
ফের গুজবের কবলে দেশ। গুজব-গুঞ্জনে প্রকৃত তথ্য উধাও। মানুষ গুজবের দিকে ঝুঁকছে। ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটস-অ্যাপ, ইমো, টুইটার-বিস্তীর্ণ ভার্চুয়াল প্রান্তর। যে যেভাবে খুশি, যেখান থেকে ইচ্ছে সেফ জোনে থেকে চালাচ্ছে প্রপাগান্ডা। ভারত, সেখানে পলাতক শেখ হাসিনা এবং আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাওয়া হাসিনার ল্যাসপেন্সারদের এখনকার প্রধান নির্ভরতাই হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। অন্তর্বর্তী সরকারকে নাস্তানাবুদ করার সস্তা অস্ত্র অনিয়ন্ত্রিত সোশ্যাল মিডিয়া। গুজবপ্রিয় প্রান্তিক মানুষও এসব ভালো ‘খায়’। অজোপাড়া-গায়ের চায়ের দোকানে রাজা-উজির নিধনে ব্যস্ত, অলস সময়ে জাবর কাটার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে ফেসবুক-ইউটিউব। একই বিষয় কে কতটা চটকদার করে উপস্থাপন করতে পেরেছেÑ এ নিয়ে চলে গবেষণা। ঘটনার কেন্দ্রস্থল থেকে যোজন যোজন দূরত্বে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় সওয়ার হয়ে ‘সবজান্তা’ হওয়ার চেষ্টা করেন অনেকে। ভার্চুয়াল কনটেন্ট ক্রিয়েটররাও তাদের ব্যক্তি লাভালাভের ক্ষুদ্র স্বার্থে এক চিমটি অর্ধসত্যের সঙ্গে চার মুঠো মিথ্যার গুড় মিশিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে বাজারে। নিমিষেই লাখ লাখ ‘ভিউ’, ৪০-৫০ ‘কে’ শেয়ার। এসব ‘ভিউ-ব্যবসায়ী’দের নির্মম শিকার হচ্ছে দেশ-জাতি-রাষ্ট্র। অজানার গন্তব্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে জাতির ভবিষ্যৎ। সম্ভব-অসম্ভব কিংবা যুক্তির কোনো ধারই-ধারা হচ্ছে না। আইন-কানুন, বিধি-নিষেধ, সংবিধান, প্রচলিত রীতি-নীতি, রাষ্ট্রাচার, শিষ্টাচার কিছুই যেন বিবেচ্য নয়। নিছক ভিউ কারবারি করে টু-পাইস কামানোটাই এদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।
কথাগুলোর প্রাসঙ্গিকতা এলো গত দু-তিন দিনে দেশের সোশ্যাল মিডিয়ার কা--কারখানা দেখে। বিষয়গুলো ছিল মামুলি। কোনোটা বা অত্যন্ত যৌক্তিক এবং স্বাভাবিক। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ৩১ আগস্ট গুলশানের বাসভবনে সাক্ষাত করলেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। সাংবিধানিক পরামর্শ, জাতির স্বার্থে, রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে কিংবা সৌজন্যমূলক দেখা-সাক্ষাৎ হতেই পারে। কিন্তু এটিকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়া যে মহড়া দিলো তা অত্যন্ত ভয়াবহ। কেউ রাষ্ট্রক্ষমতায় সামরিক হস্তক্ষেপের ধুয়া তুললেন! কেউ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে বিদায় করে দিলেন ! কেউ ‘ওয়ান-ইলেভেন’ ধাচের সরকার বসিয়ে দিলেন! মনের মাধুরি মিশিয়ে ইউটিউবার/ সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সাররা যেমন খুশি ভাঙিয়ে খেলেন। পরদিন গতকালও (১, সেপ্টেম্বর সোমবার) ঘটল একই ঘটনা। সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সাক্ষাৎ করেছেন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে। পরে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে। সরকারিভাবে জানানো হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় সেনাপ্রধান প্রেসিডেন্ট ও প্রধান উপদেষ্টাকে তার সাম্প্রতিক চীন সফরের বিষয়ে অবহিত করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, গতকাল বেলা ১১টার দিকে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সেনাপ্রধান। রীতি অনুযায়ী, সেনাপ্রধান সরকারিভাবে বিদেশ সফরে গেলে ফেরার পর সে বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক প্রেসিডেন্টকে অবহিত করতে হয়। সাক্ষাৎকালে সেনাপ্রধান দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও তা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কেও প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেন বলেও জানায় সূত্রটি।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর দুপুর ১২টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গিয়ে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ওই বৈঠকেও সেনাপ্রধান তার চীন সফর সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
সেনাপ্রধান গত ২০ আগস্ট সরকারি সফরে চীনে যান। ২৮ আগস্ট পাঠানো আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২৭ আগস্ট রাতে সেনাপ্রধান দেশে ফেরেন। সফরকালে তিনি চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) স্থলবাহিনীর পলিটিক্যাল কমিশনার জেনারেল শেন হুইসহ উচ্চপদস্থ চীনা সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। আগের দিন (৩১ আগস্ট) সেনাপ্রধান বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে তার বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাতে আইনি ও অন্যান্য কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে জানানো হয়, অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন বলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আশ্বাস দিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এসে এ আশ্বাস দেন তিনি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বর্তমান পরিস্থিতিতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ধারাবাহিক অবদানের জন্য সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান।
কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার বদান্যতায় যা রটেছে তা অত্যন্ত কৌতুহলোদ্দীপক অথচ স্বাভাবিক। বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে এটি আইন ও সংবিধানকে সমুন্নত রেখে ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের সুষ্ঠু আয়োজনের প্রস্তুতিমূলক প্রয়াস মাত্র।
ঘটনাক্রম মিলিয়ে দেখলেও বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়া সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এ বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি চলছে। ২৭ আগস্ট ছিল রিভিউ পিটিশনের শুনানি। শুনানি চলাকালে রিটকারীদের আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ প্রশ্ন করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে দিলে এটি কবে থেকে কার্যকর হবে? এটি একটি যৌক্তিক প্রশ্ন। কারণ শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছিলেন জাতীয় সংসদে বিল আকারে উত্থাপন করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। যদিও এর আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্বলিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেছিলেন কিছু পর্যবেক্ষণসহ। কিন্তু জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বিলে খায়রুল হকের দেয়া রায়ের কোনো রেফারেন্স ছিল না। শেখ হাসিনা শুধু আদালতের ঘাড়ে বন্দুকটিই রেখেছিলেন। কিন্তু ফায়ার করেছিলেন তিনি নিজেই। এ কারণে কোনো কোনো সংবিধান বিশেষজ্ঞ মনে করেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ত্রয়োদশ সংশোধনী হুবহু পুনজ্জীবীত হবে না। এ জন্য প্রয়োজন জাতীয় সংসদ। এখন সংসদ নেই। তাই প্রশ্ন ওঠে, পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল আদেশের মাধ্যমে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা হুবহু (ত্রয়োদশ সংশোধনী) পুনজ্জীবীত হয় তাহলে সেটি কার্যকর হবে কবে থেকে?
অনেক বিশ্লেষকের মতে, সুপ্রিম কোর্ট হাসিনার ‘পঞ্চদশ সংশোধনী’ রায়ের মাধ্যমে বাতিল করার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) পুনর্জীবিত হয়ে গেছে। ফলে আপিল বিভাগের রায়ের সাথে সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনঃস্থাপিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারই ‘কেয়ারটেকার সরকার’ ঘোষণা দিয়ে ওই সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার দ্যর্থহীন ভাষায় সামনের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। জাতি এখন জাতীয় নির্বাচনের জন্য উন্মুখ। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এমন বাস্তবতায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র বিকল্প। সে ক্ষেত্রে সাংবিধানিক দিক-নির্দেশনা, আইনি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে। প্রধান উপদেষ্টার দফতরের একজন কর্মকর্তা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় এ প্রতিবেদককে জানান, দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ও শীর্ষ ব্যক্তিদের সৌজন্য সাক্ষাত ও বৈঠককে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়া যা প্রচার করছে তার সম্পূর্ণটাই গুজব। প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে ভাবছে না।
সংবিধান বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদের মতে, ত্রয়োদশ সংশোধনীতে উল্লেখিত ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হলে সেই সরকারের বৈশিষ্ট্যগুলো জানা উচিত। কাদেরকে নিয়ে কী প্রক্রিয়ায় নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার গঠিত হবেÑ এটিও বোঝার বিষয়। কারণ ত্রয়োদশ সংশোধনীতে উল্লেখিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে : ১. প্রধান উপদেষ্টা ও অনধিক ১০ জন উপদেষ্টা নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। ২. (ক) মহামান্য প্রেসিডেন্ট সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। (খ) যদি উক্তরূপ বিচারপতিকে পাওয়া না যায় তবে তার অব্যবহিত পূর্বে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে নিয়োগ দেবেন। (গ) যদি তাকেও পাওয়া না যায় তবে আপিল বিভাগের সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে নিয়োগ দেবেন। (ঘ) যদি তাকেও পাওয়া না যায় তবে তার অব্যবহিত পূর্বে অবসরপ্রাপ্ত এমন বিচারপতিকে নিয়োগ দেবেন। (ঙ) যদি সেক্ষেত্রেও ব্যর্থ হয় অর্থাৎ তাকে পাওয়া না যায় তবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে কোনো উপযুক্ত নাগরিককে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। (চ) যদি উপরিউক্ত সবগুলো অপশন ব্যর্থ হয় অর্থাৎ প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ সম্ভব না হয় তবে প্রেসিডেন্ট নিজেই তার স্বীয় দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
৩. অন্য ১০ জন উপদেষ্টা সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য হবেন, কোনো দলের সদস্য হবেন না, আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না এবং ৭২ বছরের বেশি বয়ষ্ক হতে পারবেন না।
৪. প্রধান উপদেষ্টার সাথে পরামর্শ করে উপদেষ্টাদেরকে নিয়োগ দেবেন।
