
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের মাত্র তিনদিন বাকি। শেষমুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা। কোন পদে কাকে ভোট দেবেন, তা নিয়ে হিসাব কষছেন শিক্ষার্থীরাও। নির্বাচনে বেশি আলোচনায় ভিপি, জিএস, এজিএসসহ কয়েকটি পদ। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর কোন পদে কে যোগ্য, তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। নির্বাচিত হলে কে ভালো কাজ করতে পারবেন, কার সক্ষমতা কতুটুক; তা নিয়ে মতামত দিচ্ছেন অনেকে।
তবে ডাকসুর ভিপি, জিএস, এজিএসের কার কতুটুক দায়িত্ব, সে সম্পর্কে অনেকের স্পষ্ট ধারণা নেই। নির্বাচিত একজন ভিপি কী কী কাজ করতে পারবেন; জিএসের কাজই বা কী? গঠনতন্ত্রে প্রত্যেক পদে নির্বাচিত প্রতিনিধির কাজের পরিধি ও ধরন উল্লেখ থাকলেও তা অনেকেই জানেন না।
ডাকসুতে ৩০ পদ, নির্বাচন ২৮টিতে
ডাকসুর সবশেষ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যনির্বাহী কমিটিতে পদের সংখ্যা ৩০টি। এরমধ্যে ২৮টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাকি দুটি পদের মধ্যে একটিতে পদাধিকারবলে উপাচার্য থাকেন। আর কোষাধ্যক্ষ পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে মনোনীত করেন উপাচার্য।
নির্বাচিত পদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয় ভিপি (সহ-সভাপতি), জিএস (সাধারণ সম্পাদক) ও এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক) পদ। এরপর ১২টি সম্পাদকীয় পদ রয়েছে। সেগুলো হলো—মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি; কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া; আন্তর্জাতিক; সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক; গবেষণা ও প্রকাশনা; ক্রীড়া; ছাত্র পরিবহন; সমাজসেবা; ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট; স্বাস্থ্য ও পরিবেশ; মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক। বাকি ১৩টি কার্যনির্বাহী সদস্য পদ।
ভিপি-জিএস-এজিএসের কার কী কাজ, ক্ষমতা কতটা
ভিপি: ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী—ভিপি বা সহ-সভাপতি পদে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত প্রার্থী ভিপি পদে দায়িত্ব পালন করবেন। ডাকসুর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন ভিপি। সভাপতি (উপাচার্য) ও কোষাধ্যক্ষ (উপাচার্য মনোনীত একজন অধ্যাপক) অনুপস্থিত থাকলে ডাকসুর সব ধরনের সভায় সভাপতিত্ব করবেন ভিপি।
বাজেটে নির্ধারিত নয়, এমন কোনো অনুষ্ঠান বা কাজে ভিপি দুই হাজার ৫০০ টাকার বেশি খরচ করতে পারবেন না। যদি নির্বাহী কমিটি অনুমোদন দেয়, সেক্ষেত্রে ভিপি এর চেয়ে বেশি টাকাও খরচ করতে পারবেন। কোনো উপকমিটি গঠন করা হলে সেখানে পদাধিকারবলে ভিপি চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবেন।
বাজেটে নির্ধারিত নয়, এমন কোনো অনুষ্ঠান বা কাজে ভিপি দুই হাজার ৫০০ টাকার বেশি খরচ করতে পারবেন না। যদি নির্বাহী কমিটি অনুমোদন দেয়, সেক্ষেত্রে ভিপি এর চেয়ে বেশি টাকাও খরচ করতে পারবেন। কোনো উপকমিটি গঠন করা হলে সেখানে পদাধিকারবলে ভিপি চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবেন
জার্নাল ও অন্যান্য প্রকাশনার সম্পাদনা পরিষদেও ভিপি পদাধিকারবলে সদস্য হবেন। ডাকসুর কর্মচারীদের কোনো কারণে সাময়িক বরখাস্ত বা মাসিক বেতনের এক-চতুর্থাংশ পর্যন্ত জরিমানা করার ক্ষমতাও ভিপিকে দেওয়া হয়েছে।
জিএস: গঠনতন্ত্র অনুযায়ী—ডাকসুর জিএস (সাধারণ সম্পাদক) কার্যনির্বাহী কমিটিরও সাধারণ সম্পাদক হবেন। তিনি ডাকসুর সব ধরনের সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ ও দায়িত্বে থাকবেন বলে উল্লেখ রয়েছে। একই সঙ্গে তিনি ডাকসুর পক্ষ থেকে সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ পরিচলনা করবেন।
