
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপি পুরোপুরি প্রস্তুত। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন বিলম্বে একটি চিহ্নিত মহল সমস্যা সৃষ্টি করছে। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন নিয়ে তিনি আশাবাদী। বলেন, একমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়ে দেশে স্থিতিশীলতা সম্ভব। আওয়ামী লীগের ফিরে আসার সুযোগ নেই বলেও মনে করেন এই বর্ষীয়ান নেতা। কালবেলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে দেশের চলমান পরিস্থিতি, সংসদ নির্বাচন, জুলাই সনদ, বিচার, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরাসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কালবেলার সিনিয়র রিপোর্টার শফিকুল ইসলাম
আপনি কেমন আছেন?
মির্জা ফখরুল: আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।
দীর্ঘদিনের রাজনীতিক হিসেবে দেশের চলমান পরিস্থিতি কীভাবে দেখছেন?
মির্জা ফখরুল: এটা খুবই উদ্বেগজনক। আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর একটা ফ্যাসিস্ট শাসনের পর মুক্তি ও সুযোগ পেয়েছিলাম যে, রাষ্ট্রকে একটি গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা এবং বাংলাদেশকে নতুন করে নির্মাণ করার। বাংলাদেশি জাতি নির্মাণ করার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছুদিন ধরে আমরা লক্ষ্য করছি যে, একটা চিহ্নিত মহল অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার জন্য কাজ করছে। যার পরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। লক্ষ্য করে দেখবেন, প্রফেশনাল কিছু সংগঠন একই সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংগঠন বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমে রাস্তাঘাট বন্ধ করছে, অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। আমি মনে করি, এটা একটা ইন্টেরিম বা মধ্যবর্তী সরকার। এর মূল দায়িত্ব হচ্ছে একটা সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর শাসন করার সুযোগ সৃষ্টি করা। কিন্তু এই জায়গায় দীর্ঘ সময় নেওয়ার কারণে সমস্যাটা বেড়েছে। তবে একটা ভালো কাজ হয়েছে যে, আমরা যে কথাগুলো আগে বলেছিলাম, সংস্কারের কথা। আমরা ২০১৬ সালে বলেছিলাম, ২০২২ সালেও বলেছি। সেই ব্যাপারে তারা উদ্যোগ নিয়েছে। তারা ছয়টি কমিশন গঠন করে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা কমপ্লিট করেছে।
তিনি বলেন, কিছু কিছু বিষয়ে সমস্যা আছে, কিছু কিছু বিষয়ে মতের মিল হয়নি, সেগুলো আগামী পার্লামেন্টে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এখন সবচেয়ে বড় যেটি প্রয়োজন, তা হলো দেশে একটা স্থিতিশীলতা। একই সঙ্গে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া। সেই জায়গাগুলো নিয়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এ কারণেই আমরা উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে দু-এক দিন ধরে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না।
নুরুল হক নুরের ওপর হামলাসহ সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে কীভাবে দেখেন?
মির্জা ফখরুল: গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর আক্রমণের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। যেই করে থাকুক, এটার গভীরভাবে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। তবে আমি খুশি হয়েছি যে, সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে। খুবই ভালো উদ্যোগ। এটা আমরা জানতে চাই। পাশাপাশি নুরুল হক নুর দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক এই কামনা করি। কারণ, হঠাৎ করেই একটা ঘটনা ঘটবে যার একটা রাজনৈতিক প্রভাব আছে। প্রকৃত ঘটনা কী জানা দরকার। তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে গুজব শুনতে পাচ্ছি যে, দেশে নাশকতা হবে। নির্বাচন ব্যাহত করার জন্য অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। এটা কোনোমতেই হতে দেওয়া যাবে না। দেশের গণতন্ত্র যেন আবারও বিপন্ন না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার উদাত্ত আহ্বান জানাব।
কালবেলা: জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। কী বলবেন?
মির্জা ফখরুল: প্রথম থেকেই বলছি যে, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই। কারণ এ বিষয়ে সিদ্ধান্তটা নেবে জনগণ। তার অর্থ এই নয় যে, যদি কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হওয়ার যোগ্য হয়; কিন্তু তাকে নিষিদ্ধ করা যাবে না, কিন্তু সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ ও সরকার। দেশে আইন আছে। তারা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেবে। এটা আমার কাছে মনে হয়—জাস্ট বাই এলিমিনেটিং এ পলিটিক্যাল পার্টি...। এভাবে আপনি কয়টি দলকে নিষিদ্ধ করবেন?
কালবেলা: ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন ও সংশয়ের আলোচনা উঠেছে, আপনি কী মনে করেন?
