Image description

বান্দরবান জেলায় সংসদীয় আসন একটিই। সাতটি উপজেলা, দুটি পৌরসভা ও ৩৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা শুরু হয়েছে। পাহাড়ে চলছে ভোট সামনে রেখে বিভিন্নমুখী কর্মসূচির প্রতিযোগিতা।

বড় দল বিএনপি ছাড়াও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দলের তৎপরতা শুরু হয়েছে।

শহর থেকে পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও চলছে গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ, ঘরোয়া সভা, আলোচনাসভা, উঠান বৈঠক। চলছে সদস্য ফরম পূরণের মাধ্যমে দলে অন্তর্ভুক্তিকরণ ও স্থানীয় ভোটারদের কাছে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পরিচিতি তুলে ধরার কর্মসূচি। স্থানীয়রা বলছেন, ভোটের আগে জেলার পাহাড়ে পাহাড়ে চলছে কর্মসূচির প্রতিযোগিতা। মাঠ হচ্ছে সরগরম।

জানা গেছে, বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক। তবে এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চূড়ান্ত করেছে প্রার্থী। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি থেকেও রয়েছেন একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী। 

বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় আছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য রাজপুত্র সাচিং প্রু জেরী।

তবে দলের সাবেক সভাপতি মাম্যাচিং মার্মা দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে দলের একাংশের দাবি। দলের একটি অংশ প্রার্থী হতে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও সাবেক পৌর মেয়র মো. জাবেদ রেজাকে অনুরোধ করছে। তবে এই বিএনপি নেতা জানান, বান্দরবান বিএনপির দুই জ্যেষ্ঠ নেতা সাচিং প্রু জেরী ও মাম্যাচিং মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ক্ষেত্রে তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য সাচিং প্রু জেরী বলেন, আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর তৃণমূলে দল গোছানোর কাজ চলছে।
 এরই মধ্যে ৭০ হাজারের বেশি সদস্য সংগ্রহ করা হয়েছে এবং নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তা লাখ ছাড়িয়ে যাবে। দলীয় সিদ্ধান্তে আমি ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। ভবিষ্যতে নির্বাচন করতে চাই।’

এদিকে এরই মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে দলের জেলা নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে। তিনি গণসংযোগ, সভাসহ নানা কর্মসূচির পাশাপাশি নতুন সদস্য সংগ্রহ, ঝিমিয়ে পড়া কমিটি সক্রিয় করা, পুরনো কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম বলেন, ‘আমি আগামী নির্বাচনে জয় নিয়ে আশাবাদী।’

এ আসনে আছে ১১টি পাহাড়ি ও তিনটি বাঙালি জনগোষ্ঠী। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন এখনো রাজা, মৌজাপ্রধান (হেডম্যান), পাড়াপ্রধান (কারবারি) ও গোত্রপ্রধানদের মনোভাব ও দিকনির্দেশনার ওপর নির্ভরশীল। ভোটে প্রভাব ফেলে আঞ্চলিক একাধিক সংগঠনের সিদ্ধান্ত। ফলে এখানকার রাজনীতি ও নির্বাচনের সমীকরণও খুবই জটিল।

বান্দরবানে জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) পক্ষে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একটি অংশের জনসমর্থন রয়েছে। রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচিসহ দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলোয় এ সংগঠনের বিশেষ প্রভাব রয়েছে। জেএসএস নির্বাচনে অংশ নিলে এসব এলাকার পাহাড়ি ভোটারদের বেশ কিছু ভোট তাদের প্রার্থীর পক্ষে যাবে। জানা গেছে, নির্বাচনে অংশ নিয়ে শক্তির জানান দিতে চাইছে জেএসএসও। 

জেএসএসের কেন্দ্রীয় নেতা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কে এস মং বলেন, জেএসএস নির্বাচনমুখী দল। প্রতিটি নির্বাচনে দলটি অংশ নিয়েছে। সামনের নির্বাচনেও জেএসএস অংশ নেবে। তিনি জানান, দল তাঁকে প্রার্থী করলে ভোটের মাঠে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম বলেন, ‘বিভিন্ন হিসাব নিকাশ করেই দল আমাকে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। বর্তমানে দল গোছানো, গণসংযোগসহ নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডগুলো চালিয়ে যাচ্ছি।’

এনসিপির নেতারা জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠন, সদস্য সংগ্রহ ও দল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এনসিপি বান্দরবান জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী মো. শহীদুর রহমান সোহেল বলেন, ‘সব কমিটি গঠন শেষে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইব। কেন্দ্র চাইলে প্রার্থী হব।’