ডাকসুর যাবতীয় হিসাব যথাযথ ক্রমানুসারে সংরক্ষণ করবেন। কার্যনির্বাহী কমিটি ও ডাকসুর সভার কার্যবিবরণী সংরক্ষণ করবেন। এছাড়া তাকে নির্বাহী কমিটি ও ছাত্রসংসদের সভা আহ্বান ও কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব কার্যক্রম সম্পাদনের দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছে।
জিএস পদাধিকারবলে ভিপির মতোই সর্বোচ্চ দুই হাজার ৫০০ টাকা খরচ করতে পারবেন। এর বেশি খরচ করতে হলে তাকে কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন হবে। কোনো উপকমিটি গঠন করা হলে সেখানে পদাধিকারবলে জিএস সদস্যসচিব হিসেবে থাকবেন।
ডাকসুর বাজেট প্রস্তুতের ক্ষেত্রে জিএসের ওপর বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের পরবর্তী কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের পর জিএস বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদের সদস্যদের সহযোগিতায় একটি বাজেট প্রস্তুত করবেন। দায়িত্ব নেওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে এ বাজেট নির্বাহী কমিটিতে উপস্থাপন করতে হবে।
কোষাধ্যক্ষ ডাকসুর ব্যয় নির্বাহের জন্য জিএসকে অগ্রিম টাকা দেবেন। জিএসকে এ টাকা ব্যয়ের সব নথিপত্র ও খরচের হিসাব অনুযায়ী প্রতিটি রশিদ সংরক্ষণ করতে হবে। তাকে সব ব্যয়ের ভাউচার কোষাধ্যক্ষের কাছে জমা দিতে হবে।
ডাকসুর বাজেট প্রস্তুতের ক্ষেত্রে জিএসের ওপর বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের পরবর্তী কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের পর জিএস বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদের সদস্যদের সহযোগিতায় একটি বাজেট প্রস্তুত করবেন। দায়িত্ব নেওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে এ বাজেট নির্বাহী কমিটিতে উপস্থাপন করতে হবে
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিভাগের মহাপরিচালকের সমন্বয়ে অডিট কমিটিতেও জিএসকে সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করতে হবে। অডিট কমিটির সব সভা আহ্বান ও অডিট রিপোর্ট কার্যনির্বাহী কমিটিতে আলোচনার জন্য উপস্থাপনের দায়িত্বও জিএসের।
জার্নাল ও অন্যান্য প্রকাশনার সম্পাদনা পরিষদেও জিএস পদাধিকারবলে সদস্য হবেন। ডাকসুর কর্মচারীদের কোনো কারণে সাময়িক বরখাস্ত বা মাসিক বেতনের এক-চতুর্থাংশ পর্যন্ত জরিমানা করার ক্ষমতাও জিএসকে দেওয়া হয়েছে।
এজিএস: ডাকসুর কার্যাবলি পরিচালনায় সাধারণ সম্পাদককে সার্বিক সহায়তা করবেন এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক)। জিএসের অনুপস্থিতিতে তার সব দায়িত্ব পালন করবেন এজিএস। পাশাপাশি সভাপতি (উপাচার্য) ও কার্যনির্বাহী কমিটির দেওয়া যেকোনো কাজ তাকে সম্পাদন করতে হবে। পদাধিকারবলে ভিপি-জিএসের মতোই এজিএসও ডাকসুর তহবিল থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৫০০ টাকা খরচ করতে পারবেন।
সম্পাদকীয় ১২ পদে নির্বাচিতদের যেসব কাজ
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক: তিনি ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণআন্দোলন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানসহ এ ধরনের ঘটনাবলির চেতনাকে ধারণ ও লালনের জন্য কার্যক্রম আয়োজন করবেন।
কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক: কমনরুম, রিডিংরুম, ইনডোর গেমস এবং ক্যাফেটেরিয়ার ব্যবস্থাপনা করতে হবে। ইনডোর গেমস প্রতিযোগিতা আয়োজন করা ও শিক্ষার্থীদের সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক: সরকার, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও বিদেশি দেশসমূহের মূল্যবোধ সম্পর্কে কর্মশালা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কুইজ প্রতিযোগিতা, বিদেশ সফর ও সংশ্লিষ্ট সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আয়োজন করতে হবে। এসব আলোচনার মাধ্যমে সর্বজনীন ভ্রাতৃত্ব ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা, জাতীয় সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক: শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার বা কর্মজীবনে কীভাবে ভালো করবে, সে-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। কর্মশালা, সেমিনার ও চাকরি মেলা আয়োজন করা ইত্যাদি।
মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক: মানবাধিকার ও আইনের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কর্মসূচি, কর্মশালা ও সেমিনার আয়োজন এবং প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করা, যেন শিক্ষার্থীরা আরও সচেতন, সক্ষম, সমালোচনামূলক ও স্বচ্ছন্দে তাদের মতপ্রকাশ করতে পারেন।
সভাপতি হিসেবে উপাচার্য ভিপি, জিএসসহ যেকোনো পদাধিকারীকে বরখাস্ত করার অধিকারও রাখেন। প্রয়োজন মনে করলে তিনি পুরো নির্বাহী কমিটি বাতিল করে নতুন নির্বাচন দিতে পারেন। তাছাড়া সভাপতির অনুমতি ছাড়া কোনো সভা আহ্বান করা যাবে না
ক্রীড়া সম্পাদক: খেলাধুলা ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। তিনি বিভিন্ন ক্রীড়া ক্ষেত্রে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার জন্য বাজেট প্রস্তুত করবেন এবং তা ছাত্রসংসদের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কার্যনির্বাহী কমিটিতে উপস্থাপন করবেন।
পরিবহন সম্পাদক: বিভিন্ন অনুমোদিত রুটে চলাচলকারী শিক্ষার্থীদের পরিবহন সুষ্ঠুভাবে কাজ করছে কি না, তা তত্ত্বাবধান করতে হবে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাস ভাড়া ফি সঠিকভাবে আদায় করা হচ্ছে কি না, বেশি নেওয়া হচ্ছে কি না, তা দেখভাল করবেন।
সমাজসেবা সম্পাদক: নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও জনগণের উন্নয়নকল্পে শুভেচ্ছা সফর, বক্তৃতার আয়োজন করতে হবে। এছাড়া ডাকসু পরিচালিত স্কুলের কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা ও সমাজকল্যাণমূলক কাজ করতে হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদকের প্রধান কাজ বিজ্ঞানমেলা, বুলেটিন ও তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদকের কাজ হবে সাহিত্য প্রতিযোগিতা ও ডাকসুতে বিতর্কের আয়োজন করা এবং বছরে এক বা একাধিকবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন।
এছাড়া গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদককে কর্মশালা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, সম্মেলন আয়োজন করতে হবে এবং জার্নাল, বুলেটিন ও গবেষণা প্রকাশনা প্রকাশ করতে হবে। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদককে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে। কার্যনির্বাহী সদস্যরা সার্বিক কাজে সহযোগিতা করবেন।
বাজেটে ভিপি-জিএসের জন্য বরাদ্দ কত, খরচের নিয়ম কী
বাজেটে অনুমোদন না থাকলে কোনো পদাধিকারী একবারে ২ হাজার ৫০০ টাকার বেশি খরচ করতে পারেন না। তবে বছরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বাজেট পাস হয়, তাতে ডাকসুর জন্য বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সবশেষ ২০১৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়া ভিপি ও জিএসের জন্য বাজেটে পাঁচ লাখ করে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এছাড়া সম্পাদকীয় পদের প্রার্থীরাও বরাদ্দ পেয়েছিলেন। তবে এ অর্থ নিয়ম মেনে ও অনুমোদন সাপেক্ষে খরচ করতে হয়।
