
আসন্ন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সাইবার হামলার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। তাদের ধারণা, অপশক্তি সাইবার হামলার পাশাপাশি নাশকতা চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে। এই আশঙ্কার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। রোববার আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, পূজার নিরাপত্তায় জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটিকে এখন থেকেই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। আনসার সদস্যরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অন্যান্য ইউনিটকেও প্রস্তুত থাকতে হবে। গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে যা যা করার সবই করতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন থেকেই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’
সূত্র আরও জানায়, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনায় পুলিশের কোনো কোনো সদস্যের আচরণ দায়িত্বহীন ছিল বলেও সভায় মতামত দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো পুলিশ সদস্য কেন দায়িত্বহীন আচরণ করেছেন তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এছাড়া দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, কর্মক্ষেত্রে পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন, জুলাই আন্দোলনের মামলাগুলোর তদন্তের অগ্রগতি, সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যকলাপ, মাদক সমস্যা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত গুজবসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে কোর কমিটির আলোচনায়।
সভা সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে অপশক্তি তৎপর আছে বলে আলোচনায় উঠে এসেছে। একেক রাজনৈতিক দলের একেক ধরনের ভূমিকার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকলাপ কঠোরভাবে মনিটরিং করে নিরপেক্ষ প্রতিবেদন দিতে গোয়েন্দাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে পুলিশকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে বলা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় যেসব মামলা হয়েছে সেসবের তদন্ত দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
কোর কমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আন্দোলন তথা প্রতিবাদ বিক্ষোভের নামে এ পর্যন্ত ১৬০৪টি সড়ক অবরোধ হয়েছে। ১২৩টি সংগঠন এ অবরোধ করেছে। এর ফলে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়ে জনদুর্ভোগ নেমে আসে। তিনি বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এর আগেও অনুরোধ করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা রাজধানীর সুনির্দিষ্ট জায়গা, যেখানে মাঠ রয়েছে সেখানে এসব সমাবেশ বা আন্দোলন করার, যাতে জনদুর্ভোগ না হয়।
উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও নিরাপদ হবে-তা নির্ভর করে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচনে নিরাপত্তা প্রদান ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাবে। এ ক্ষেত্রে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছি। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জনগণের অবাধ ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এটি রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে। সবার সহযোগিতায় বর্তমান সরকার একটি অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন উপহার দিতে পারবে বলে আশা করছি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু জাতির বৃহত্তর স্বার্থে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে সব রাজনৈতিক দলকে ক্ষুদ্র ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থকে পরিত্যাগ করে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যে ফাটল ধরলে এর মধ্যে ফ্যাসিস্টের দোসররা ঢুকে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, আইজিপি বাহারুল আলমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।