Image description
 

অনলাইনভিত্তিক ক্যাসিনোর গুরু সেলিম প্রধান। ঢাকার অপরাধ জগতের ডন তিনি। পশুর খাটালে চাঁদাবাজি, হোটেল, স্পা, ক্যাসিনো পরিচালনাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।দেশে বিদেশে অনুমোদনহীন ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।  

 

অননুমোদিত সিসা বার পরিচালনার অভিযোগে দেশের অনলাইন ক্যাসিনোর ডন হিসাবে পরিচিত সেই সেলিম মিয়া ওরফে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে গুলশান থানা পুলিশ।রাজধানীর বারিধারা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

সেলিম প্রধান গ্রেফতার হওয়ার পর তার অপরাধ সম্পর্কে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশের অনলাইনের মাধ্যমে ক্যাসিনো ব্যবসা চালাতেন সেলিম। অনলাইনে কয়েন বিক্রি করে এই ক্যাসিনো চালানো হতো। এসব করে কামিয়েছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। 

সেলিম প্রধান ঋণ খেলাপি। সূত্র বলছে, সেলিম প্রধান রূপালী ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি টাকা লোন নিয়েছেন। তার বাবার নাম হান্নান প্রধান। ঢাকার মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে তার বাসা। তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে।

সেলিম প্রধান অনলাইনে ক্যাসিনো পরিচালনাকারী এবং বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রধান। তিনি ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সহসভাপতি পদে ছিলেন। এ ছাড়া এর আগে গ্রেফতার হওয়া বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার ক্যাশিয়ারও।

সেলিম প্রধানের ব্যাংককের পাতায়ায় বিলাসবহুল হোটেল, ডিসকো বারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। থাইল্যান্ডের পাতায়াতেও রয়েছে তার ক্যাসিনো ব্যবসা। সূত্র জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্পা ও বিউটি পার্লার যেখানে ভিআইপিদের আসা-যাওয়া রয়েছে, সেগুলোতে নারী সরবরাহের কাজ করতেন সেলিম। সেই মেয়েরা ভিআইপিদের বিনোদন দেয়ার কাজ করতেন। সিলেট থেকে অবৈধভাবে পাথর নিষ্কাশনের কাজ করতেন তিনি। 

সেলিমের প্রধানগ্রুপ ডট কম নামের একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়ছে, সেলিম প্রধানের লাইভ ক্যাসিনো মার্কেট পি২৪ লিমিটেড নামের গেমিং কোম্পানি ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওয়েবসাইটে দেয়া ঠিকানায় দেখা যায়, গুলশান-২ এর ৯৯ নম্বর রোডের ১১/এ নম্বরে রয়েছে ‘পি২৪’ এর অফিস। করপোরেট অফিসের ঠিকানা দেয়া হয়েছে, ডি-১ মমতাজ ভিশন, গুলশান-২ এর ৯৯ নম্বর রোডে ১১/এ। বিদেশের অফিসের ঠিকানা হচ্ছে, ১৬৫/৯৬ মো ১০, সুরাসাক, শ্রী রাখা, চনবুন, থাইল্যান্ড, ২০১১০।

সেলিমের ক্যাসিনো ব্যবসা সম্পর্কে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, অনলাইনে কয়েন বিক্রি করে ক্যাসিনো খেলায় জুয়াড়িদের উদ্বুদ্ধ করতেন সেলিম প্রধান। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুলেছিলেন তার গোপন ক্যাসিনো। ক্যাসিনো থেকে অর্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ তিনি বিভিন্নভাবে বিদেশে পাচার করেছেন।

অনলাইন ক্যাসিনো থেকে আয়ের অর্থ সেলিম জাপানসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করতেন। গুলশানে তার একটি স্পা সেন্টার রয়েছে। সেখানেও অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনাই নয়, সেলিম প্রধান রাজশাহীসহ সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় গবাদিপশুর সব খাটাল ও মাদক সিন্ডিকেটের হোতা। এমনকি সীমান্তে জালটাকার মূল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে।

প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে তিনি খাটাল, মাদক ও জালটাকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। সেখান থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা নেন। দুই বছরে তিনি সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা চাঁদা নিয়েছেন।

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচার মামলায় চার বছরের কারাদণ্ড পাওয়া সেলিম প্রধান গেল বছর রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যদিও ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় পরে যাচাই-বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। 

অনলাইন জুয়ার কারবারি সেলিম প্রধানের নামে থাইল্যান্ডে সাতটি কোম্পানি রয়েছে।  এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডে চারটি ব্যাংকে ‘কয়েক কোটি’ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন করেছেন তিনি।  দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ তথ্য জানিয়েছে। দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খান জানান, ‘তদন্তের স্বার্থে সেলিম প্রধানের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। তার অর্ধশত ব্যাংক হিসাবও ফ্রিজ করা হয়েছে।’

ঋণের নামে রূপালী ব্যাংকের ১শ’ কোটি টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে অপরাধ জগতে নাম লেখান স্পা ব্যবসায়ী সেলিম প্রধান। জাপানের অর্থায়নে শিল্প গড়ার নামে ঋণ নেয়া হলেও পুরো টাকাই আত্মসাৎ করা হয়। একপর্যায়ে টাকা নিয়ে দেশের বাইরে চলে যান সেলিম।

স্থায়ী আবাস গড়েন জাপানের রাজধানী টোকিওতে। কিন্তু টোকিওতেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত হন। জাপান থেকে বহিষ্কার করা হলে চলে যান আমেরিকায়। সেখানে এক আমেরিকানকে বিয়েও করেন। আমেরিকান স্ত্রীকে কাজে লাগিয়ে তিনি ফের জাপানে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু এ যাত্রায়ও সফল হননি। সেলিম প্রধানকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। তবে তাকে বেশিদিন কারাবাস করতে হয়নি। এরপর গুলশানের একটি স্পা সেন্টার ঘিরে তিনি নতুন করে নেটওয়ার্ক গোছানোর কাজ শুরু করেন।

সেলিম প্রধানের মোট ৫ জন স্ত্রী আছেন বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র। এর মধ্যে একজন রাশিয়ান, একজন আমেরিকান, একজন জাপানি এবং দু’জন বাংলাদেশি। সেলিমের ছোট বউ বা ৫ নম্বর স্ত্রী সহকারী কাস্টমস কমিশনার। বর্তমানে কর্মরত আছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে।