Image description

মাওলানা মামুনুল হক। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ও হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব। এ সময় দেশের প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় আলেমদের অন্যতম তিনি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি, জুলাই সনদ, বাহাত্তরের সংবিধান, ইসলামি রাজনীতির ভবিষ্যৎ,  জোট ও ভোটের হিসাব-নিকাশ, ’১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আওয়ামী লীগের চালানো নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার, শাপলা চত্বরে শহীদ হওয়া আলেম ও মাদ্রাসাছাত্রদের খোঁজখবরসহ সমসাময়িক নানা বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন দৈনিক যুগান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তোফায়েল গাজালি

যুগান্তর: ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে আওয়ামী লীগের চালানো নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দিয়ে আলোচনা শুরু করতে চাই। আপনি প্রায় বক্তব্যেই বলেন, ‘প্রয়োজনে আবার শাপলা চত্বরে যাব।’ শাপলা থেকে আপনারা পালিয়ে এসেছিলেন। সেখানে আবার যেতে চান কেন?

মামুনুল হক: শাপলা চত্বর থেকে পালিয়ে আসা কথাটার সঙ্গে আমি কোনোভাবেই একমত নই। সেদিন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী গুলি, টিয়ারশেল দিয়ে নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা চালায়। গুলির মুখে সেখানে অবস্থান করাটা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। আর এর কোনো নজিরও ইতিহাসে নেই। সেদিন বহু মানুষ প্রাণ দিয়েছে, কেউ আহত হয়েছে, কারও চোখ নষ্ট হয়েছে, কারও অঙ্গহানি হয়েছে। তবে এ হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের অস্তিত্বে এমন কলঙ্কের দাগ লেগেছে যা শত-সহস্র বছরেও মুছবে না। বরং এ শাপলা চত্বরই বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লবের বুনিয়াদ গড়ে দিয়েছে। ২০১৩ সালের আন্দোলনই ২০২৪ সালের জুলাইয়ের বিপ্লবকে সফল করেছে। তাই শাপলা আমাদের চেতনার বাতিঘর। যেমনিভাবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বালাকোটের রণাঙ্গনে বাহ্যিকভাবে মনে হয়েছিল যে, বীর যোদ্ধারা পরাস্ত হয়েছেন। কিন্তু আসলে সেই আত্মদান এবং শাহাদতের মাধ্যমে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ভিত শক্ত হয় এবং এক সময় ব্রিটিশরা এদেশ থেকে বিতাড়িত হতে বাধ্য হয়েছিল।

যুগান্তর: ২০১৩ সালের সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডকে কি তাহলে নতুন এক বালাকোট বলা যায়?

মামুনুল হক: ঠিক তাই। ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে আমাদের জন্য নতুন এক ‘বালাকোট’ তৈরি করেছে। শাপলা আজ আমাদের চেতনার বাতিঘর। আমরা বিশ্বাস করি, অন্যায়-অবিচার, জুলুম-স্বৈরতন্ত্র কিংবা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এ শাপলার চেতনা আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে উজ্জীবিত রাখবে। এজন্যই আমরা বলি, শাপলা শুধু একটি দিন বা একটি ঘটনা নয়, এটি একটি প্রতীকী ইতিহাসে পরিণত হয়েছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করতে এটি সাহসের প্রতীক। তাই যখনই অন্যায় দেখি, তখনই আমরা শাপলার চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার কথা বলি।

যুগান্তর: ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নানা ইস্যুতে আপনাদেরকে রাজপথ উত্তপ্ত করতে দেখা যায়। আপনারা অধিকাংশ আন্দোলনে সফলও। শোনা যায়, ১৩ সালের শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আপনার ভূমিকা খুবই দুর্বল। এমনটা কেন?

মামুনুল হক: এ অভিযোগ সঠিক নয়। বরং আমি শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য আমার সাধ্যের সর্বোচ্চটা দিয়েছি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের থেকে শুরু করে পরবর্তী কার্যক্রমের সমন্বয়, সবখানেই আমার ভূমিকা ছিল। আবার ২০১৩ ও ২০২১ সালে হেফাজতের নেতাকর্মীদের নামে যে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহারে আমি বলিষ্ঠ ভ‚মিকা রেখেছি। আলহামদুলিল্লাহ, বেশিরভাগ মামলা ইতোমধ্যে প্রত্যাহার হয়েছে।

যুগান্তর: কয়েক মাস আগে আপনারা শাপলা শহীদদের মধ্যে ৯৩ জনের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করেছেন। এটি খসড়া তালিকা ছিল। চূড়ান্ত তালিকা কবে নাগাদ প্রকাশের আশা রাখেন?

মামুনুল হক: প্রকাশিত তালিকাটি হেফাজতে ইসলামের প্রণীত বা অনুমোদিত তালিকা নয়। এটি কোনো একজনের ব্যক্তিগত খসড়া- যা গণমাধ্যমে হেফাজতের নামে ভুলভাবে প্রচারিত হয়েছে। আমরা ২০১৩ সাল থেকেই শহীদদের তালিকা প্রণয়নে কাজ করে যাচ্ছি। এ পর্যায়ে এসে আমার মনে হয়- এর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। এর অন্যতম কারণ হলো- বহু শহীদের লাশ গুম করা হয়েছে যাদের পরিবার জানেই না যে, তাদের আপনজনের কী হয়েছে, কোথায় গিয়েছে। আবার এমনও অনেক আছেন, যাদের লাশ গুম হয়নি। কিন্তু ওই সময় নিরাপত্তার কারণে তাদের পরিবার পরিচয় গোপন করেছে। অনেক শহীদের পরিবার অসুখ-বিসুখ, দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে লাশ দাফন করেছে। আমরা যাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পেরেছি, তাদের তথ্য দিয়ে ‘শহীদনামা’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছি। আমাদের অনুসন্ধান এখনো চলমান।

যুগান্তর: তাহলে প্রকৃত শহীদের সংখ্যা বা চূড়ান্ত তালিকা কখনো প্রকাশ সম্ভব নয়?