মির্জা ফখরুল: বাংলাদেশের মানুষের অবস্থা হচ্ছে—‘ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়’। বাংলাদেশে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে একটা নির্বাচনও হয়নি এবং মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তথাকথিত নির্বাচনের নাম ঘোষণা হয়েছে। সরকার (অন্তর্বর্তী) প্রথমদিকে পরিষ্কার করে কিছু বলেনি। কিন্তু এখন তারা অলরেডি নির্বাচনের ট্র্যাকে উঠে গেছে। কয়েকদিন আগে নির্বাচন কমিশন যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, সেটা অত্যন্ত আশার কথা। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার অত্যন্ত শক্ত এবং স্পষ্ট কথা যে, ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হবে। আমরা যতজন উপদেষ্টার সঙ্গে অফিসিয়ালি, আনঅফিসিয়ালি কথা বলেছি ও বলছি সবখানেই কিন্তু একই মতামত পাচ্ছি। তবে এটাকে ব্যাহত করা, নির্বাচনকে বিলম্ব করা, কিংবা আরও গভীর কোনো সমস্যা সৃষ্টি করা, এগুলো একটা মহল করছে। আমরা বুঝি যে তারা কারা? পতিত যে ফ্যাসিস্ট শক্তি তারা ভারতে বসে বিরাট ষড়যন্ত্র করছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা এখানে এগুলো করছে। অন্যদিকে জেনে না জেনে কয়েকটি রাজনৈতিক শক্তি কোলাবোরেট করছে। যেটা দেশের জন্য কোনোমতেই ভালো হচ্ছে না। আমি বিস্মিত হচ্ছি যে, কয়েকটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল তারা যখন এভাবে কথা বলে, তখন আমরা খুবই উদ্বিগ্ন না হয়ে থাকতে পারি না।
কালবেলা: বিগত সরকারের প্রশাসন দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে? কী বলবেন?
মির্জা ফখরুল: নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন নির্ভর করে গভর্ন্যান্সের ওপরে। যখন পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট থাকে তখন পলিটিক্যাল গভর্নমেন্টের ওপরে, যখন কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট থাকে তখন তাদের ওপরে। প্রশাসন তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। সুতরাং গভর্নমেন্ট যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, প্রশাসনকে সেভাবে চলতে হয়। এখন যাদের কথা বলা হচ্ছে, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর অবস্থা অনেকটা পাল্টে গেছে। নির্বাচনের মূল রেল যখন চলবে, তখন অবস্থা আরও পুরোপুরি পাল্টে যাবে। ফলে প্রশাসন নিয়ে খুব চিন্তিত নই।
কালবেলা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর বিএনপির আস্থা আছে?
মির্জা ফখরুল: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের আস্থা অতীতেও ছিল, এখনো আছে।
কালবেলা: প্রধান উপদেষ্টা চান ইতিহাসের সেরা নির্বাচন করবেন, সেক্ষেত্রে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা কতটুকু?
মির্জা ফখরুল: আমি মনে করি অবশ্যই আছে। নির্বাচন কমিশনে যিনি আছেন তিনি অত্যন্ত যোগ্য ও নিরপেক্ষ লোক। যারা কমিশনের সদস্য তারাও যোগ্য এবং নিরপেক্ষ লোক। কমিশনের সচিব যিনি আছেন তিনি পরীক্ষিত সক্ষম ও যোগ্য লোক। ফলে আমি অত্যন্ত আশাবাদী।
কালবেলা: বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কতদূর? কী প্রাধান্য পাবে?
মির্জা ফখরুল: নির্বাচনী ইশতেহারের গাইডলাইন তো হয়ে গেছে। রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা হলো আমাদের মূল। ওটাকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সাজিয়ে যেটা প্রয়োজন, সেটাকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। দরকার হলে আরও সমৃদ্ধ করা হবে।
কালবেলা: এবারের নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই কতদূর? তরুণদের প্রাধান্য কেমন হবে, প্রার্থীর বৈশিষ্ট্য কি লাগবে?
মির্জা ফখরুল: এখনো এ প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তবে অবশ্যই তরুণ প্রার্থী ও মাঠে সক্রিয় থাকা রাজনৈতিক নেতারা প্রাধান্য পাবেন। যারা যোগ্যতাসম্পন্ন, যিনি পার্লামেন্টে যাওয়ার উপযোগী, আইন প্রণয়ন ও দেশের সহযোগিতা করতে পারবেন, তাকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে।
কালবেলা: বিএনপি কি কোনো জোট করবে? করলে সেটি কাদের সঙ্গে?
মির্জা ফখরুল: এটা ডিপেন্ড করবে নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে। অর্থাৎ শিডিউল ঘোষণা করার আগে। যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছি, তাদের সঙ্গে নির্বাচনের পরে আমাদের একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং কমিটমেন্ট আছে। নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করলে তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা সরকার গঠন করব। নির্বাচনের আগে জোট করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
কালবেলা: জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কেমন?
মির্জা ফখরুল: রাজনীতিতে স্থায়ী মিত্র বা শত্রু বলতে কেউ নেই। এটা আসে-যায়। তবে কতগুলো মৌলিক বিষয় থাকে। সেগুলোতে অবশ্যই আমরা দেখব। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যেমন ছিল তেমনই আছে, কোনো শত্রুতা নেই। আমরা একসঙ্গেই কাজ করছি।
কালবেলা: নির্বাচন না হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলে বিএনপি কী করবে?
মির্জা ফখরুল: অবশ্যই না। আমরা এটা কিছুতেই মেনে নেব না।
কালবেলা: উগ্রপন্থা ও মৌলবাদের উত্থানের আশঙ্কা করছেন কেন?
মির্জা ফখরুল: এটা এজন্য যে, বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ হলো মুসলিম। তাদের নিয়েই বাংলাদেশ এতদিন কিন্তু একটি লিবারেল ডেমোক্রেসি হিসেবে চিন্তা করে এসেছে। কখনো প্রতিষ্ঠা করা গেছে, কখনো যায়নি। কিন্তু কখনো লিবারেল ডেমোক্রেসির বাইরে কেউ আসেনি। ইদানীং আমরা কিছু কিছু দেখতে পাই যে, জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার কথা বলা, অন্যের মতকে সহ্য না করা, মব তৈরি করে সেটাকে আক্রমণ করা, অফিস আক্রমণ করা, পুড়িয়ে দেওয়া, পত্রিকা অফিসে আক্রমণ করা, এই বিষয়গুলো তো কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সুতরাং লিবারেল ডেমোক্রেসি হচ্ছে একমাত্র উত্তর। আমরা সেখানেই দৃঢ়ভাবে অবস্থান করছি এবং সেটা বাস্তবায়নের কাজ করব।
কালবেলা: বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে নানা অভিযোগ উঠছে। আপনারা ব্যবস্থাও নিচ্ছেন। এসব বিষয় কি আগামী নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে?
মির্জা ফখরুল: এখন একটা বড় সমস্যা হলো বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) বলে একটা জিনিস বেশ কিছুদিন ধরে চলে আসছে। এটা একটা বড় ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বড় ভূমিকা রাখছে। সুতরাং এ অভিযোগগুলো কতটা খাঁটি? কতগুলো খাঁটি না, সেটা আমরা এখনো বের করতে পারছি না। যেগুলো আমরা দেখতে পাচ্ছি এবং প্রমাণ পাচ্ছি সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। সুতরাং ঢালাওভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযুক্ত করা একেবারেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যার উদ্দেশ্য হলো বিএনপিকে ম্যালাইন করা।
কালবেলা: পিআর পদ্ধতি নিয়ে আপনার মত কী?
মির্জা ফখরুল: প্রথম থেকেই পিআর পদ্ধতির ব্যাপারে আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আমরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে যেতে চাই না। প্রধান প্রকরণ হলো এটা আমাদের গণতন্ত্রের সঙ্গে খাপ খায় না। আমাদের দেশের প্রচলিত গণতন্ত্রের সঙ্গে পিআর পদ্ধতি যায় না। এই পদ্ধতিতে একজন নাগরিক সঠিক প্রতিনিধি বেছে নিতে পারে না। দল বেছে নিতে পারে; কিন্তু প্রার্থী বেছে নিতে পারে না। এ জায়গায় আমরা একমত নই। পিআর বিষয়ে নতুন কোনো এক্সপেরিমেন্ট এ মুহূর্তে করতে চাই না। এই জিনিসগুলো সামনে রেখেই আমরা পিআর পদ্ধতি কোনোমতেই মানতে রাজি নই। কারণ অভিজ্ঞতা বলছে, নেপালে ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন হচ্ছে। পাকিস্তানে প্রথমদিকে আপার হাউসে পিআর পদ্ধতি ছিল সেখানেও ৭-৮ বার সরকার বদল হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ পিআর পদ্ধতি ধারণ করতে পারে না। বরং যে সরকার নির্বাচিত হবে, তাকে শক্তভাবে চালানোর সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।
কালবেলা: ক্ষমতায় গেলে আপনাদের অগ্রাধিকার কী থাকবে?