এ বৈশিষ্ট্যের সরকার গঠনের ক্ষেত্রে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারে বেশ কিছু স্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্যণীয় হবে। প্রথমত, উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হবে ১০ সদস্যের। এ হিসাবে বর্তমান সরকারের অনেক উপদেষ্টাই বাদ পড়বেন। সরকারের আকৃতি ছোট হবে। এতে নতুন নতুন মুখ অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রসঙ্গটিও রয়েছে। যেমনÑ ‘সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি’ হবেন ত্রয়োদশ সংশোধনীতে উল্লেøখিত ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’-এর প্রধান উপদেষ্টা। এ মুহূর্তে ‘সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি’ হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি পদত্যাগ করেছেন। তার কোনো গ্রহণযোগ্যতাই নেই। পক্ষান্তরে কোনো আস্থার সঙ্কট নেই বর্তমান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের ক্ষেত্রে। কিন্তু তিনি এখনো সার্ভিসে রয়েছেন। তার অবসরের বয়স ৬৭ পূর্ণ হবে চলতি বছর ২৮ ডিসেম্বর। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নির্বাচন নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে দায়িত্ব গ্রহণের ৯০ দিনের মধ্যে। সে হিসেবে নভেম্বরে গঠন করতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ হিসেবে ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ এ জন্য আপাতঃদৃষ্টিতে উপযুক্ত নন। সে ক্ষেত্রে যদি অবসরের বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে স্বেচ্ছায় অবসর নেন তাহলে তার নেতৃত্বেও গঠিত হতে পারে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’। এ ক্ষেত্রে ফ্যাকড়া হচ্ছে, ত্রয়োদশ সংশোধনীতে ‘সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির কথা উল্লেখ রয়েছে। ‘পদত্যাগকারী প্রধান বিচারপতি’ তত্ত্বাবধায়ক প্রধান হতে পারবেন কি না-স্পষ্ট করা হয়নি। এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নিতে পারেন। সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানে উল্লেখিত ‘অ্যাডভাইজারি জুরিসডিকশন’ এ থেকে এ বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেন। প্রেসিডেন্টের প্রত্যাশাসাপেক্ষে যেমনটি নেয়া হয়েছিল গত বছর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ গঠনের ক্ষেত্রে। অভিন্ন পন্থায় আইনি বৈধতা নিয়েই বর্তমান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ সংবিধান স্বীকৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন। যদি এতে তার সম্মতি থাকে।
এদিকে সংশ্লিষ্টসূত্রগুলো বলছে, এমন একটি সম্ভাব্য প্রস্তাবনা অতি সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি বরাবর পেশ করা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সময় চেয়েছেন বলে জানা গেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও সংবিধান স্বীকৃত ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’-এর প্রধান উপদেষ্টা থাকতে পারেন। এমন বিধান বাৎলানো আছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ২ এর (ঙ) তে। বলা হয়েছে, ‘যদি সেক্ষেত্রেও ব্যর্থ হয় অর্থাৎ তাকে পাওয়া না যায় তবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে কোনো উপযুক্ত নাগরিককে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। এই ক্রাইটেরিয়ায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে থাকতে পারেন।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট জামিল আক্তারের মতে, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ-বৈঠক, তার সঙ্গে সেনা প্রধানের সাক্ষাৎ, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ, কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকÑ এসব কিছুই ত্রয়োদশ নির্বাচন অবাধ,সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার প্রয়াসের অংশ মাত্র। এসব বৈঠক আসন্ন নির্বাচনের পথে একেকটি অগ্রযাত্রা। সংবিধানসম্মত, আইনসম্মত স্বাভাবিক বিষয়গুলোকেই রঙ চড়িয়ে হৃদয়গ্রাহী করে প্রচার করছে একশ্রেণির দায়িত্বহীন সোশ্যাল মিডিয়া। যা কেবল রাজনৈতিক বোধ-বিবেচনাহীন একটি জনগোষ্ঠীকেই বিনোদিত, আন্দোলিত, আতঙ্কিত কিংবা তাৎক্ষণিকভাবে বিভ্রান্ত, উত্তেজিত ও আক্রমণাত্মক করে তুলতে পারে। যা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এ শ্রেণিটি সহজেই রাজপথে নেমে আসতে পারে। সৃষ্টি করতে পারে নৈরাজ্য। দাবিহীন আন্দোলনের নামে পথ-ঘাট ব্লকেড করে সৃষ্টি করতে পারে বিশৃঙ্খলা। আর এ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ধারাবাহিক চেষ্টাটি এখন শুধু ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা, তার অনুগত বাহিনী কিংবা ভারতেরই নয়। এ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নির্বাচনকে বানচাল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত কয়েকটি রাজনৈতিক দলেরও। সাংবিধানিক এবং আইনি বিষয়গুলোকে সামনে না এনে স্বাভাবিক বিষয়গুলোতেও চাঞ্চল্য আরোপ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়ার জাতীয় স্বার্থবিরোধী অপকর্মটি নির্বাচনবিরোধী দলগুলোর দ্বারাই সংঘটিত হচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন সাবেক সরকারি এই আইন কর্মকর্তা।