মামুনুল হক: আমি জানি না, রাষ্ট্রীয় সংস্থার কাছে সেদিনের প্রকৃত তথ্য আছে কিনা। তাদের কাছে যদি প্রকৃত তথ্য থাকে, তবেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হতে পারে। হেফাজতের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব আমরা অনুসন্ধান চালাচ্ছি। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সত্য উদঘাটনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের কোনো বিকল্প দেখছি না।

যুগান্তর: রাষ্ট্রের কাছে আপনারা কি এ দাবি জানিয়েছেন?

মামুনুল হক: আমরা অব্যাহতভাবে এ দাবি জানিয়ে আসছি। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে যেন শাপলার শহীদদের পরিচয় ও ঠিকানা শনাক্ত করা হয় এবং তা সংরক্ষণ করা হয়। এটি শুধু আমাদের নয়, সমগ্র জাতির দায়িত্ব।

যুগান্তর : আপনাদের দাবি ছিল শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের বিচারে পৃথক কমিশন গঠনের। সেটি হলো না কেন? এ সরকার কি শাপলা হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার করবে বলে আপনি মনে করেন?

মামুনুল হক: শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের বিচারে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আন্তরিকতা দেখেছি। তবে অনেক আলামত তখনই নষ্ট করে ফেলা হয়। সরকারি পরিকল্পনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশ তা করেছে। এরপরও আমি মনে করি, শাপলার গণহত্যার অজস্র প্রমাণ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, দেশীয় গণমাধ্যম, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য, ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র-সব বিশ্লেষণ করে এ বিচার করা খুব সহজ হবে। তবে আমাদের দেশে আইনি প্রক্রিয়ার ধীরগতির বিষয়টি মেনে নিতেই হয়।

যুগান্তর: শাপলা শহীদদের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, ক্ষতিপূরণ এবং তাদের সন্তানদের শিক্ষা-নিরাপত্তার জন্য আপনাদের কোনো উদ্যোগ আছে কি?

মামুনুল হক: হ্যাঁ, দুটি উদ্যোগ রয়েছে। প্রথমত, হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জোরালোভাবে দাবি তুলেছি যেন মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতো শাপলা শহীদদের পরিবারও ক্ষতিপূরণ ও ভাতা পায়। প্রধান উপদেষ্টা আন্তরিকতা দেখিয়েছেন এবং উপদেষ্টামণ্ডলীকে উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগেও আমরা কাজ করছি। শাপলা স্মৃতি সংসদ নামে একটি সংস্থা গঠন করেছি। এর অধীনে ‘শাপলা শহীদ গার্ডিয়ানস ফোরাম’ গঠন হচ্ছে-যার মাধ্যমে শহীদ পরিবারকে ভাতা, শহীদ-সন্তানদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই প্রায় প্রতিটি শহীদ পরিবারের সঙ্গে আমাদের নিবিড় যোগাযোগ হয়েছে।

যুগান্তর: শাপলা স্মৃতি সংসদ কি হেফাজতের উদ্যোগ, নাকি আপনার ব্যক্তিগত?

মামুনুল হক: শাপলা স্মৃতি সংসদ একটি স্বতন্ত্র সংগঠন। এটি হেফাজতের সাংগঠনিক উদ্যোগ নয়। তবে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের সমর্থন ও সহযোগিতা রয়েছে।

যুগান্তর: হেফাজতের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর নামে এখনো কয়েক’শ মামলা রয়েছে। এ পর্যন্ত কতগুলো মামলা প্রত্যাহার হলো-এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান কি আপনার কাছে আছে? বাকি মামলাগুলো প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া কতদূর?

মামুনুল হক: সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০০টির বেশি মামলা প্রত্যাহারের চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং এর বেশিরভাগই ইতোমধ্যে প্রত্যাহার হয়েছে। তবে ৪৮টি মামলা এখনো ঝুলে আছে। কারণ এগুলো গুরুতর ধারায় করা হয়েছিল। আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেগুলো নিয়েও তারা কাজ করছে। আমাদের সাম্প্রতিক বৈঠকেও প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিষয়টি তুলেছি, তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে ধাপে ধাপে সেগুলোও প্রত্যাহার করা হবে।

যুগান্তর: ২০১৩ সালে বা তার আগে হেফাজতে ইসলামের তৎপরতায় আপনাকে তেমন সোচ্চার দেখা যায়নি। অথচ ২০২০ সালে এসে জনগণ আপনাকে হেফাজতের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসাবে দেখতে পায়। কীভাবে কী হলো, একটু খুলে বলবেন?

