
প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ প্রকল্পের মাধ্যমে খনন করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার নৌ-চ্যানেল। ২০২৩ সালে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলেও তা থেকে জাতীয় গ্রিডে প্রত্যাশিত বিদ্যুৎ যোগ হচ্ছে না। অন্যদিকে নৌ-চ্যানেল রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি বছর মোটা অংকের অর্থ খরচ হচ্ছে। এমন বাস্তবতা সামনে রেখে কক্সবাজারের মহেশখালী-মাতারবাড়ী এলাকা ঘিরে ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সময়ের মধ্যে মহেশখালীকে সিঙ্গাপুর-সাংহাইয়ের আদলে উন্নত ও আধুনিক বন্দরকেন্দ্রিক শহরে রূপান্তর করা হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলএনজি ও এলপিজি টার্মিনাল, অর্থনৈতিক অঞ্চলের সমন্বয়ে বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক হাব গড়ে উঠবে এবং দেশের জিডিপিতে ১৫০ বিলিয়ন ডলার যোগ করবে।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে বলছেন দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পায়রাকে ঘিরে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যর্থতার অভিজ্ঞতার কথা। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় পায়রা নদীর তীরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা পরিবহনে ব্যবহার করা হয় রাবনাবাদ চ্যানেল। আবার পায়রা বন্দরকেন্দ্রিক দেশী-বিদেশী কোম্পানিগুলোর যে কর্মপরিকল্পনা রয়েছে তাও রাবনাবাদ চ্যানেল ঘিরে। কিন্তু চ্যানেলে নাব্য সংকটের কারণে কয়লা বা অন্যান্য পণ্যবাহী বড় জাহাজ (মাদার ভেসেল) সবসময় জেটিতে নোঙর করতে পারে না। তাই এখানকার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে একটি অনিশ্চয়তা রয়েছে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে পায়রাকে ঘিরে লজিস্টিক হাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা সফল হয়নি, বরং বিপুল ব্যয়ের পর পুরো প্রকল্প দেশের অর্থনীতির জন্য বোঝা হিসেবেও উল্লেখ করেছেন অনেক অর্থনীতিবিদ।
এখন মহেশখালী-মাতারবাড়ী উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানাচ্ছেন অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, এ পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, কারা বাস্তবায়ন করবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। অতীতে এ ধরনের কাজে বাংলাদেশে দুর্নীতি-অনিয়মের নজির রয়েছে। মহেশখালী ও মাতারবাড়ী মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যেন এমন কিছু না ঘটে, সেদিকে সতর্ক নজর রাখারও পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
দেশের শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন না আনলে মাতারবাড়ীর মতো প্রকল্পের সুফল পাওয়া যাবে না বলে মনে করেন অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামছুল হক। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকারের বড় বড় পরিকল্পনা কেবল আশাবাদী চিন্তা বলে মনে করি। মাতারবাড়ীর আগে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা-মাওয়া দ্রুতগতির বিশেষ সড়ক এবং পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্পে এমন স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। এ রকম স্বপ্নের কথা যারা বলেন, তারা আমাদের দেশকে ঠিকমতো চেনেন না। শুধু বড় বড় বাড়ি বানালেই কোনো জায়গা সিঙ্গাপুরের মতো হয়ে যায় না। তেজগাঁওকেও একসময় সিঙ্গাপুরের মতো বানানোর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সিঙ্গাপুরের আসল বৈশিষ্ট্য আসলে কী? তা হলো সেখানকার কর্মঠ, চৌকস ও দুর্নীতিহীন শাসন ব্যবস্থা। আমাদের এখানে শাসন ব্যবস্থা ভালো না। তাহলে শুধু দালানকোঠা বানিয়ে কী লাভ হবে? এতে কোনো উন্নতিই টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী হবে না।’
পানিসম্পদ ও বন্দর বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত মনে করছেন, গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে মাতারবাড়ীর ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মাতারবাড়ী নিয়ে যে মহাপরিকল্পনা হচ্ছে, তার বাস্তবায়ন কীভাবে হবে তা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে বলে মনে করছেন তিনি। ড. আইনুন নিশাত বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অতীতে আমরা দেখেছি এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। এ প্রকল্পে যে এমন কিছু হবে না, তা কিন্তু আমরা নিশ্চিত নই।’
বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক। সমুদ্রপথে বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ এ বন্দর দিয়ে হয়। অবস্থানগত কারণে চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেল পলিপ্রবণ। নিয়মিত ড্রেজিং করলে বন্দর চ্যানেলে জোয়ারের সময় সর্বোচ্চ সাড়ে নয় মিটার গভীরতা পাওয়া যায়। ভাটার সময় গভীরতা নেমে আসে ছয়-সাত মিটারে। এ নাব্য সীমাবদ্ধতায় বন্দরে বড় জাহাজ ভিড়তে পারে না। চট্টগ্রাম বন্দরের এ সীমাবদ্ধতা দূর করতে মাতারবাড়ীতে গড়ে তোলা হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর।
চলতি বছর চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৭ লাখ টিইইউএস (বিশ ফুট একক ইউনিট) কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বিকল্প হিসেবে মাতারবাড়ীতে যে গভীর সমুদ্রবন্দরের কথা বলা হচ্ছে, তার সক্ষমতা চট্টগ্রামের চেয়েও কম। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ২০২৯ সালের মধ্যে আনুমানিক ৬ থেকে ১১ লাখ টিইইউএস এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আনুমানিক ২২ থেকে ২৬ লাখ টিইইউএস কনটেইনার কার্গো হ্যান্ডল করতে পারবে মাতারবাড়ী বন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক হাবের ভালো সংযোগ নেই বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, একমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর নির্ভর করে দেশের আমদানি-রফতানি। রেল ও নৌপথে কনটেইনার পরিবহন এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক হাবগুলোয় কনটেইনার ডিপো না থাকায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। বন্দরের সঙ্গে অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোর করিডোর উন্নয়ন করতে না পারলে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পায়রা বন্দরের মতো ব্যর্থ প্রকল্পে রূপ নেবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে সরকারি কোম্পানি কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)। এ কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক ও পোশাক শিল্প মালিকদের অন্যতম সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যত ভালো বন্দরই আমরা বানাই না কেন, তার সঙ্গে দেশের অর্থনীতির কেন্দ্রগুলোর সংযোগ না থাকলে সেটার সুফল পাওয়া যাবে না। এখন চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের সংযোগ খুব একটা ভালো নয়। মাতারবাড়ী মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি।’
অন্যদিকে মাতারবাড়ী প্রকল্পকে নগর উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে না দেখে প্রকল্পটির ভ্যালু দেখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও মাশরুর রিয়াজ। তিনি এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মাতারবাড়ীকে যে সিঙ্গাপুর বা সাংহাই বানানো হবে বলা হচ্ছে, এটা হয়তো আমাদের ফোকাসকে দুর্বল করতে পারে। এখানে যদি একটা সরবরাহ চেইন করিডোর, বন্দর, এনার্জি হাব করি, সেখানে তো কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। তবে এটাকে বড় নগর উন্নয়ন প্রজেক্ট হিসেবে দেখা উচিত হবে না। এখানে নগদ মূল্য সংযোজন (ভ্যালু অ্যাডেড) নেই। এটার ভ্যালু হচ্ছে অবকাঠামো, বন্দর, এনার্জি হাব। এগুলোকে নিয়ে একটি সাউথ এশিয়ান সরবরাহ চেইন করিডোর তৈরি করা যাবে। যেখানে এ চেইনকে সাপোর্ট করার জন্য ম্যানুফ্যাকচারিং, সেবা, লজিস্টিকসহ বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ আসবে বলে ধরে নিচ্ছি। এ বিষয়ে আমাদের ফোকাস করতে হবে। এভাবেই পৃথিবীর অনেক দেশে এ ধরনের অবকাঠামোভিত্তিক এলাকা গড়ে উঠেছে।’
দেশে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে এমন প্রক্ষেপণ ধরে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে অত্যাধুনিক আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। জাইকার অর্থায়নে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্মিত এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পূর্ণ সক্ষমতায় খুব বেশি সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারেনি। কখনো কয়লা সংকট, কখনো রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও বন্ধ রাখতে হয়েছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মিত মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র সাধারণ মানুষের কতটা উপকারে আসবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকদেরও কেউ কেউ এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বিলাসী প্রকল্প হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। ৭ সেপ্টেম্বর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের তথ্য অনুযায়ী, ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে মাত্র ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয়েছে। এ হিসেবে বর্তমানে দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি মাত্র ২১ শতাংশ প্লান্ট ফ্যাক্টরে চলেছে। যদিও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ৭০-৭৫ শতাংশ প্লান্ট ফ্যাক্টরে চলার কথা।
সিপিজিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদনে রয়েছে। তবে কেন্দ্রের একটি ইউনিট রক্ষণাবেক্ষণে থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে।’ মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালিয়ে কেন্দ্রটির ব্যয় উঠবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রটি চালিয়ে ব্যয় তো অবশ্যই তুলতে হবে। একটা ইউনিট রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছে। কাজ শেষ হলে পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে আসবে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে। তবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে পিপিএ চুক্তি না হওয়ার কারণে কোনো বিল পাওয়া যাচ্ছে না।’
বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের মাধ্যমে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য এরই মধ্যে ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌ-চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে। সাড়ে ১৮ মিটার গভীর ও ৩৫০ মিটার প্রশস্ত চ্যানেলটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। চ্যানেলটির গভীরতা ধরে রাখতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন হবে। জাইকার করা এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাতারবাড়ী বন্দর চ্যানেলে প্রতি বছর ৫০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন হবে। প্রতি ঘনমিটার ড্রেজিংয়ের সর্বনিম্ন ব্যয় ৫ ডলার। এ হিসাবে প্রতি বছর চ্যানেলটি ড্রেজিং করতে খরচ হবে আড়াই কোটি ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৩০৪ কোটি টাকা)।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ না পাওয়া, বন্দর চ্যানেলের ব্যয়বহুল রক্ষণাবেক্ষণ, বন্দরের সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোর ভালো সংযোগ না থাকাসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে নির্মাণাধীন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে। একই ধরনের সমস্যা দেখা গেছে পায়রা প্রকল্পেও। তবে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান থাকলেও মহেশখালী-মাতারবাড়ী নিয়ে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আশাবাদী সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এ প্রসঙ্গে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা এটাতে আশান্বিত হতে চাই। অতীতে রাজনৈতিক সরকার যেভাবে বিভিন্ন ধরনের কমিটমেন্ট দিয়েছিল, অনেক উৎসব-আয়োজন করেছিল কিন্তু ফলাফল হয়নি, ওই রকম যাতে না হয়। সামনে কী হবে এটা তো বলা যাচ্ছে না। কাজের অগ্রগতি কেমন হয় ওটা কিছুদিন দেখার পরই বোঝা যাবে যে আসলে ফলাফলটা কেমন হবে।’
মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (মিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে ৫ সেপ্টেম্বর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘মহেশখালীর পক্ষে একটা মডার্ন পোর্ট সিটি হওয়া সম্ভব। ভিয়েতনাম যদি হো চি মিন সিটিকে একদম বদলে ফেলতে পারে তাহলে আমরা পারব না কেন? স্বীকার করছি, খুব কঠিন কাজ। বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকারের সময়মতো প্রজেক্ট কমপ্লিট করার ট্র্যাক রেকর্ড নেই। আগামীতে সরকারের নেতৃত্বস্থানীয় লোকজনকে শক্ত হাতে ড্রাইভ করতে হবে। তাহলে অবশ্যই সম্ভব।’
অনেক বিশ্লেষক বলছেন, মিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মাতারবাড়ী প্রকল্প নিয়ে আশাবাদী হলেও নিকট অতীতে সমজাতীয় পায়রা প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়েছে। বিগত সরকারের পরিকল্পনা ছিল পায়রা বন্দরকে ঘিরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে একটি বড় লজিস্টিক হাব গড়ে তোলার। ২০২১ সালে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে গঠন করা হয় বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (বিআইডিএফ)। এ তহবিল থেকে প্রথম ঋণ পায় পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে নেয়া এ ঋণ ব্যয় হয় বন্দরের চ্যানেল ড্রেজিংয়ে। রাবনাবাদ বন্দর চ্যানেলটির রক্ষণাবেক্ষণ জটিলতা ও ব্যয়কে বোঝা হিসেবে দেখেন বিশেষজ্ঞরা। পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক ফলাফল ও বাড়তি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বিবেচনায় পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে বিগত সরকারকে সরে আসতে হয়।
একইভাবে বিগত আওয়ামী সরকারের সময়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়। যদিও পরে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না আসায় এ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর কোনো সুফল বাংলাদেশ পায়নি।