Image description

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের হয়েছে। তিন বাম সংগঠন সমর্থিত ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বিএম ফাহমিদা আলম এ রিট দায়ের করেন। রিটটির বিপক্ষে লড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নিযুক্ত অ্যাডভোকেট শিশির মনির। তিনি রিটটির দুটি অসঙ্গতির কথা তুলে ধরেছেন। যে কারণে এস এম ফরহাদের প্রার্থীতা বাতিল না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিং করার সময় তিনি এসব বিষয়ে জানান।

এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, আমি আইনজীবী। আমার কাজ হচ্ছে আইনি প্রক্রিয়ায় কি হচ্ছে সে ব্যাপারে জবাব দেওয়া। রিটটি ষড়যন্ত্রমূলক কিনা সেটা আমি বলতে পারিনা। তবে এইটুকু বলতে পারি, যে রিপিটিশনটি দায়ের করা হয়েছে, এভাবে এটা করা যায় না, এটা চলে না। যিনি রিপিটিশন করেছেন এবং যার বিরুদ্ধে করেছেন, ডাকসু নির্বাচনে তাদের দুইজনের পদ-পদবী ভিন্ন। তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে তিনি কেন রিপিটিশন করেছেন। তার মাধ্যমে তিনি কেন ক্ষতিগ্রস্ত হলেন? একজন ব্যক্তির জিএস পদে প্রার্থিতার নমিনেশন চূড়ান্ত হয়েছে। যিনি এসে রিপিটিশন করছেন তিনি তো জিএস প্রার্থী নন। যিনি জিএস প্রার্থী নন, তিনি কীভাবে আরেকজন জিএস প্রার্থীর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত বা অ্যাফেক্টেড হলেন? এটা একটা ফান্ডামেন্টার কোয়েশ্চান, যা বুধবার (আজ) উত্থাপিত হবে।

অ্যাডভোকেট শিশির মনির আরও বলেন, দ্বিতীয় বিষয়টি হল- উচ্চ আদালতে আসার আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে ট্রাইবুনাল গঠন করেছে, সেটাতে অভিযোগ দায়ের করতে হয়। সেখানে কমপ্লেইন নিশ্চিত না করে উচ্চ আদালতে আসা যায় না। এগুলো কোনোকিছু না করে উচ্চ আদালতে আবেদনের এই প্রক্রিয়াকে আমরা ‘পরবর্তী চিন্তাভাবনার ফল (ম্যাটার অব আফটার থট)’ বলে আমরা মনে করি। ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থীতা চূড়ান্ত হওয়ার পরে যিনি এখন এই কমপ্লেইন হাইকোর্টে করছেন, পরবর্তীতে এই বুদ্ধিটা বের করেছেন, যা স্বাভাবিক নয়। এসব বিষয়ে বুধবার (আজ) কোর্টে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে।

জানা গেছে, রিটের প্রেক্ষিতে নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিতের মেয়াদ বাড়ান আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। এদিকে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা আবেদনটি আজ বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এ আদেশ দেন।

হাইকোর্টের আদেশে স্থগিতাদেশ চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির। তিনি বলেছেন, বুধবার (আজ) আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির জন্য এক নম্বর আইটেম হিসেবে থাকবে।

এর আগে গত সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) ডাকসু নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। এদিন বিকেলে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এ আদেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশের পর তাৎক্ষণিক হাতে লেখা আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আপিল বিভাগে আবেদন করতে বলেন আদালত। চেম্বার আদালতের আদেশ অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করে।

তার আগে সোমবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে ডাকসু নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

হাইকোর্ট আদেশে রিটকারী ও ডাকসু নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বিএম ফাহমিদা আলমকে জিএস প্রার্থী এসএম ফরহাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ডাকসুর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে বলা হয়। সঙ্গে সঙ্গে এই  আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আবেদনটি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।