Image description
 

আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীতে শিশু-তরুণের সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে। এই পরবর্তী প্রজন্ম ইতিমধ্যেই বড় হতে শুরু করেছে। তারা আদৌ আর আশ্রয়ক্যাম্পের জীবনে থাকতে চাইবে কিনা? বিদ্যমান ব্যবস্থাকে তারা মেনে নেবে কিনা সেটা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

রোহিঙ্গা সমস্যাকে বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে কঠিন সংকট বলে অভিহিত করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। এ সমস্যার সম্ভাব্য কোনো সমাধান আমাদের হাতে নেই বলেও অভিমত তার।

শুক্রবার (২৯ আগস্ট) হোটেল রূপসী বাংলার বলরুমে অনুষ্ঠিত দায়রা আয়োজিত ‘বেঙ্গল ডেল্টা কনফারেন্স-২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বরাজনীতির চিত্রপট খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। ভূরাজনৈতিক বিষয়গুলো আরও দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যেমন খুবই সিস্টেম্যাটিক পদ্ধতিতে হচ্ছে, তেমনি ইরানে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল আক্রমণের মতো হুটহাট যুদ্ধাবস্থারও সৃষ্টি হচ্ছে। এসবের পেছনে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার।

 

আবার, আমরা দেখলাম বেশ দীর্ঘ সময় ধরে ভারত-আমেরিকার মধ্যে একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, যেমন—কোয়াডের মতো সংগঠন; আবার বাণিজ্যে একটি সুবিধাজনক স্থিতিশীল সম্পর্ক। কিন্তু হঠাৎ করে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপে এখন ভারত-চীন একই ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছে। এর ফলে এশিয়ার আরও শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।

 

বিশ্বের পরবর্তী নেতৃত্ব এশিয়ার হাতে আসার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আগামী শতক হবে ‘এশিয়ান শতক’। এরপরের ক্ষমতা আফ্রিকার হাতে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল যদি তারা তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারত।

বর্তমানে বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে কঠিন সংকট হলো, রোহিঙ্গা সমস্যার সম্ভাব্য কোনো সমাধান আমাদের হাতে নেই। যখন আমাদের ভূমিতে রোহিঙ্গা প্রবেশ শুরু হলো তখন আমি নিজেও দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি জায়গায় ছিলাম। সবাই ভেবেছিল এটা সাময়িক সমস্যা, একমাত্র আমি বলেছিলাম—এটা দিন যাবে আর সংকট দীর্ঘায়িত হবে। কেননা, তাতমাদোর লক্ষ্যই হলো মিয়ানমারকে সম্পূর্ণভাবে রোহিঙ্গাশূন্য করে ফেলা, সেজন্য প্রত্যার্পণের সুযোগ কোথায়?

যত যাচ্ছে সমস্যা তত দীর্ঘায়িত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এখানে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীতে শিশু-তরুণের সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে। এই পরবর্তী প্রজন্ম ইতিমধ্যেই বড় হতে শুরু করেছে। তারা আদৌ আশ্রয়ক্যাম্পের জীবনে থাকতে চাইবে কি না? বিদ্যমান ব্যবস্থাকে তারা মেনে নেবে কি না, সেটা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ সমস্যা এতটাই প্রকট হতে যাচ্ছে, যা শুধু বাংলাদেশের নিরাপত্তায় নয়, পুরো আঞ্চলিক এমনকি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও একটি বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে বলে অভিমত তার।

তবে সব সংকটের পরেও বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদী হতে চান তিনি। বর্তমান তরুণ নেতৃত্ব ২০২৪ সালের জুলাইতে যেভাবে ফ্যাসিবাদকে হটিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে, তাতে ইতিবাচক হওয়াই যায় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।