের অনেক দোকানদার তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন।

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এর মধ্যে রাজবাড়ীর আদালতে দুই জন পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের সঙ্গে তার জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থল নুরাল পাগলের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ও তার দরবার পরিদর্শনে আসেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি নিরপরাধ সাধারণ জনগণকে অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আশ্বস্ত করেছেন।

 

জানা গেছে, শুক্রবার বাদ জুমা গোয়ালন্দ শহরের ফকির মহিউদ্দিন আনছার ক্লাব ময়দানে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি। নুরাল পাগলের উঁচু কবর ভেঙে নিচু করা ও তার দরবারে ইসলামবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে অভিযোগ তুলে তা বন্ধের দাবিতে এ সমাবেশ ডাকা হয়।

সমাবেশ সফল করতে উপজেলার প্রতিটি মসজিদের ইমামরাও ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। তারা মুসল্লিদের উদ্বুদ্ধ করে সমাবেশে সঙ্গে করে নিয়ে যান। পরে একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় ওই রাতে থানার এসআই সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার যেসব মসজিদের ইমামদের বাড়ি গোয়ালন্দের বাইরে শুক্রবারের ঘটনার পর তারা মসজিদ ছেড়ে নিজ নিজ বাড়ি অথবা অন্যত্র চলে গেছেন। স্থানীয় ইমামদের মধ্যেও অধিকাংশ মসজিদ ও বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছেন। ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির নেতারাও গ্রেফতার আতঙ্কে সতর্কভাবে চলাফেরা করছেন।

দৌলতদিয়ার একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন আজিম খাঁ জানান, এখানকার ইমাম হাফেজ মনিরুজ্জামান শুক্রবারের ঘটনার পর মাগুরায় তার গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। এখন আমি থেকে নামাজ পড়াচ্ছি।

একইভাবে ইদ্রিসিয়া ইসলামিয়া জামে মসজিদের ইমাম মুফতি আব্দুল লতিফ শুক্রবারের পর তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে চলে গেছেন।

মাদ্রাসার সহকারী সুপার সাইদুর রহমান জানান, তিনি জোহরের নামাজে ইমামতি করেন। অন্য ওয়াক্তে উপস্থিত একজনকে ইমাম নির্বাচিত করে নামাজ আদায় করা হচ্ছে।

গোয়ালন্দ বাজার বড় মসজিদের ইমাম ও ইমান আকিদা রক্ষা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ আবু সাইদ বলেন, আমার এক আত্মীয় অসুস্থ তাকে দেখতে আসছি। শুক্রবার কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক প্রশাসনের গাড়ি ভেঙেছে।

হাফেজ আবু সাইদ অভিযোগ করে বলেন, নুরাল পাগলের বাড়িতে এবং তার লাশের সঙ্গে যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা পবিত্র ধর্ম ইসলাম সমর্থন করে না। আমি এর তীব্র নিন্দা ও দায়ীদের শাস্তি দাবি করছি।

এদিকে গোয়ালন্দ বাজারের বেশ কিছু ব্যবসায়ীর দোকান শুক্রবারের পর হতে বন্ধ থাকতে দেখা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, শুক্রবারের ন্যক্কারজনক ঘটনার পর গ্রেফতার আতঙ্কে আছি। কোনও ধরনের অন্যায় করিনি। তারপরও ভয় হয় কখন জানি কী হয়ে যায়।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি রাকিবুল ইসলাম জানান, পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অযথা কাউকে গ্রেফতার করা হবে না।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদুর রহমান বলেন, মামলায় যারা জড়িত আছে, তাদের কে ফুটেজ দেখে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে"।

তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কঠোর ঘোষণা দিয়েছেন যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় নেওয়া হবে।