মামুনুল হক: ২০১৩ সালে আমি হেফাজতে ইসলামের কোনো শীর্ষ দায়িত্বে ছিলাম না। আমি তখন ঢাকা মহানগরের একটি জোনের সহ-সভাপতি ছিলাম এবং ৫ মে গাবতলী পয়েন্টে সহকারী দায়িত্বশীল হিসাবে কাজ করেছি। ২০২০-২১ সালে এসে আমাকে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সেক্রেটারি হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর আমার ভূমিকা তরুণ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করে। আবার সরকারও আমাকে প্রধান টার্গেটে পরিণত করে। এ কারণেই হয়তো অনেকে আমার অবস্থানটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে থাকতে পারেন। 

যুগান্তর: সাধারণ মানুষ আপনাকে খেলাফত মজলিসের আমির হিসাবে যতটা চেনে, তার চেয়ে বেশি চেনে হেফাজতের নেতা হিসাবে। কোন পরিচয় আপনাকে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য দেয়?

মামুনুল হক: স্বাভাবিকভাবেই হেফাজতের পরিচিতি খেলাফত মজলিসের চেয়ে বেশি। তবে আমি পরিচয় দুটির কোনোটিকেই সাংঘর্ষিক মনে করি না। খেলাফত মজলিস আমার রাজনৈতিক পরিচয়, আর হেফাজত একটি সর্বদলীয় জাতীয় প্ল্যাটফর্ম। দুটি পরিচয়ই নিজ নিজ জায়গায় সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

যুগান্তর: হেফাজতের ১৩ দফা নিয়ে আপনারা এখন আর আলাপ-আলোচনা করেন না। ১৩ দফা দাবি কি এখনো বহাল আছে? এ নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি কী?

মামুনুল হক: অবশ্যই। ১৩ দফা সর্বজনীন দাবি। তবে সময় ও পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কোনো কোনো বিষয় বেশি গুরুত্ব পায়। যেমন ২০১৩ সালে আল্লাহর রাসূলকে (সা.) অবমাননার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আইন প্রণয়ন ছিল প্রধান দাবি। সাম্প্রতিক সময়ে নারী অধিকার কমিশনের প্রস্তাবনাকে কেন্দ্র করে আমরা আবারও মাঠে নেমেছি। তাই বলা যায়, ১৩ দফা বহাল আছে এবং সময়োপযোগী ইস্যুতে আমরা জনগণকে উজ্জীবিত করতে থাকব।

যুগান্তর: শোনা যায়, হেফাজতের কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর, এমনকি হাটহাজারীসহ অনেক কমিটি বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের নকশায় ও তাদের নির্দেশনায় গঠন করা হয়েছিল। যদিও পরে তা পুনর্গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের আমলে সুবিধাভোগী অনেকেই এসব কমিটিতে থাকায় হেফাজত ধীরে ধীরে তার আবেদন হারিয়েছে-এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

মামুনুল হক: আমি মনে করি না যে, হেফাজতের মধ্যে সুবিধাভোগী নেতৃত্বের কোনো জায়গা আছে। বরং যারা বিগত সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করে হেফাজতকে নিষ্ক্রিয় রাখার চেষ্টা করেছিল, তারা ইতোমধ্যেই হেফাজত থেকে মাইনাস হয়ে গেছে। এখন সরকারের আজ্ঞাবাহী হয়ে হেফাজতকে ব্যবহার করার মতো কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি হেফাজতের মধ্যে নেই। কাজেই হেফাজতে ইসলাম তার আবেদন হারাচ্ছে-এটা আমি মনে করি না।

যুগান্তর: আপনারা বলে থাকেন, হেফাজত অরাজনৈতিক সংগঠন। কিন্তু প্রায়ই রাষ্ট্র ও রাজনীতি নিয়ে হেফাজতকে মাথা ঘামাতে দেখা যায়। এর কারণ কী?

মামুনুল হক: আমরা বরাবরই বলি হেফাজত অরাজনৈতিক সংগঠন। এটি সরাসরি রাজনীতি করে না। কিন্তু আবার এটাও বলে থাকি, এদেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন ইসলামবিরোধী ধারায় পরিচালিত হতে না পারে- হেফাজত সেই ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা রাখবে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ হেফাজতকে ব্যবহার করতে চাইলে, তা তার ব্যাপার। তবে হেফাজতকে রাজনৈতিক বিতর্কে না জড়াতে কেন্দ্রীয় কমিটি সতর্ক থাকে।

যুগান্তর: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেফাজতে ইসলাম কী ধরনের ভূমিকা রাখতে চায়?

মামুনুল হক: হেফাজত নির্বাচন করবে না। তবে আমরা সব রাজনৈতিক দলকে ইসলাম এবং দেশের প্রশ্নে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানাই। ইতোমধ্যে বিএনপি, এনসিপি ও অন্য ইসলামী সংগঠনের সঙ্গে সংলাপ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশকে ইসলামের পথে অগ্রসর করা।

যুগান্তর: গত বছরের ২৪ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আলেমদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আন্দোলনকারী প্রত্যেক মানুষই এ বৈঠককে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। সেখানে আপনিও উপস্থিত ছিলেন। ফলে আপনার ভক্ত-অনুরক্তসহ বিরাট সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে সেদিনের ভূমিকা নিয়ে এক প্রশ্ন থেকে গেছে। আপনি তাদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?

