বরিশালে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তির অর্ধকোটি টাকা ফেরত প্রশ্নে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিনের বিরুদ্ধে। এর আগে ১০ কোটি টাকার একটি পুকুর দখলের অভিযোগেও শাস্তি দেওয়া হয় তাকে। ওই অভিযোগে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা এ নেত্রীর দলীয় পদ স্থগিতের পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বিএনপির।এবার তার বিরুদ্ধে উঠল শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানের অর্ধকোটি টাকা নিজের দখলে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ। এসব অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার বরিশাল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নগরীর ঐতিহ্যবাহী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যালামনাই অ্যাসিয়েশনের আহ্বায়ক অধ্যাপক শাহ সাজেদা। অভিযোগ অস্বীকার করে শিরিন বলেন, সংবাদ সম্মেলন করা শাহ সাজেদা আওয়ামী লীগের দোসর। তিনি প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা উঠিয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকার হিসাব দিতে পারেননি।
এরপর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আরেকটি কমিটি হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর আমাকে তার (সাজেদা) কমিটিতে নিতে বাসায় এসেছিলেন। আমি দায়িত্ব নেইনি। সাজেদার কমিটি গত দুই বছর ধরে অনুষ্ঠান করতে পারেনি। তিনি সিনিয়রদের অসম্মান করে বিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের ডেকে আনতেন। এই কমিটি আমার নেতৃত্বে হয়নি। তার (সাজেদা) বাসায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যেতে পারে, আমার কোনো লোকজন যায়নি। তাকে হুমকি দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এর আগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ৫০ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি হয়। এরপর আওয়ামী লীগের তৎকালীন বরগুনা-২ আসনের সংসদ-সদস্য সুলতানা নাদিরা নিজেকে আহ্বায়ক করে পালটা কমিটি করেন। আওয়ামী লীগের পতনের পর সংসদ-সদস্য নাদিরা পালিয়ে যান। এর পরও তার অনুসারীরা অনুষ্ঠান ঠেকাতে বিভিন্নভাবে বাধা দেন।
এ ঘটনার পরে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন তার লোকজন দিয়ে আরেকটি কমিটি করান। কমিটি গঠনের পর সাজেদাসহ দুজন ও শিরিনের অনুসারী তিনজনসহ মোট পাঁচজন মিলে একটি চুক্তি করেন। সংবাদ সম্মেলনে এ চুক্তি করতে সাজেদাকে হুমকি দিয়ে বাধ্য করার অভিযোগ করা হয়েছে শিরিনের বিরুদ্ধে। সেই চুক্তিতে টাকা উত্তোলনের ক্ষমতা না দেওয়া হলেও আলাদা অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা চালায় শিরিনের লোকজন। এমন অভিযোগ তুলে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দিতে সংবাদ সম্মেলনে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন সাজেদা।
অ্যাসিয়েশনের আহ্বায়ক অধ্যাপক শাহ সাজেদা যুগান্তরকে বলেন, এ স্কুলের শতবর্ষ পূর্তিতে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের জন্য ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সভার মাধ্যমে আমাদের কমিটি গঠন করা হয়। আমাদের কমিটি দুই হাজার ৬৩৮ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা চাঁদা গ্রহণ করে। এরপর অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণার আগ মুহূর্তে নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধির আবেদন করে কিছু প্রাক্তন শিক্ষার্থী।এ ঘটনার পরে শতবর্ষ উদযাপন পর্ষদ নামে আরেকটি পালটা কমিটি করা হয়। সেই কমিটির আহ্বায়ক হন বরগুনা-২ আসনের আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ-সদস্য সুলতানা নাদিরা। এরপর আওয়ামী লীগের সংসদ-সদস্যের সেই কমিটির সদস্যরা ব্যাংক হিসাব খুলে আলাদাভাবে নিবন্ধন শুরু করে। এতে সারা না পেয়ে আমাদের কমিটির কাছে জমা থাকা অর্ধকোটি টাকা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আওয়ামী সরকার পতনের পর তারা আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু সাবেক সংসদ-সদস্য নাদিরার কমিটির লোকজন মানববন্ধন, আইনি নোটিশ প্রদান করে অনুষ্ঠানের স্থগিতের দাবি জানান।
এরপর জেলা প্রশাসনের পরামর্শে অনুষ্ঠান স্থগিত করে গ্রহণ করা চাঁদা ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তখনই বিএনপি নেতা বিলকিস জাহান শিরিন তার অনুসারী ফয়জুন নাহার সেলিকে আহ্বায়ক ও সানজিদা শাহনেওয়াজকে সদস্য সচিব করে আরও একটি পালটা কমিটি হয়। এরপর আমাকে ভয় দেখিয়ে শিরিন একটি চুক্তি করতে বাধ্য করে। চুক্তিতে বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসিয়েশনের ৫০ সদস্যের মধ্যে আমিসহ (সাজেদা) দুজন স্বাক্ষর করে।সেই চুক্তিতে শিরিনের লোকজন অনুষ্ঠান করবে, যারা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চায় না তাদের টাকা ফেরত দেয়াসহ বেশ কিছু শর্ত উল্লেখ করা হয়। তারা আমার মাধ্যমে জোর করে চুক্তি করিয়েও কোনো শর্ত মানেননি। তাই ওই চুক্তি বাতিল ঘোষণা করছি। এখন আমাদের কাছে জমা দেওয়া টাকা উঠানোর জন্য ব্যাংকে যাচ্ছেন শিরিনের লোকজন। শিরিন আমাকে কল করে গালাগালসহ বাসায় লোকজন পাঠিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। অতীতে যেমন অন্যের পুকুর ও বাড়ি দখল করেছেন একই কায়দায় তিনি এ টাকা উঠিয়ে নিতে চাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে আমি শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দিয়ে দায়মুক্ত হতে চাই। এজন্য প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
১০ কোটি টাকা মূল্যের একটি পুকুর দখল করে ভরাটের ঘটনায় গত বছরের ১১ আগস্ট শিরিনের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ স্থগিত করে বিএনপি।