Image description
 

হাতে কালো একটি ব্যাগ। পায়ে কালো জুতা। টি-শার্ট গায়ে হাঁটছেন এক ব্যক্তি। মুখের চামড়া কিছুটা ভাঁজ পড়েছে। মাথার চুল কম। দাড়িও পেকে গেছে। এমন একজনকে পাওয়া গেল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ভবনের সামনে। তিনি ব্যাগ থেকে রাকসু নির্বাচন-সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র বের করলেন। কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই বললেন, ‘ভাই, রাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। দোয়া করবেন।’

ওই ব্যক্তির নাম শাহরিয়ার মোর্শেদ খান। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ৫১ বছর বয়সী শাহরিয়ারের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার রাজাপুর গ্রামে।

কথা বলে জানা গেল, তিনি আসন্ন রাকসু নির্বাচনে ‘মিডিয়া ও প্রকাশনা’ পদে মনোনয়নপত্র তুলেছেন। আজ তিনি ডোপ টেস্টের জন্য নমুনা দিয়েছেন। কবে ফলাফল পাওয়া যাবে জানতে রাকসুর কোষাধ্যক্ষ কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন।

শাহরিয়ার মোর্শেদ জানান, তিনি অন্য সাধারণ ছাত্রদের মতো প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন ১৯৯৯-২০০০ সালে। সেখানে চতুর্থ বর্ষে পড়ার সময় পারিবারিক সমস্যায় লেখাপড়া ছেড়ে দেন। এরপর চট্টগ্রামে কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানিতে ২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চাকরি করেছেন। ২০১৪ সালে আবার লেখাপড়া শুরু করার মনস্থির করেন। সেই সময়ে তিনি ভোকেশনাল কারিগরির নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এরপর সেখান থেকে এসএসসি ও পরে একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে।

 

শাহরিয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জীবনটা সংগ্রামের। পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও শেষ করতে পারিনি। অনেক বছর পর আবার পড়াশোনা শুরু করি। আমার এখন বয়স চলে ৫১ বছর। আমার দুই ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। আমার চার মেয়ে আছে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। বড় মেয়ের স্বামী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। আমার তিন মেয়েও পড়াশোনা করছেন।’ তিনি বলেন, ৫১ বছর বয়সে পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁকে পরিবারেরও হাল ধরতে হয়। পরিবার ও লেখাপাড়া চালাতে হিমশিম খেতে হয়। বিভাগ ও সংস্থা থেকে কিছু বৃত্তির টাকা পান। বিভাগের শিক্ষকেরা খুব উৎসাহ দেন। রাজশাহীতে পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করা যায় না। তবু রাজশাহী টেক্সটাইল কারখানায় চাকরির একটি আবেদন করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি নিয়ে শাহরিয়ার বলেন, তাঁর দুই ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ায় তিনি সেখানে দীর্ঘদিন ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে ৫ বছর পড়েছেন। সেখানেও দেখেছেন, রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের আশা-প্রত্যাশা-স্বপ্ন হরণ করেন। তাঁরা মুখে বলেন এক, কিন্তু কাজে অন্য। এই দিকটা ভেবেই তিনি রাকসু নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৫১ বছর বয়সী কাউকে যদি শিক্ষার্থীরা ভোট দেন, তিনি তাঁদের জন্য চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, ‘সংগ্রামী মানুষ হিসেবে আমি মনে করি, বয়স কারও কাছে বাধা থাকে না। যেমন আমার শিক্ষায় কোনো বাধা আসেনি। তেমনই রাকসু নির্বাচনেও আমার কোনো বাধা আসবে না বলে মনে করি।’

 

দুপুরে রাকসু কার্যালয়ে গেলে সংবাদকর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। তখন সেখানে থাকা কিছু শিক্ষার্থী জানতে চান, তিনি প্রার্থী কি না? জবাবে বলতে থাকেন, তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর বয়স ৫১। এ সময় রাকসুর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মো. সেতাউর রহমান উপস্থিত হন। তিনিও অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কি প্রার্থী?’ উত্তরে শাহরিয়ার জানান, তিনি প্রার্থী হয়েছেন। এ ব্যাপারে সেতাউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী হয়ে থাকলে যে কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। শাহরিয়ারের বয়স বেশি হলেও সমস্যা নেই।