মামুনুল হক: ওই সময় সরকারের পক্ষ থেকে আমার ওপর প্রচণ্ডরকম চাপ ছিল। আমাকে চাপ প্রয়োগ করে মন্ত্রী আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে পুলিশ দিয়ে একরকম ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। উপস্থিত হওয়ার পর দেখতে পাই সেখানে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। ওই বৈঠকে আমাকে মন্ত্রীর পাশে বসার জন্য বলা হলে, আমি তা এড়িয়ে যাই। ওই বৈঠকেও আমি কোনো বক্তব্য রাখিনি। মিডিয়াতে কিছু বলাতে চাইলে সেটাও পরিহার করি। সে সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ এবং তাদেরকে স্টেটম্যান্ট দিতে বাধ্য করেছিল। আমার ঘটনাওটাও তেমনই ছিল।  কাজেই এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই।

যুগান্তর: কওমি সনদের স্বীকৃতির পর হেফাজতে ইসলাম শেখ হাসিনাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংবর্ধনা (শোকরানা মাহফিল) দিয়ে কওমি জননী উপাধি দিয়েছে। এ বিষয়ে আজও হেফাজতে ইসলাম আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি।  সেদিনের ঘটনার জন্য হেফাজত দুঃখ প্রকাশ করবে?

মামুনুল হক: শোকরানা মাহফিল নিয়ে হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন নেতৃত্বের মধ্যেও দ্বিধা-বিভক্তি ছিল। তৎকালীন মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, ঢাকা মহানগর সভাপতি ও নায়েবে আমির আল্লামা নুর হোসাইন কাসেমীসহ বহু শীর্ষ নেতা সেদিন উপস্থিত ছিলেন না। মাহফিলটি মূলত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) সংশ্লিষ্ট আয়োজন ছিল। তবে সরকার পরিকল্পিতভাবে সেখানে হেফাজতে ইসলামের নাম ব্যবহার করতে বাধ্য করেছে। আসলে বিষয়টি ছিল কওমি সনদের স্বীকৃতি নিয়ে- যা দীর্ঘদিন ধরে কওমি ছাত্রজনতার প্রাণের দাবি ছিল। সেই দাবির প্রেক্ষাপটে আলেম সমাজকে সরকারের সঙ্গে ন্যুনতম সমন্বয় করতে হয়েছে। এটা দুঃখ প্রকাশ করার মতো কোনো কিছু বলে আমি মনে করি না। তবে সেখানে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, বিশেষ করে হেফাজতের ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলে যে চরম মিথ্যাচার করা হয়েছিল, আমরা তখনই এর প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং আজও জানাচ্ছি। সত্যকে বিকৃত করার এ অপচেষ্টা হেফাজত কখনোই প্রশ্রয় দেয়নি, দেবে না। আর কওমি জননী উপাধি প্রসঙ্গে বলতে হয়-এটির দায় হেফাজতে ইসলামের নয়। যিনি এ উপাধি দিয়েছেন, তা ছিল তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। তিনি হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না; বরং তিনি আওয়ামী লীগ-সমর্থিত এবং ওই দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী একজন আলেম ছিলেন। সুতরাং তার ব্যক্তিগত মন্তব্যের দায় কখনোই হেফাজতে ইসলাম বা বাংলাদেশের আলেমসমাজ নেবে না।

যুগান্তর: আপনি ২০২১ সালের এপ্রিলে গ্রেফতার হয়েছিলেন। দীর্ঘ সময় জেলখানায় ছিলেন। এ গ্রেফতারির বহু কারণের কথা সেসময় শোনা গিয়েছিল। আসলে ওই কারাবাসের নেপথ্য কারণ কী ছিল বলে আপনি মনে করেন?

মামুনুল হক: সরকার তখন হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে হেফাজত শক্তিশালী হওয়ায় তারা আমাদের প্রধান টার্গেট করে। আমাকে মাঠের একজন দায়িত্বশীল এবং নেতাকর্মীদের উজ্জীবনকারী হিসাবে টার্গেট করা হয়েছিল। বিশেষত তারা এটা বুঝতে পারে যে, আমি আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ডানহাত। আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ইসলাম ও দেশবিরোধী বহু ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করা সহজ হয়ে যাবে। মূলত আমাকে দীর্ঘমেয়াদি কারাবাসে রাখার মাধ্যমে হেফাজতকে নিষ্ক্রিয় করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

যুগান্তর: মোদিবিরোধী আন্দোলনের প্রধান নেতা আপনি। সেদিন যারা শহীদ হয়েছিলেন, তাদের খোঁজ-খবর রাখেন?

মামুনুল হক : আলহামদুলিল্লাহ, আমরা শহীদ পরিবারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছি। তাদের সব সমস্যা ও প্রয়োজনের ক্ষেত্রে পাশে দাঁড়াই। এছাড়া আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও আমরা ভূমিকা রাখছি।

যুগান্তর: আপনার নামে মোট কতটি মামলা হয়েছিল এবং বর্তমানে এগুলোর অবস্থা কী?