মির্জা ফখরুল: আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের দলে অনেকেই আছেন, যারা সরকার পরিচালনায় যোগ্য। ক্ষমতায় গেলে আমাদের মূল অগ্রাধিকার থাকবে ৩১ দফা যেটা দিয়েছি, তার মধ্যে কর্মসংস্থান তৈরির জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অর্থাৎ কর্মসংস্থানের বিষয়গুলো শিল্প, কৃষি খাতে আরও বেশি করে বিনিয়োগ করা।
কালবেলা: ক্ষমতায় গেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভূমিকা কী থাকবে?
মির্জা ফখরুল: খালেদা জিয়ার ভূমিকা সবসময় যেমন ছিল, তেমনই থাকবে। তিনি হলেন পার্টির চেয়ারপারসন। তিনি অসুস্থ বলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তারেক রহমান যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। সুতরাং এখন যেমন আছে, তেমনই থাকবে। আমাদের কাউন্সিলে যদি পরিবর্তন না হয়, তখন পর্যন্ত এভাবেই চলবে?
কালবেলা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কি আগামীতে প্রধানমন্ত্রী?
মির্জা ফখরুল: অবশ্যই বলতে পারি যে, এটা নির্ভর করবে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) কী রকম অবস্থায় থাকেন, তার শারীরিক অবস্থা কেমন থাকে, তার ওপর। তারেক রহমান অবশ্যই হবেন।
কালবেলা: তারেক রহমান দেশে ফিরছেন না কেন?
মির্জা ফখরুল: উনার কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা আছে। সেগুলো শেষ করে চলে আসবেন। লিগ্যাল কিছু সমস্যা আছে, সেগুলো শেষ করে চলে আসবেন।
কালবেলা: ৪৭ বছরে এসে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা কেমন? সামনে চ্যালেঞ্জ কী?
মির্জা ফখরুল: বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা খুবই শক্তিশালী। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যোগ্য নেতৃত্বে সেটি আরও দৃঢ় হয়েছে। চ্যালেঞ্জ তো কিছু আছেই। তার মধ্যে এই যে মিডিয়ায় কথাগুলো বলা হচ্ছে, এটাকে নিবৃত্ত করা কিংবা সেখান থেকে বেরিয়ে আসা। বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে স্থিতিশীলতায় নিয়ে আসা। আমরা সরকারে যেতে পারলে অর্থনৈতিক অবস্থাকে স্টেবল করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ এবং স্টেকহোল্ডারস ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে। তাদের মতামতের ভিত্তিতেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
কালবেলা: পিআরসহ এনসিপির নানারকম দাবির বিষয়ে কী বলবেন?
মির্জা ফখরুল: এরা দাবি তুলতেই পারে। তবে তাদের অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। তাদের ভালো অ্যাম্বিশন আছে। আমরা আশা করি যে, এরা ভালো করবে। আমরা চাই তরুণরা ভালো করুক, নেতৃত্বে এগিয়ে আসুক। তবে আমরা সঠিক জানি না যে, তারা কী করতে চায়?
কালবেলা: আওয়ামী লীগ ভিন্ন নামে ফিরে আসার কথা শোনা যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিস্টের দোসররা বিএনপির আশ্রয় নিচ্ছে। কী বলবেন?
মির্জা ফখরুল: আমার মনে হয় দ্বিতীয় যে অভিযোগ দোসররা বিএনপিতে আসছে, একজনও খুঁজে পাবেন না। বরং দলগুলোতে পাবেন। যারা কথা বলছে, বেশি তাদের কাছে পাবেন। আওয়ামী লীগের ফিরে আসার বিষয়টি নির্ভর করছে তারা কতটুকু ভালোভাবে কাজ করবে ভবিষ্যতে। জনগণ তাদের গ্রহণ করবে কি না। সেটি ভবিষ্যতের ব্যাপার। তবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই।
কালবেলা: বহির্বিশ্বের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কেমন? সম্প্রতি তারেক রহমানের সঙ্গে কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা বৈঠক করেছেন। কী বলবেন?
মির্জা ফখরুল: বৈঠক তো করবেনই। তিনি হলেন পার্টির শীর্ষ নেতা। বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিঃসন্দেহে আগের চেয়ে ভালো। কারণ, আমরা এখন একটি গণতান্ত্রিক আবহের মধ্যে আছি। আগে তো সেটি ছিল না।
কালবেলা: বিএনপিরকে নিয়ে মানুষের আগ্রহ কেমন?
মির্জা ফখরুল: অবশ্যই আছে। জনগণ তো এখনো মনে করে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে।
কালবেলা: সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
মির্জা ফখরুল: কালবেলা কর্তৃপক্ষ ও তার পাঠকদেরও ধন্যবাদ।