
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১০৪ বছর আগে, ১৯২১ সালে। আর বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম ভোট হয় ১৯২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে। সেই থেকে ১০০ বছরে ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র ৩৭ বার। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৫৪ বছরে নির্বাচন হয়েছে সবচেয়ে কম, মাত্র সাতবার।
বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদগুলো গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক, আবৃত্তি, রচনা ও অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন এবং নানা ধরনের প্রকাশনা বের করার কাজই বেশি করেছে। ষাটের দশকেও এসব হয়েছে। তবে ষাটের দশকের শুরুতে শিক্ষা আন্দোলন, আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে ডাকসুর ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের রাজনৈতিক ভূমিকাই বড় হয়ে দেখা দেয়।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ছাত্ররাজনীতিতে দলীয় প্রভাব বাড়তে থাকে। ১৯৯১ সালে নতুন করে গণতন্ত্রে ফেরার পর ডাকসুর নির্বাচনই বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় তিন দশক পর সর্বশেষ ২০১৯ সালে এক দফা ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন হয়েছিল। তবে বিতর্কিত সেই নির্বাচনের পর ডাকসু ও হল সংসদ কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখতে পারেনি।
সবাই যাতে প্রথম বর্ষে এসেই হলে সিট পান, গণরুম-গেস্টরুম যাতে আর ফিরে না আসে, ক্যানটিন-ক্যাফেটেরিয়াগুলোতে যেন সুলভ মূল্যে ভালো খাবার পাওয়া যায়, শিক্ষার পরিবেশটা যাতে ঠিক থাকে—এসব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবেন, এমন প্রতিনিধিই আমরা চাইঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ সজীব

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবার ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে। ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনে কয়েকটি বড় প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সেগুলো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি আবার দলীয় প্রভাবাধীন ছাত্ররাজনীতির কবলে পড়বে, দলগুলো কি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের দখলে চলে যাবে, শিক্ষার্থীদের কি আবার গণরুমে থাকবে হবে, জোর করে মিছিলে আনা হবে, আগের মতো নির্যাতন ও নিপীড়ন চলবে?
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা বলছেন, হল দখল ও নির্যাতনের সংস্কৃতি এবারের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের একটি বড় ইস্যু বা বিষয়। যাঁরা এর বিরোধিতায় ছিলেন, তাঁদের ভোটে ভালো করার সম্ভাবনা বেশি। এ কারণে দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছাত্রসংগঠনগুলোও এবার তুলনামূলক ভালো পরিচিত ও শিক্ষার্থী-অধিকারের পক্ষে সরব থাকা নেতাদের প্রার্থী করেছে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছাত্রসংগঠনের বাইরেও শক্তিশালী প্যানেল ও প্রার্থী দেখা যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা চান, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে দখল সংস্কৃতি, গণরুম, গেস্টরুম (অতিথিকক্ষে আদবকায়দা শেখানোর নামে নির্যাতন), জোর করে মিছিলে নেওয়ার প্রবণতা আর ফিরে না আসুক; বরং তাঁরা চান, ডাকসু ও হল সংসদ নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলুক। ক্যাম্পাসে শান্তি, শৃঙ্খলা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকুক। আয়োজন করা হোক বক্তৃতা, বিতর্ক, আবৃত্তি, রচনা ও অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি আবার দলীয় প্রভাবাধীন ছাত্ররাজনীতির কবলে পড়বে, দলগুলো কি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের দখলে চলে যাবে, শিক্ষার্থীদের কি আবার গণরুমে থাকবে হবে, জোর করে মিছিলে আনা হবে, আগের মতো নির্যাতন ও নিপীড়ন চলবে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ সজীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবাই যাতে প্রথম বর্ষে এসেই হলে সিট পান, গণরুম-গেস্টরুম যাতে আর ফিরে না আসে, ক্যানটিন-ক্যাফেটেরিয়াগুলোতে যেন সুলভ মূল্যে ভালো খাবার পাওয়া যায়, শিক্ষার পরিবেশটা যাতে ঠিক থাকে—এসব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবেন, এমন প্রতিনিধিই আমরা চাই।’ তিনি বলেন, নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে প্রার্থীদের নিজেদের সংগঠনের বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি রক্ষার ব্যাপার থাকবে। ফলে শিক্ষার্থীদের প্রতি তাঁদের আচরণে পরিবর্তন আসবে।