মামুনুল হক: সর্বশেষ আমার বিরুদ্ধে ৪৭টি মামলা ছিল-সেগুলো থেকে আমি জামিনে মুক্তি পেয়েছি। বেশিরভাগ মামলা প্রত্যাহার হয়েছে এবং কিছু মামলায় খালাস পেয়েছি। বর্তমানে মাত্র কয়েকটি মামলা আইনজীবীর তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

যুগান্তর: আপনি বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের আমির। আপনার দলের নির্বাচনি প্রস্তুতি জানতে চাই। এককভাবে নির্বাচন করবেন নাকি জোটবদ্ধ। 

মামুনুল হক:  ৩০০ আসনেই আমাদের প্রার্থী প্রস্তুত। ২৬৮ আসনে ইতিমধ্যেই দলীয় প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে। অবশিষ্ট ৩২ আসনের প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। এককভাবে নির্বাচন করলে আমরা হয়তো অনেক আসনে জয়ী হব না। তবে সারা দেশে আমাদের ভোট ব্যাংক তৈরি হবে এবং তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনের বিস্তৃতি ঘটবে। আর জোটের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কিছু বলার সময় এসেছে বলে আমি মনে করি না। কারণ, ভোট কীভাবে হবে সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। এখানে একটি উচ্চকক্ষ গঠনের আলোচনা রয়েছে। উচ্চকক্ষ কীভাবে গঠিত হবে সেই প্রশ্নটিও রয়েছে। ঐকমত্য কমিশন থেকে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির পদ্ধতিতে নির্বাচনের ঘোষণা রয়েছে। আবার সেই পদ্ধতির ওপর সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে একটি অনিশ্চয়তা রয়েছে। সেই কারণে নির্বাচন একক না সম্মিলিতভাবে করা হবে-সে বিষয়টি এ মুহূর্তেই চূড়ান্ত কথা বলতে পারছি না। তবে বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিস ঐক্যপ্রয়াসী একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। আমরা সবসময় ঐক্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আশা করি ইসলামি দলগুলো একত্রিত হয়ে আগামী নির্বাচনে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করবে। অবশ্য বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজন হলে যেকোনো শক্তির সঙ্গে আমরা নির্বাচনি সমঝোতায় অংশ নেব।

যুগান্তর: শেষ পর্যন্ত কি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছবে বলে মনে করেন?

মামুনুল হক: হ্যাঁ, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে মৌলিক কোনো দ্বিমত নেই। দ্বিমতের জায়গাটা হলো নির্বাচনটা কোন ভিত্তিতে হবে? জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন করার দাবিটা এখন জোরালো হচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের প্রতি মানুষের আবেগ প্রবল। আমরা মনে করি, জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হলে অনিশ্চয়তার জায়গাটা দূর হবে।

যুগান্তর: আমরা জানি, আপনি বিভিন্ন ইসলামি দলের সঙ্গে কথা বলেছেন। চরমোনাই পীরের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন, জামায়াতে ইসলামী কার্যালয়েও গিয়েছেন। অন্যান্য ইসলামী দলের সঙ্গেও আপনার ভালো বোঝাপড়া রয়েছে। শেষ পর্যন্ত কি ইসলামী দলগুলো ভোটের লড়াই একসঙ্গে করবে?

মামুনুল হক: মাঠ পর্যায়ে মানুষের অভিপ্রায় হচ্ছে ইসলামি সংগঠনগুলো যেন একক প্রার্থী দেয়, অর্থাৎ একটি অভিন্ন বাক্সে ভোট যায়। এ বিষয়ে সব দলই সচেতন। তবে এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তের পরিবেশ তৈরি হয়নি। আবার কিছু সংগঠনের মধ্যে ভিন্ন চিন্তাভাবনাও রয়েছে। তাদের মতে, শুধু ইসলামি সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ হলেও সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত নাও হতে পারে। এজন্য বিদ্যমান নির্বাচনিব্যবস্থায় বৃহৎ কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সহযোগিতা প্রয়োজন হতে পারে বলে তারা মনে করেন।

যুগান্তর: তাহলে কি ইসলামি দলগুলোর ঐক্য নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেল?

মামুনুল হক: আমি মনে করি, ইসলামপন্থিদের একটি স্বতন্ত্র অবস্থান আগামী নির্বাচনে আসবেই। জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা চলমান আছে। জামায়াতের সঙ্গে ভোট নিয়ে কারও কারও ভিন্নমত থাকলেও শেষ পর্যন্ত ঐকমত্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনাই বেশি। অতীতেও কওমি ধারার প্রায় সব রাজনৈতিক সংগঠন বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচন করেছে। রাজনীতির স্বার্থে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে শক্তিশালী অবস্থান গড়তে হলে সবার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। তাই আমি মনে করি, শেষ পর্যন্ত তা ঘটতে পারে।

যুগান্তর: আলোচনা আছে জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দিয়ে অন্যান্য ইসলামি দল একটি পৃথক জোট গঠনের চেষ্টা করছে। আপনার দল কি সেই উদ্যোগে অংশ নেবে?

মামুনুল হক:  আমরা সবসময় ঐক্যের পক্ষে। সমমনা ইসলামি দলগুলোর ব্যানারে আমরা দীর্ঘদিন কাজ করেছি। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্য দলগুলোকে নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছি। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের যে কোনো ঐক্য প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

যুগান্তর: আগামী নির্বাচনে বিএনপি আপনাদের পাশে চাইতে পারে। এমন ক্ষেত্রে আপনাদের সিদ্ধান্ত কী হতে পারে?

মামুনুল হক: বিএনপির সঙ্গে অতীতে আমাদের নির্বাচনি জোট ও সমঝোতা হয়েছে। কাজেই এ ধরনের সম্ভাবনা এখনো রয়েছে। তবে আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় হলো-প্রথমত, জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হওয়া এবং দ্বিতীয়ত, উচ্চকক্ষে অন্তত সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির নিশ্চয়তা। এই দুটি ইস্যু আমাদের আগামী নির্বাচনের মেরুকরণ ও জোট নির্ধারণে মুখ্য ভ‚মিকা রাখবে।

যুগান্তর: বিদ্যমান পদ্ধতির চেয়ে পিআরকে আপনারা কেন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন?

মামুনুল হক: বিদ্যমান এফপিটিপি পদ্ধতিতে নির্বাচন দুর্বৃত্তায়ন, প্রভাববলয় ও অর্থশক্তির কারণে সাধারণ মানুষের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রায় অসম্ভব। প্রথমত, এ কারণে আমরা পিআরকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। দ্বিতীয়ত, উচ্চকক্ষ গঠনের ক্ষেত্রে যদি পিআর পদ্ধতি না থাকে, তাহলে তা অর্থহীন হয়ে পড়বে। বরং এটি রাষ্ট্রের জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু যদি উচ্চকক্ষ পিআর পদ্ধতিতে গঠিত হয়, তাহলে প্রকৃত ভোটের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে এবং প্রায় সব রাজনৈতিক দলের মুখ্য নেতৃত্ব অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। বর্তমানে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ভোট নিয়েই কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যায়, এমনকি সংবিধান সংশোধন করে ফেলে। অথচ ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ মানুষের ভোটের প্রতিফলন ঘটে না। এটি গণতন্ত্রের নামে চরম প্রহসন। তাই আমরা উচ্চকক্ষে পিআর চাই, আর নিম্নকক্ষে মিশ্র পদ্ধতির দাবি জানাচ্ছি।

যুগান্তর: অনেকে বলছেন, ছোট দলগুলো নিজেদের স্বার্থে পিআর চাইছে। ফলে বড় দলগুলো তা মানতে চাচ্ছে না। আপনি কীভাবে দেখছেন? 

মামুনুল হক: বড় দলগুলো যদি সত্যিই মানুষের ভোটাধিকারকে সম্মান করত, তাহলে তারা এতে আপত্তি করত না। কারণ, যদি তারা ৫০ শতাংশ বা তার বেশি জনসমর্থন পায়, তাহলে পিআর পদ্ধতিতে তো তাদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ছোট দলগুলো স্বাভাবিকভাবেই চায় রাজনীতিতে নিজেদের জায়গা তৈরি হোক। বর্তমান পেশিশক্তি, কালো টাকা ও নির্বাচনব্যবস্থার কারণে ছোট দলগুলোর জন্য নির্বাচিত হওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই আমরা ভারসাম্যপূর্ণ একটি প্রস্তাব দিয়েছি মিশ্র পিআর পদ্ধতি-যা সবার জন্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

যুগান্তর: বিএনপি বা অন্য কোনো জোটে আপনাদের থাকার বিষয়টি কি হিসাব-নিকাশের ওপর নির্ভর করবে, নাকি অন্য কিছু?

মামুনুল হক: শুধু হিসাব-নিকাশ নয়, আদর্শিক বিষয়টিই মুখ্য। ইসলাম এবং দেশের সার্বিক কল্যাণ এ দুটিকে আমরা অগ্রাধিকার দেব। আবারও বলছি, জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন এবং উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির নিশ্চয়তা এই দুটি দাবি আমাদের আগামী নির্বাচনে অবস্থান নির্ধারণ করবে।

যুগান্তর: জামায়াতের সঙ্গে জোটের আলোচনা আসলেই কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক ধর্মীয় সংগঠনগুলো বিশ্বাস ও আদর্শের জায়গা সামনে নিয়ে আসে। অথচ বিএনপির সঙ্গে জোটের আলোচনায় আপনাদেরকে আদর্শের প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় না কেন? 

মামুনুল হক: বিএনপি যেহেতু কোনো ইসলামি আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন নয়, কাজেই তাদের সঙ্গে জোট করলে আমাদের অনুসারীরা আদর্শিকভাবে বিভ্রান্ত হবেন বলে আমরা মনে করি না। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী একটি সুসংগঠিত ইসলামি রাজনৈতিক দল। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের সঙ্গে তাদের কিছু মতপার্থক্য আছে। তাই জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করলে আমাদের জনশক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে এবং এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এই জায়গাটাই দুই দলের সঙ্গে জোট আলোচনার মূল পার্থক্য।

যুগান্তর: আমরা বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে দেখেছি। দেখেছি জাতীয় পার্টির সঙ্গেও সমঝোতা করতে। ৪ দলীয় জোটের শরিক ইসলামি ঐক্যজোটেও ছিলেন আপনারা। সেই অভিজ্ঞতাগুলোকে আপনি কীভাবে দেখেন?

মামুনুল হক: আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের যে পাঁচ দফা আদর্শিক চুক্তি হয়েছিল, আমি মনে করি সেটি শুধু খেলাফত মজলিস নয়- বরং বাংলাদেশের ইসলামি রাজনীতির একটি বড় অর্জন। সেখানে ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন, কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং ফতোয়াকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহাসিকভাবে ইসলামবিদ্বেষী একটি সংগঠনও সেসব দাবি মেনে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল এটিই ছিল বড় সাফল্য। এজন্য বামপন্থি ও নাস্তিক্যবাদীরা প্রবলভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছিল। আমি এটিকে আমাদের রাজনীতির মাইলফলক মনে করি। অন্যদিকে চারদলীয় জোটও হয়েছিল দেশ, স্বাধীনতা ও ইসলামের স্বার্থে। জাতীয় পার্টির সঙ্গেও একসময় নির্বাচনি সমঝোতা হয়েছিল, কারণ তারা রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে ইসলামের স্বীকৃতি দেওয়াসহ অনেক বিষয়ে ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। রাজনীতিতে কূটনৈতিক সমঝোতা ইতিহাসেরই অংশ।

যুগান্তর: আপনি সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেছেন, ‘নির্বাচন-ফির্বাচন অনেক পরের কাহিনি, কিসের নির্বাচন? শাপলা চত্বরের শহীদদের স্বীকৃতি, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না’। এসব কি নিছক রাজনৈতিক বক্তব্য? নাকি শেষপর্যন্ত আপনার বক্তব্যে আটল থাকবেন?

