Image description
 

দীর্ঘ সাড়ে সাত বছরের বেশি সময় পর লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে বড় ছেলে তারেক রহমানকে কাছে পেয়ে যেন মানসিক প্রশান্তি পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ঘটনাস্থলে থাকা একাধিক নেতা জানান, তখনই মনে হয়েছিল, দীর্ঘ সফরে একটুও ক্লান্ত নন সাবেক তিন বারের এই প্রধানমন্ত্রী।দুই পুত্রবধূ ছাড়াও তিন নাতনিকে একসঙ্গে দেখতে পেয়ে বেশ প্রফুল্ল দেখাচ্ছিল প্রায় ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে। দীর্ঘদিন ধরেই লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন তিনি।

লন্ডনে আসা তার একাধিক সফরসঙ্গী জানান, এখানে আসার এক সপ্তাহেই খালেদা জিয়া শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক সুস্থবোধ করছেন। হিথ্রো বিমানবন্দরে পরিবারের সদস্যদের দেখতে পেয়ে মুহূর্তেই মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠেন তিনি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্য পাচ্ছেন। নাতনিদের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই গল্পও করছেন তিনি। পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমানের রান্না করা খাবার তারেক রহমান নিজেই প্রতিদিন বহন করে নিয়ে আসছেন। কার্যত, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ডা. জুবাইদা রহমানই খালেদা জিয়ার সার্বিক বিষয় দেখভাল করছেন।  

যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত হাসপাতাল ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’ এ চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. প্যাট্রিক ক্যানেডির তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন। নেফরোলজি, হেপাটোলজি, গ্যাস্টোলজি ও লিভার ট্রান্সপ্রান্টসহ বিভিন্ন রোগের বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিনই তার শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন। কিছু কিছু পরীক্ষার বায়োকেমিক্যাল টেস্টও করানো হয়। বাংলাদেশে তার যে চিকিৎসা চলছিল সেটারও কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফিজিও থেরাপিস্টরা প্রতিদিনই কাজ করছেন।

এ দিকে প্রতিদিনই হাসপাতালের সামনে গণমাধ্যমের পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের ভিড় বাড়ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বা তার পরিবারের সদস্যরা আসার সঙ্গে সঙ্গেই গণমাধ্যমের মুখোমুখি হচ্ছেন। যদিও তারেক রহমান তার অসুস্থ মা খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া ছাড়া অন্য কিছুই গণমাধ্যমে কিছুই বলছেন না। ভিড় এড়াতে মাঝেমধ্যে তারেক রহমানকে হাসপাতালের পেছনের গেট দিয়েও প্রবেশ করতে দেখা যায়। বিএনপির পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন। যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদকেও তার সঙ্গে দেখা যায়। যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা কামাল আহমেদকেও দেখা যায় তারেক রহমানের পরিবারের সঙ্গে।  

এদিকে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে এসেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্র্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। তারাও খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে এসে দেখা করে সাংবাদিকদের জানান, তিনি আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন।  

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, লন্ডনের এই হাসপাতালে নতুন করে বেশ কিছু টেস্ট করানো হয়েছে। কিছু টেস্টের রেজাল্ট এসেছে। কিছু টেস্টের রেজাল্ট শুক্রবারের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে। পরীক্ষার ফলাফলের পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।  

দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়া দোয়া চেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালেক বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হাসিখুশি আছেন। তিনি হাঁটাচলা করছেন। তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে। আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।  

তিনি আরও জানান, সারা দিন তারেক রহমান হাসপাতালে ছিলেন। তার সঙ্গে স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, নাতনি ব্যারিস্টার জায়মা রহমানসহ পরিবারের সবাই হাসপাতালে আছেন। পরিবারের সঙ্গে খালেদা জিয়া খুবই ভালো সময় কাটছে।

এ দিকে যুক্তরাজ্য বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার যেসব রোগের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে, তার সবই এই হাসপাতালে চিকিৎসা করানো সম্ভব। তাকে যুক্তরাষ্ট্রে বা অন্য কোনো দেশে নেওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই।  

উন্নত চিকিৎসার জন্য ৮ জানুয়ারি সকালে খালেদা জিয়া লন্ডনে আসেন। ওই দিনই তাকে লন্ডনের বিশেষায়িত লন্ডন ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করা হয়।