
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার কি পথ হারিয়েছে? সংখ্যালঘুসহ জনগণের আকাঙ্ক্ষা নিশ্চিত করতে পারছে না। সংস্কারের জন্য গঠিত বিভিন্ন কমিটির সুপারিশের প্রতিফলন জনগণের সামনে আসছে না। পেছনে বড় কায়েমি স্বার্থ লুকায়িত ছিল। এমন পরিস্থিতিতে কিছু করতে হবে। যেহেতু সংস্কারের যুক্ত ছিলাম বড় প্রত্যাশা নিয়ে। কিন্তু চলমান ঝড়ে অনেক কিছু লন্ডভন্ড। বড় সম্পদ রক্ষায় প্রাধিকার দিতে হবে। অধিকার, সমতা, শিক্ষা, জ্ঞান রক্ষার গুরুত্ব দিতে হবে।’
সংস্কারের জন্য গঠিত বিভিন্ন কমিটির সুপারিশের প্রতিফলন জনগণের সামনে আসছে না বলে দাবি করেছেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
আজ সোমবার গুলশানের লেকশোর হোটেলে সিপিডির আয়োজনে বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচ সূচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘মারাত্মক এক ঝড় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এ ঝড়ে অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ সবকিছু পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী চেতনার প্রত্যাশা ধরে রাখা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এটা আগামীতে ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। পালা বদলের পর সংস্কারে আমরা অনেকে যুক্ত হয়েছি। কিন্তু সংস্কার প্রক্রিয়ার উদ্যোগ যেন স্তিমিত হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে সিপিডির বিশেষ ফেলো ও বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচের কোর সদস্য অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। শুরুতে অনেক কিছু বলা হয়, কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হয় কম। মূলত জবাবদিহির অভাবে বাস্তবায়নের হার কম। নতুন প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ ওয়াচ তা নিয়ে কাজ করবে। জনগণের মুখোমুখি করবে রাজনৈতিক দলের প্রতিশ্রুতি। এতে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।’
বাংলাদেশ রিফর্মের সদস্য এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘টাস্কফোর্স ও শ্বেতপত্রে অনেক সুপারিশ এসেছে। এসব নিয়ে আলোচনা চলমান রাখতে হবে। সংস্কার নিয়ে কথা বলতে হবে। সংস্কার শুধু জিইয়ে রাখা হয়েছে। এটার বাস্তবায়ন নির্ভর করবে সরকার কতটা চায় তার ওপর।’
সেলিম রায়হান আরও বলেন, ‘আমলা, ব্যবসায়ী ও কিছু শক্তি সংস্কারে বাধা দিতে চায়। এসব আগেও ছিল। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের সরকারকে অনেক কিছু করতে হবে। রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করতে হবে। সেটার জন্য জবাবদিহি দরকার।’
বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচের আহ্বায়ক ও সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘এক সময় গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পরিবেশ না থাকায় অনেক সুযোগ ছিল না। এখন তা হয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন খুবই কম। রাজনীতিবিদদের ইশতেহারে সমাজে প্রতিফলন কম। সে জন্য জনগণের অধিকার নিয়ে ইশতেহার প্রস্তুত করা হবে। যা দিয়ে রাজনীতিবিদদের ইশতেহার মাপা হবে। তাদের গ্যাপ তুলে ধরা হবে।’
তৌফিকুল ইসলাম খান আরও বলেন, ‘নতুন সংস্কারের ১০০ দিনের কর্মসূচি দরকার হবে। সেখানে সরকারের আয়, ব্যয়, ব্যাংকিং, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, কৃষি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, নারীর সমতাসহ ১৫টি বিশেষ সুপারিশ প্রাধিকার পাবে। জনগণের সক্ষমতা, উৎপাদশীলতা ও বৈষম্যবিরোধী আকাঙ্ক্ষা যেন ফুটে ওঠে তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পুরো সংস্কারের চাহিদা তুলে ধরা হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন—ফরেন চেম্বারের সভাপতি রুবাবা দৌলা, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্যপরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ, সুজন সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার প্রমুখ।