মামুনুল হক:  না, নিছক রাজনৈতিক বক্তব্য নয়। আমি বারবার বলেছি, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে নির্বাচন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দাবি ও চ্যালেঞ্জ। আমরা এর বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখব ইনশাআল্লাহ।

যুগান্তর: বাহাত্তরের সংবিধান নিয়ে আপানার নেতিবাচক অনেক বক্তব্য আছে। ‘বাহাত্তরের সংবিধান বাংলার মাটিতে চলবে না, চলতে দেওয়া হবে না।’ এসব আপনি প্রায়ই বলেন। আসলে মূল সমস্যটা কী? আপনি কী চান?

মামুনুল হক: ১৯৭২ সালের সংবিধান আমাদের কাছে ইতিহাসের সবচেয়ে দুঃখজনক অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এর মাধ্যমে বিকৃত করা হয়েছে। স্বাধীনতার পূর্বে আওয়ামী লীগসহ কেউই ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেনি। অথচ ’৭২ সালের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা মূলনীতি হিসাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৪৭ সালে পূর্ববঙ্গের মানুষ মুসলিম জাতিসত্তার ভিত্তিতে দেশ ভাগ করেছিল। অথচ স্বাধীনতার পর ভারতীয় ধারার ধর্মনিরপেক্ষতা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, ’৭২-এর এ চেতনাকে উৎখাত না করলে ’৪৭, ’৭১ ও ’২৪-এর প্রকৃত চেতনা প্রতিষ্ঠিত হবে না।

যুগান্তর: এক বছরের বেশি সময় হল শেখ হাসিনা পালিয়েছেন। বিগত ১৭ বছরের সীমাহীন জুলুম-অত্যাচার ও অবিচারের অনুশোচনায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আজও কোনো দায়িত্বশীল বক্তব্য আসেনি। বিপরীতে আমরা দেখেছি শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা বিদেশে বসে উসকানি দেওয়া বা নাশকতার আশঙ্কা তৈরি করেছেন? এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?

মামুনুল হক:  শেখ হাসিনা তার দলকে হিংস্র ও দায়িত্বহীন দলে পরিণত করেছেন। হত্যা, গুম, খুন ও রক্তপাতের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকাই তার রাজনৈতিক কৌশল ছিল। জুলাই বিপ্লবে তিনি ছাত্রজনতা ও সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন। আজও তার দল কোনো দায়িত্বশীল বক্তব্য দেয়নি বরং বিদেশ থেকে উসকানি দিচ্ছে। এ কারণে জনগণের আস্থা ফিরে পাওয়ার সুযোগও তারা হারিয়েছে।

যুগান্তর: দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচনের বিকল্প ভাবলে বিপদ হবে। আপনি কী বলেন?

মামুনুল হক: নির্বাচনের বিকল্প ভাবার কোনো সুযোগ নেই। তবে মানুষ আবারও যদি একপক্ষীয় প্রভাবিত নির্বাচন দেখে, তাহলে হতাশ হবে। তাই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে নির্বাচনই যৌক্তিক সমাধান।

যুগান্তর: অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ কি তৈরি হয়েছে?

মামুনুল হক: অনেক ঘাটতি এখনো আছে। বর্তমান প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ প্রবল। সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে, নইলে কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন সম্ভব নয়।

যুগান্তর: সরকার আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ দেখছি না। আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রাখলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে তো? রাজনীতিতে স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরবে তো?

মামুনুল হক: আওয়ামী লীগ যেসব কাজ করেছে, তার কারণে তারা জনগণের কাছে চরমভাবে অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েছে। ১৯৭১-এর পর যেমন-মুসলিম লীগ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছিল, ঠিক তেমনি ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগও অপ্রাসঙ্গিক। তারা নির্বাচনে না থাকলেও সেটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে না। কারণ তারা ফ্যাসিবাদী, গণবিচ্ছিন্ন একটি সংগঠনে পরিণত হয়েছে।

যুগান্তর: আওয়ামী লীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে এটি একটি ভাইরাল ডায়লগ। আওয়ামী লীগের আবার ফিরে আসার কোনো শঙ্কা করছেন?

মামুনুল হক: আওয়ামী লীগ খুব সহসাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসতে পারবে বলে আমি মনে করি না। তবে যেহেতু আওয়ামী লীগের কাছে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা রয়েছে এবং বিগত দিনগুলোতে তারা সন্ত্রাসনির্ভর একটি দলে পরিণত হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে চোরাগুপ্তা হামলা, নাশকতা, রক্তপাত এসব ঘটাতে পারে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা আমরা জোরালোভাবেই করি।

যুগান্তর: জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তীব্র হচ্ছে। আপনার মতামত কী?