নুর-রাব্বানীর ডাকসু কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা নিয়ম মেনে কত টাকা খরচ করেছিলেন, তার বিবরণী সেসময় প্রকাশ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাতে দেখা যায়, ওই বছর ডাকসুর বাজেটের আকার ছিল এক কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী, ডাকসুর ওই কার্যনির্বাহী কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহমেদ তহবিল থেকে ১৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা, সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৮৩৪ টাকা, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাহরিমা তানজিন ৬ লাখ ৭১ হাজার ৯০০ টাকা, স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী ৭ লাখ ৮২ হাজার ১২০ টাকা, সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদার ১২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী ৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা, সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ছাত্র পরিবহন সম্পাদক শামস-ঈ-নোমান ৫৮ হাজার ৭০০ টাকা উত্তোলন করেছেন।
ডাকসুর ওই কমিটির সদস্যদের মধ্যে তহবিল থেকে তানভীর হাসান ৯০ হাজার টাকা, রাকিবুল হাসান ৬১ হাজার ৭০০ টাকা, রাইসা নাসের ৭৪ হাজার ৫০ টাকা, রকিবুল ইসলাম ২ লাখ ২০ হাজার টাকা, মুহা. মাহমুদুল হাসান ৯৪ হাজার ৫০০ টাকা, রফিকুল ইসলাম ৩০ হাজার টাকা, ফরিদা পারভীন ৬১ হাজার ৫০০ টাকা, সাইফুল ইসলাম ১ লাখ টাকা এবং যোশীয় সাংমা তহবিল থেকে ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। সদস্যদের জন্য আলাদা কোনো বাজেট ছিল না। এ টাকা তারা জিএসের তহবিল থেকে তুলতে পারেন।
উপাচার্য সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী
ডাকসুর সভাপতি পদে পদাধিকারবলে দায়িত্ব পালন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তিনি ছাত্রসংদের সভাপতি হিসেবে কার্যনির্বাহী কমিটি, উপকমিটিতে সভাপতিত্ব করবেন। যেকোনো জরুরি অবস্থা, অচলাবস্থা ও গঠনতন্ত্রের নীতিমালা ভঙ্গের মতো পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। সব নিয়ম-কানুনের ব্যাখ্যা দেবেন এবং তার ব্যাখ্যাই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
সভাপতি হিসেবে উপাচার্য ভিপি, জিএসসহ যেকোনো পদাধিকারীকে বরখাস্ত করার অধিকারও রাখেন। প্রয়োজন মনে করলে তিনি পুরো নির্বাহী কমিটি বাতিল করে নতুন নির্বাচন দিতে পারেন। তাছাড়া সভাপতির অনুমতি ছাড়া কোনো সভা আহ্বান করা যাবে না।
উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে সভাপতি কোষাধ্যক্ষ
ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ সব তহবিলের দায়িত্বে থাকবেন। বাজেটের বাইরে যেন কোনো ব্যয় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। সভাপতি বা উপাচার্য যদি অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে তিনি সভাপতিত্ব করবেন।
সভাপতির (উপাচার্য) একচ্ছত্র ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করি। একই সঙ্গে তাকে সব ব্যাখ্যার উপরে রাখা হয়েছে। এ জায়গাটায় সভাপতি বা উপাচার্যের ক্ষমতাটা আরও শিথিল করা প্রয়োজন।- ডাকসুর সাবেক জিএস মুশতাক হোসেন
উপাচার্যের ক্ষমতা কমালে আরও শক্তিশালী হবে ডাকসু
ডাকসুতে নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের চেয়ে পদাধিকারবলে সভাপতি হওয়া উপাচার্যের ক্ষমতা বেশি। এ ক্ষমতা আরও কমাতে অনেক ছাত্রসংগঠন দাবিও তুলেছিল। তবে তা করা যায়নি। ডাকসুর সাবেক নেতা, বর্তমান প্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা এ ক্ষমতা আরও কমানোর দাবি জানিয়েছেন।
ডাকসুর ১৯৮৯-৯০ সালের নির্বাচনে জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে নির্বাচিত হন মুশতাক হোসেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য।
জানতে চাইলে মুশতাক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রয়োজনে সভাপতি (উপাচার্য) ডাকসুর নির্বাচিত কার্যনির্বাহী সংসদ বাতিল করে দিতে পারেন। এটা শুধু তাকে মনে করতে হবে; কোনো কারণ তিনি কাউকে দেখাতে বাধ্য নন। এখানে সভাপতির (উপাচার্য) একচ্ছত্র ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করি। একই সঙ্গে তাকে সব ব্যাখ্যার উপরে রাখা হয়েছে। এ জায়গাটায় সভাপতি বা উপাচার্যের ক্ষমতাটা আরও শিথিল করা প্রয়োজন।’