
মাগুরার মোহাম্মদপুরের পাচুড়িয়া গ্রামের নদের চাঁদ—এক অলৌকিক ক্ষমতাধারীর নাম আজও গ্রামীণ জনপদে লোকগাথার মতো ছড়িয়ে আছে। দীর্ঘ ১০ বছর ভারতের কামরুক-কামাখ্যায় এক নারীর কাছ থেকে জাদুবিদ্যা শিখেছিলেন তিনি। সেই বিদ্যার জোরেই কুমিরে রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন নদের চাঁদ।
তবে তান্ত্রিক গুরু তাকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন—*“কখনো কুমির হয়ো না”*। বহু অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শন করলেও গুরুর নির্দেশ মেনে নদের চাঁদ কুমির হননি। কিন্তু স্ত্রীর বায়না কাল হলো তার জীবনে।
স্থানীয়রা জানান, স্ত্রী সরলার জেদেই একদিন গভীর রাতে মধুমতি নদীর তীরে গিয়ে দুটি পাত্রে মন্ত্রপূত পানি তৈরি করেন নদের চাঁদ। স্ত্রী প্রথম পাত্রের পানি ছিটিয়ে দিলে তিনি কুমিরে রূপ নেন। কিন্তু ভয়ে আতঙ্কিত সরলা পালাতে গিয়ে ভুলবশত দ্বিতীয় পাত্রের পানি ফেলে দেন। ফলে আর কখনো মানুষ রূপে ফিরতে পারেননি নদের চাঁদ।
এরপর থেকেই তিনি নদীতে কুমির বেশে বসবাস শুরু করেন। একমাত্র ছেলের জন্য ব্যাকুল মা ঘাটে বসে ডাক দিতেন—ডাক শুনে কুমির রূপে নদের চাঁদ উঠে আসতেন, মায়ের হাতের খাবার খেয়ে আবার নদীতে ফিরে যেতেন।
পরে গুরু এসে জানান—*“নদের চাঁদকে আর মানুষ করা সম্ভব নয়, কারণ সে কুমিরের আহার গ্রহণ করেছে।”* অবশেষে একদল বণিকের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। স্থানীয়রা মৃত কুমিরকে হিন্দু রীতিতে সৎকার করেন। আজও সেই ঘাট *“নদের চাঁদের ঘাট”* নামে পরিচিত।
স্থানীয় জেলেরা বলেন—মধুমতীতে জাল ফেলতে গিয়ে কোনো অদ্ভুত টান অনুভব করলে এখনও নদের চাঁদের কাহিনি মনে পড়ে।
বর্তমানে জেলা প্রশাসন ঘাটটিকে সংরক্ষণ ও পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। জেলা প্রশাসক ওহিদুল ইসলাম জানান, “এটি ইতিহাসের স্বাক্ষর। এখানে পাকা ঘাট তৈরি করা হবে, যাতে আগামী প্রজন্ম নদের চাঁদের গল্প স্মৃতি হিসেবে জানতে পারে।”