মামুনুল হক: জাতীয় পার্টির যে ভূমিকা বিগত দিনগুলোতে ছিল, তাতে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা সংগতভাবেই জুলাই বিপ্লবের অনিবার্য দাবি। বিশেষ করে সম্প্রতি জাতীয় পার্টিকে কেন্দ্র করে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের ওপর যে বর্বরোচিত হামলা হয়েছে, সেটি মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে। আমরা মনে করি, এ ঘটনার পর জাতীয় পার্টিকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের চেষ্টা ফ্যাসিবাদী শক্তির দুয়ার উন্মোচনের শামিল। তাই জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে আওয়াজ আরও তীব্র হবে।

যুগান্তর: ২৪-এর কোটাবিরোধী আন্দোলন তো আপনাদের ছিল না। জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হলেন কোন প্রেক্ষাপটে?

মামুনুল হক:  কোটাবিরোধী আন্দোলন আমাদের ছিল না এটা আংশিক সত্য। ২০১৮ সাল থেকেই আমরা এ আন্দোলনকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছি, এটিকে ন্যায্য দাবি হিসাবে বিবেচনা করেছি। তবে দাবি আমাদের নিজস্ব ছিল না। কিন্তু যখনই ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাত্রদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালাল, তখন আমরা ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে বাধ্য হই। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্নে আমরা রাজপথে নেমেছি।

যুগান্তর: আপনি একজন হাদিস বিশারদ ও ইসলামি আইনজ্ঞ। আলেম হিসাবে রাজনীতিতে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ দেখেন?

মামুনুল হক:  রাজনীতিকে আমি ধর্মীয় ও নাগরিক দায়িত্ব হিসাবেই দেখি। কুরআন-হাদিস থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সেটির বাস্তবায়ন ছাড়া পূর্ণতা আসে না। তাই রাজনীতি আমার দায়িত্ব। তবে ধর্মীয় অঙ্গনে এখনো অনেকে রাজনীতিকে সন্দেহের চোখে দেখে। সেই মানসিকতা বদলানোই বড় চ্যালেঞ্জ।

যুগান্তর: জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হলো। ইসলামপন্থিদের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি কী?

মামুনুল হক: সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো, এই ঐতিহাসিক আন্দোলনে ইসলামপন্থিদের বলিষ্ঠ ভূমিকা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে। ফলে ইসলামপন্থিরা রাজনীতিতে প্রাপ্য অবস্থান আদায় করতে পেরেছে। তবে অপ্রাপ্তি হলো, এখনো জুলাই সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা নেই। বরং নারী অধিকার কমিশন, ধর্মীয় শিক্ষকের বদলে গানের শিক্ষক নিয়োগ, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপন ইসলামপন্থিদের অস্বস্তিতে ফেলছে।

যুগান্তর: জুলাই অভ্যুত্থানে ঐক্যবদ্ধ থাকা ইসলামপিন্থরা এখন কিছুটা বিভক্ত। এর কারণ কী?

মামুনুল হক: তখন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এখন জুলুম বন্ধ হওয়ায় পুরোনো মতাদর্শিক পার্থক্যগুলো ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তবে ইসলামপন্থিরা জুলাই সনদ বাস্তবায়নে একযোগে সোচ্চার, এটি গুরুত্বপূর্ণ।

যুগান্তর: আলেম-মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি বলে অভিযোগ আছে। দায় কাকে দেবেন?

মামুনুল হক: মূলত সরকারেরই দায়। তারা এনজিও-নির্ভর উপদেষ্টা নিয়ে চলছে, যেখানে উপযুক্ত লোক নেই। আমরা অভিভাবকের জায়গা থেকে এ নিয়ে নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি।

যুগান্তর: জুলাই ঘোষণাপত্রে ইসলামপন্থিদের অবমাননা করা হয়েছে বলে আপনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। এখন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদের প্রাথমিক খসড়া প্রকাশ করেছে। বিতর্ক হচ্ছে সনদকে সংবিধানের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া নিয়ে। আপনার মতামত কী?

মামুনুল হক: জুলাই সনদ অবশ্যই আগামীর বাংলাদেশের পথনির্দেশক ও প্রধান ভিত্তি হওয়া উচিত। সংবিধানের ঊর্ধ্বে নয়, বরং সংবিধানের ভিত্তি হিসাবেই জুলাই সনদকে মানতে হবে।

যুগান্তর: বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন অফিস স্থাপন নিয়ে আপনার অবস্থান বদলেছে কেন?

মামুনুল হক: সরকার আমাদের নিশ্চিত করেছে এটি স্থায়ী অফিস নয়, বরং চুক্তিভিত্তিক কমিশন-যার মেয়াদ তিন বছর এবং প্রয়োজনে আগে বাতিল করা যাবে। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদের বিচার প্রমাণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে ইসলামপন্থিদের একাংশ মত দিয়েছে। তাই আমরা অবস্থান কিছুটা নমনীয় করেছি।

যুগান্তর: আপনার অগণিত অনুসারীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

মামুনুল হক: আমি বলব প্রথমত ইসলাম, তারপর মানবতা, তারপর দেশের স্বার্থ। ব্যক্তিস্বার্থ ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা ইসলাম, মানবতা ও দেশের কল্যাণে কাজ চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।

যুগান্তর: যুগান্তরকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

মামুনুল হক:  আপনাকে এবং যুগান্তরের সব পাঠককে ধন্যবাদ।