এক বছর মেয়াদে কারিগরি শিক্ষা চালুর চিন্তা করছে সরকার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনার্স ও ডিগ্রিতে এ শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে শিগগিরই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমিয়ে বৃত্তিমূলক আত্মকর্মসংস্থান বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে সচিবালয়স্থ কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সভাকক্ষে এ বিভাগের সচিবসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষা বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব)-এর নেতৃবৃন্দদের অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন অবহেলিত মাদ্রাসা শিক্ষার ভিত্তি ইবতেদায়ির প্রতি বিশেষ নজর দিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিগত দিনে বহুবার দাবি-দাওয়া জানালেও যেসব বিষয় আমলে নেননি আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী-সচিবরা। এবার সেসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। এ লক্ষে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য বেশকিছু উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, “ধাপে ধাপে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করা হবে। এছাড়া ইবতেদায়ি শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি এবং মিড ডে মিলও চালু হচ্ছে।”
মতবিনিময় সভায় ইবতেদায়ি মাদ্রাসার করুণ অবস্থার কথা তুলে ধরে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, “স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার করুণ হাল, অনেক মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলোকে বাঁচানো দরকার। এগুলো না থাকলে ফিডার স্টুডেন্ট কোথায় পাওয়া যাবে? আবার ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে মাদ্রাসা যারা শুরু করে তারা স্কুল থেকে যাচ্ছে। ফলে তারা কি শিখছে? না ভালোভাবে আরবি শিখছে, না বাংলা। এ জন্য আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর দুটি উদ্যোগ নিয়েছি। প্রথমটি হচ্ছে- স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো ধাপে ধাপে এমপিওভুক্ত করা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে এবং কার্যক্রম শুরু করতে বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এসব মাদ্রাসায় বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের জন্য আলাদা প্রজেক্ট করার নির্দেশনা দিয়েছি, তারা একটি ডিপিপি তৈরির প্রক্রিয়া শিগগির শুরু করবেন।”
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও মিড ডে মিলের বিষয়ে তিনি বলেন, “ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং মিড ডে মিলের জন্য প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে।” কারিগরি শিক্ষার বিষয়ে সচিব বলেন, “শিক্ষা নিয়ে আমার কিছু স্বপ্ন রয়েছে। আমি অনুভব করি কারিগরি শিক্ষা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। কারিগরি শিক্ষা ছাড়া দেশের এত বেশি বেকারত্ব দূর করা সম্ভব নয়। তাই কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব বাড়াতে হবে। তা না হলে আমরা উন্নতি করতে পারব না। পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ মানুষ মুসলিম। তাদের বড় একটা অংশ সন্তানদের মাদ্রাসায় পড়াতে চান। কাজেই তাদেরকেও মাইনাস করে আমরা চলতে পারব না।”
সচিব আরো বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রামে-গঞ্জে অনার্স-মাস্টার্স দেওয়া হচ্ছে। কিছু ভালো তো আছে, অনেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেয়ে সেখানে পড়ছে, ভালোও করছে। কিন্তু সার্বিকভাবে কিছু বেকার সৃষ্টি করছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনেক প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার মানও সন্তোষজনক নয়। ফলে তারা অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে না ফিরে যেতে পারছে তাদের বাবার পেশায়, না পাচ্ছে কোনো চাকরি। ফলে বেকার তৈরি হচ্ছে। এখানে কারিগরি শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। যদিও কারিগরি শিক্ষা নিয়ে কিছুটা নেতিবাচক ধারণা আছে। আমাদের সেগুলো দূর করতে হবে। যখন দেখবে কলেজে অনার্স পড়ানোর চাইতে কারিগরিতে পড়লে একটা কর্মসংস্থান হবে। তখন কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহী হবে। এ জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন।”
কারিগরি বিভাগের সচিব বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছরের অনার্স কোর্স ও পাস কোর্স তিন বছরের আছে। এখানে ১ বছর করে কারিগরি প্রযুক্তি শিক্ষা দিতে চাই। এটা নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিসহ অন্যান্যদের সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। কিভাবে এটা প্রয়োগ করা যায় এটা নিয়ে চিন্তা করছি। শিগগিরই আমরা এই বিষয়টি নিয়ে বসব। কারণ এখানে এক বছরের একটি কোর্সের একটা সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশে গিয়ে অনেকে ভালো চাকরি পেতে পারে। দেশে ভালো কিছু করতে পারে, দক্ষতা অর্জন করে। সেই উদ্যোগটাই নেওয়া হবে।” মতবিনিময় সভায় কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদ্রাসা অনুবিভাগ) মো. নজরুল ইসলাম, ড. মো. আয়াতুল ইসলাম (কারিগরি অনুবিভাগ), সামসুর রহমান খান (প্রশাসন ও অর্থ), ড. মো. সিরাজুল ইসলাম (উন্নয়ন অনুবিভাগ), মো. আজিজ তাহের খান (অডিট ও আইন), ইরাবের সভাপতি ফারুক হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান সালমান, ইরাবের সাবেক সভাপতি সাব্বির নেওয়াজ, নিজামুল হক, শরীফুল আলম সুমন, মীর মোহাম্মদ জসিমসহ সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।