Image description
চরম স্বৈরাচারী শাসন পাকাপোক্ত করে এবং সেই ক্ষমতার অপব্যাবহার করে একটানা ১৬ বছর বাংলাদেশের অসহায় মানুষকে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে শাসন ও শোষণ করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের বড়কন্যা শেখ হাসিনা। অন্যদিকে, বড় আপাকে সঙ্গে নিয়ে দেশের গরিব জনগণের টাকায় লুটপাটের গোপন সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন আওয়ামী লুটেরা সরকারে ‘ছোট আপা’ খ্যাত শেখ রেহেনা।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ বা সরকারের নেতৃত্বভাগে সরাসরি ছোট আপা দেখা না গেলেও বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে ‘বিশেষ ভূমিকা’ পালন করতেন তিনি। দলটির সদস্যরা তাকে ডাকেন ‘ছোট আপা’ বলে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা প্রভু দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সঙ্গে নেন ছোট বোনকেও।
 
গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত হওয়ার পর থেকে নানা সময় দলটির প্রধান হাসিনার বিরুদ্ধে বড় কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে গণমাধ্যমে। অভিযোগ মিলছে ‘ছোট আপা’ রেহানার বিরুদ্ধেও। যেন তেন জায়গার নয়, তার দুর্নীতির অভিযোগ সরাসরি দেশের অর্থনীতির ভিত্তিতে অর্থাৎ, ব্যাংকে। রেহানার কাছ থেকে রেহাই মিলত না কোনো ব্যাংকের।

বিগত ফ্যাসিবাদী শাসন আমলে ছোট আপার আলোচনা তেমন একটা সামনে আসেনি। কারণ রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ কোন পদে তাকে সরাসরি রাখা হয়নি। হয়ে থাকতে পারে নির্বিঘ্নে লুটপাট চালাতে হাসিনার এটা আরেকটা কৌশল। তাই আড়ালে থেকেই বাংলাদেশের গরিব জনগণের অর্থ সপরিবারে লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছেন ‘ছোট আপা’ রেহেনা।

পতনের পর হাসিনা ও রেহেনা পরিবারের দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য উন্মোচিত হতেই বাংলাদেশের জনগণের চোখ কপালে ওঠার দশা। ক্ষোভে তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া। এভাবেই জানিয়েছেন তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।

সর্বশেষ সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউক থেকে প্লট গ্রহণের অভিযোগে স্বৈরাচার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

পৃথক তিনটি মামলায় শেখ রেহানা, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিককে প্রধান আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি মামলায় ১২ থেকে ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এর আগে রোববার (১২ জানুয়ারি) ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় মামলা করে দুদক।

মূল অভিযোগ, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের বিশেষ ক্ষমতাবলে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দের অভিযোগ রয়েছে।

আরও জানা যায়, গত দেড় দশকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী ছিল শেখ পরিবার। কখনো বেনামি ঋণের নামে সরাসরি, আবার কখনো পরোক্ষভাবে সুবিধা নিয়েছে এ পরিবারটি। আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরাই এসব ঋণ নিয়েছেন, এবং ১৫-২০ শতাংশ বিভিন্ন পর্যায়ে ঘুষ হিসেবে দিয়েছেন। ঋণের নামে রাষ্ট্রের এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে লাখো কোটি টাকা বের করে নিয়েছেন তারা।

দুদক গত ২২ ডিসেম্বর হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ওঠা ৩০০ মিলিয়ন ডলার (৩০ হাজার কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। তার আগে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়।

অন্যদিকে, শেখ রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আনা দূর্নীতির অভিযোগটির সত্যতা প্রমাণ পেয়েছে ইংল্যান্ডের আদালত।

নেটিজেনরা বলছেন, পারিবারিক সূত্রে ও বৈধভাবে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা ও রেহেনা পরিবারের উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পদ না থাকলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১৬ বছরে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যায় তাদের। দেশের গরিব জনগণের অর্থ লুটপাট করে গড়ে তুলেছেন গোপন সাম্রাজ্য। যার দশ ভাগের আটভাগই করেছেন বিদেশে পাচার। দেশের চিন্তা পেছনে ফেলে ছেলেমেয়েদের প্রত্যেককেই বিদেশে সেটেল করেছেন মুজিবকন্যাদ্বয়।

নানা অপকর্ম ও দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে স্বাধীনতার পর থেকেই শেখ পরিবারের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের একটা বড় অংশের চাপা ক্ষোভ রয়েছে। সর্বশেষ হাসিনার পতনের পর তাদের দেশ বিধ্বংসী নানা দুর্নীতি ও অপকর্ম একের পর এক প্রকাশিত হলে সেই ক্ষোভ যেন এখন দাবানলে পরিণত হয়েছে।

সমালোচকরা বলছেন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে গুমখুন-লুটপাট-গণহত্যা করে দেশের মানুষকে অতিষ্ট করে তোলা দুই মুজিবকন্যার পরিবার বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি ও সার্বভৌমত্বকে কখনই ধারণ করেনি। সত্যিকারের দেশ প্রেমও কখনো তাদের মাঝে দেখা যায়নি। তাই ছেলেমেয়েদের বড় করেছেন বস্তাপঁচা বিদেশি সংস্কৃতিতে, যাদের বাংলাদেশের সমাজ ও মানুষের সাথে তেমন কোন সম্পর্ক নেই। ধর্ম থেকে শতভাগ বিচ্ছিন্ন হয়ে হাসিনাপুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় বিয়ে করেন একটি ইহুদি মেয়েকে। যা এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ কখনই ভালো চোখে দেখেনি।

ফেসবুকে শফিকুল ইসলাম চৌধুরী নামে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, শেখ রেহানা ছিলেন বোবা খুনি। উনার কাজই ছিলো টাকা পাচার করা।পরিবারের সবাইকে বাহিরে রেখে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে থাকেন রক্ত চুষতে।একটা ডাইনী পরিবার।

আলামিন হোসাইন লিখেছেন, ইংল্যান্ডের দুর্নীতি দমন বিষয়ক মন্ত্রী শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। ব্যাপারটা খুব একটা আয়রনিক না। সারা দুনিয়া থেকে লুটপাট করে বড়লোক হওয়া দেশের জন্য "নীতি" আর "দুর্নীতি"র ডোমেস্টিক আর ইন্টারন্যাশনাল সংজ্ঞা এক হওয়ার কথা না। বিদেশে চুরি ডাকাতি করলে নীতি, আর ইংল্যান্ডে করলে দুর্নীতি। আর বিদেশে চুরি করে ইংল্যান্ডে আনলে রেমিট্যান্স।

মঞ্জুর কাদের লিখেছেন, হাসিনার সঙ্গে আত্নীয় স্বজনরাও ফেঁসে যাচ্ছে...। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আত্মীয় স্বজনরা দুর্নীতি এবং টাকা পাচারের মামলায় দেশে এবং বিদেশে ফেঁসে যেতে পারে।এদের বিচারের আওতায় আনলে ভবিষ্যতে ক্ষমতাসীনরা দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা