Image description

দেশ জুড়ে জ্বর, সর্দি-কাশির প্রকোপ মারাত্মক হারে বেড়েছে। ঘরে ঘরেই এখন জ্বরের রোগী। তীব্র জ্বরে শরীর কাবু করে ফেলায় অনেকে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ছুটছেন। প্রতিদিন সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কারও চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু ধরা পড়ছে অনেকের।

এদিকে, দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে অন্তত ৬০ শতাংশের মৃত্যুই ঢাকায়। বাকি ৪০ শতাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঢাকার বাইরে। চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত ঢাকায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত ১৩৭ জন মারা গেছেন ডেঙ্গুতে। এর মধ্যে ৮২ জন ঢাকায় এবং ৫৫ জন ঢাকার বাইরে। ঢাকায় মৃত্যুর মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬৯ জন রয়েছেন। উত্তর সিটিতে ১২ জন মারা গেছেন। মৃত্যুর তালিকায় বরিশাল বিভাগে ১৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২১ জন, ঢাকার অন্যান্য জেলায় ২ জন, খুলনায় ৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ জন এবং রাজশাহী বিভাগে মারা গেছেন ৬ জন ডেঙ্গু রোগী। ডেঙ্গুতে ঢাকায় এত বেশি মৃত্যুর কারণ জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ জাগাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

কীটতত্ত্ববিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ২০০০ সাল থেকে ঢাকার প্রায় অর্ধেক মানুষ কোনো না কোনোভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে চান্স অব ইনফেকশন ঢাকায় কমে গেছে। ফলে ঢাকার বাইরে রোগী বাড়ছে। আমাদের ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে অধিক নজর দিতে হবে। এ সময় আমাদের সারা বাংলাদেশকেই টার্গেট করে স্থানীয় সরকারের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে হবে। এই কাজটির মূল দায়িত্ব জেলা প্রশাসনকে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, সারা দেশে মশা নিয়ন্ত্রণের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মৌসুমের শুরুতেই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সেটি বাস্তবায়নে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করা প্রয়োজন। সঙ্গে সঙ্গে মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক কীটনাশক বাছাই করে তা সরবরাহ করা গুরুত্বপূর্ণ। কোন কীটনাশক কোন ধরনের যন্ত্রের মাধ্যমে সঠিক মাত্রায় সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় প্রয়োগ করতে হবে, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া দরকার। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জনসাধারণকেও সতর্ক অবস্থায় থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে জোরদার কোনো পদক্ষেপ নেই। সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকারে কোনো জনপ্রতিনিধিরা নেই। আগে যখন ছিলেন, তখন যে খুব ভালো অবস্থা ছিল, তা বলা যাবে না। কিন্তু একটা ন্যূনতম জবাবদিহি ছিল। এখন যারা আছেন, তারা রুটিন কাজ করেন।

এদিকে, চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৭ জনে। চলতি বছরে শনাক্ত রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৪ জনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু বিষয়ক তথ্য জানানো হয়, আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে রয়েছেন ১০ হাজার ৮৫৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ হাজার ৩১৮ জন, ঢাকার অন্যান্য জেলায় ৪ হাজার ৮৫২ জন,  রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩ হাজার ৪৩৭ জন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৫ হাজার ১৬৩ জন, খুলনা বিভাগে ১ হাজার ৮৫৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৭১ জন, রাজশাহী বিভাগে ২ হাজার ৫১২ জন, রংপুর বিভাগে ২১৯ জন ও সিলেট বিভাগে ৯৭ জন ডেঙ্গু রোগী রয়েছেন।