Image description

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে দারিদ্রতার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা কঠিন। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, ভাতাভোগীদের ৫০ শতাংশই ভুতুড়ে বা রাজনৈতিক সুবিধাভোগী। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের স্থানীয় সরকার নেই। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এখন ডিজিটালাইজেশন হয়েছে। আমরা জাতীয় পর্যায়ে একটা রেজিস্ট্রার তৈরি করতে চাই।

সোমবার চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তিনদিনব্যাপী ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স অন সোশ্যাল প্রোটেকশন ২০২৫’ শীর্ষক সেমিনারের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

এছাড়া অতিথি ছিলেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. মনজুর হোসেন, জনপ্রশাসন সিনিয়র সচিব মোখলেস-উর রহমান, মন্ত্রী পরিষদের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব জাহেদা পারভীন, ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রতিনিধি স্টেফেন লিলার, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান মিচেল ক্রেৎজা, ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিনটন পোবকে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত সচিব মো. খালেদ হাসান।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা এ সময় বলেন, এখন সময় এসেছে সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির। এটি আমাদের থাকতে হবে। আমরা একদম গরীব দেশ না, আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে কোনো অজুহাত চলবে না।

সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তার মধ্যে স্কুলসেবা ও স্বাস্থ্যসেবা জড়িত। এটাই মৌলিক ন্যায়বিচার। যার জীবন ধারনেরই কোনো উপায় নেই, তার স্কুল ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কোনো লাভ নেই।

আমাদের শক্তিশালী রাজস্বনীতি নেই জানিয়ে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরো বলেন, আমাদের যথেষ্ট শক্তিশালী রাজস্বনীতি নেই। আমাদের সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নেই।

দারিদ্রতা একেকজনের একেক কারণে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশে প্রত্যেকের দারিদ্রতার কারণ একেক রকমের। কেউ অধিক সন্তান নেওয়ার কারণে দারিদ্র, কারো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অসুস্থ। এজন্য আমাদের সতর্ক হতে হবে প্রকল্প গ্রণের ক্ষেত্রে।

প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অতিরিক্ত সচিব মো. খালেদ হাসান বলেন, দেশের মিসিং দারিদ্রসীমার সামান্য ওপরে থাকা মানুষদের নিয়ে চিন্তাভাবনার সময় এসেছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কয়েকটি বাজেটের প্রবণতা এবং পরিবর্তনের তুলনা করেছে, যেখানে বেশিরভাগই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সাথে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষা ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে। ক্রমাগত দারিদ্র্য, বৈষম্য, জনসংখ্যাগত পরিবর্তন এবং জলবায়ু ঝুঁকির মুখে, সামাজিক সুরক্ষা মানব উন্নয়ন, স্থিতিস্থাপকতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ প্রদান করে। সরকার গত দশক ধরে এই ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট এই লক্ষ্যগুলোর প্রতি অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।

বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষার মধ্যে রয়েছে— সামাজিক সহায়তা, সামাজিক বীমা, শ্রমবাজার কর্মসূচি এবং একাধিক মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মাধ্যমে প্রদত্ত পরিষেবাসহ বিস্তৃত উদ্যোগ। এই কর্মসূচিগুলো বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শিশু, নিম্নআয়ের পরিবার এবং অর্থনৈতিক বা পরিবেশগত ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদেরসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে। বর্তমান পদ্ধতি জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল (এনএসএসএস) দ্বারা পরিচালিত, যা সুরক্ষার একটি জীবনচক্র-ভিত্তিক মডেলের রূপরেখা তৈরি করে এবং উন্নত বিতরণ প্রক্রিয়া এবং জবাবদিহিতা ব্যবস্থার উপর জোর দেয়।

এই বছরের জাতীয় বাজেটে সামাজিক সুরক্ষার জন্য মোট বরাদ্দ ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা (প্রায় ৯.৯৮ বিলিয়ন ডলার) অন্তর্ভুক্ত, যা মোট বাজেটের ১৪.৭৮ শতাংশ এবং জিডিপির প্রায় ১.৮৭ শতাংশ।

রূপান্তর গণনা করা হয়েছে ৫১ টাকা ১২২ (৯ জুলাই ২০২৫ তারিখের বিনিময় হার অনুসারে)। এই অব্যাহত অগ্রাধিকার দারিদ্র্য বিমোচন এবং খাদ্য নিরাপত্তা থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং লিঙ্গ সমতা পর্যন্ত বিস্তৃত উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সামাজিক সুরক্ষার গুরুত্বকে নির্দেশ করে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বেশ কিছু কৌশলগত ও কাঠামোগত উন্নয়নের জন্যও উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে রয়েছে— দক্ষতা ও সুসংগতি উন্নত করার জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির একত্রীকরণ, যা গত অর্থবছরে ১৪০ থেকে কমিয়ে এ বছর ৯৫ করা হয়েছে; বিতরণ ব্যবস্থার আরো ডিজিটাইজেশন, যেমন সরকার থেকে ব্যক্তি (জিটুপি) অর্থপ্রদানের সম্প্রসারিত ব্যবহার এবং গতিশীল একক রেজিস্ট্রি, এবং নগদ-ভিত্তিক সহায়তা এবং স্নাতকোত্তর পদ্ধতির দিকে অব্যাহত পরিবর্তন যা দক্ষতা উন্নয়ন এবং জীবিকা নির্বাহের প্রচারের সাথে আর্থিক সহায়তাকে একত্রিত করে।

এই প্রতিবেদনে এই উন্নয়নগুলো বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এটি অনুসন্ধান করে যে বর্তমান বাজেট কীভাবে (এনএসএসএস) দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সম্পদের কার্যকরী এবং জীবনচক্র বন্টন মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং মূল লক্ষ্য গোষ্ঠীগুলোর উপর এর প্রভাব পরীক্ষা করা হয়েছে। বিশ্লেষণে মুদ্রাস্ফীতির চাপ, নগর-গ্রামীণ বৈষম্য এবং অন্তর্ভুক্তি ত্রুটির প্রভাবও বিবেচনা করা হয়েছে, যা প্রোগ্রামের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে চলেছে।

এই নথির মাধ্যমে, এসএসপিএস বাংলাদেশের সামাজিক সুরক্ষা অর্থায়নের দৃশ্যপট সম্পর্কে আরো স্বচ্ছ, প্রমাণ-ভিত্তিক ধারণা তৈরিতে অবদান রাখার লক্ষ্যে কাজ করে। এখানে উপস্থাপিত অন্তর্দৃষ্টিগুলো ভবিষ্যতের নীতি প্রণয়ন, সম্পদ বরাদ্দ এবং কর্মসূচির নকশা সম্পর্কে অবহিত করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে, একই সাথে আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত এবং স্থিতিস্থাপক সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জাতীয় প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে।