Image description
ফেঁসে যাচ্ছেন রাজউকের ‘অথরাইজড অফিসার’

‘গাজীপুরে অনুমোদিত ভবন ঢাকায় নির্মাণ’ শীর্ষক শিরোনামে যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রকাশিত সংবাদের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটির গঠিত তদন্ত কমিটি। ফলে অনুমোদন প্রত্যাখ্যান ও ভবনগুলোর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন তারা।

সুপারিশে বলা হয়, নির্মাণ অনুমোদনের আবেদনগুলো বানোয়াট ভূমি ছাড়পত্রের মাধ্যমে অনুমোদন করা হয়েছে। কর্মকর্তারা যোগসাজশে বানোয়াট ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রে নির্মাণ অনুমোদনে সুপারিশ করেছেন। ফলে ইমারত পরিদর্শক, প্রধান ইমারত পরিদর্শক, সহকারী অথরাইজড অফিসার ও অথরাইজড অফিসারকে রাজউকের প্রশাসন শাখার মাধ্যমে বিভাগীয় তদন্তের আওতায় এনে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এদিকে রাজউকের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিজের বিরুদ্ধে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ অথরাইজড অফিসার প্রকৌশলী শেগুফতা শারমীন আশরাফ। রিপোর্ট পরিবর্তন না করলে তদন্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তার এমন একটি অডিও রেকর্ড রয়েছে এ প্রতিবেদকের হাতে।

২৩ মে ‘গাজীপুরে অনুমোদিত ভবন ঢাকায় নির্মাণ’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে যুগান্তর। ওই সংবাদে বলা হয়, ২০২৩ সালের গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকার বাসন মৌজায় বেজমেন্টসহ ১০ থেকে ১২টি বহুতলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এসব স্থাপনা নির্মাণ অনুমোদনপত্রে স্বাক্ষর করেন রাজউকের বর্তমান জোন-৩/২ এর অথরাইজড অফিসার প্রকৌশলী শেগুফতা শারমীন আশরাফ। কিন্তু সেখানে ওইসব স্থাপনার অস্তিত্ব নেই। মূলত নকশায় দাগ নম্বর ও মৌজার নাম পরিবর্তন করে স্থাপনাগুলো রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণ হচ্ছে।

সংবাদে আরও বলা হয়, আর্থিক লেনদেন ও অনৈতিক সুবিধা গ্রহণে গাজীপুরে অনুমোদিত এসব বহুতল ভবন ঢাকায় নির্মাণ করতে নকশায় মৌজা ও দাগ নম্বর পরিবর্তন করেন রাজউকের অথরাইজড অফিসার শেগুফতা শারমীনসহ বেশকিছু অসাধু কর্মকর্তা। মূল নকশা ও অনুমোদনপত্রে দুটি পৃথক মৌজা এবং দাগ নম্বর উল্লেখ থাকলেও তারা তাতে স্বাক্ষর করেন। মূলত পতিত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে শেগুফতা শারমিন বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেত্রী ছিলেন। দলীয় প্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন রাজউকের একটি সিন্ডিকেট।

তবে যুগান্তরে এমন সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। অনুমোদিত ভবনগুলো প্রচলিত আইন, বিধি ও নীতিমালা অনুযায়ী এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কিনা-তা তদন্ত করতে গঠন করা হয় ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। প্রকাশিত সংবাদের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ, অভিযোগের সত্যতা যাচাই ও অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন কমিটির সদস্যরা।

তাদের তদন্ত প্রতিবেদন বলা হয়, নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া, সহিদুর রহমান রাসেল, সোহরাব আহমেদ ও নাজমুল আলম ভূঞা গংদের নির্মাণ অনুমোদন আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্রের আবেদনগুলো বানোয়াট। আবেদনে গেট সিপি অপশনের মাধ্যমে দাখিল করা হয়নি। ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্রের কিউআর কোড স্ক্যান করে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মূলত ভূমি ছাড়পত্রে কিউআর কোড জালিয়াতি করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৪ টি নির্মাণ অনুমোদন আবেদনই বানোয়াট ভূমি ছাড়পত্রের মাধ্যমে অনুমোদন করা হয়েছে। নির্মাণ অনুমোদন আবেদনের নথির নোট অংশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিসি কমিটিতে নোট উপস্থাপনকারী কোনো ভূমি কর্মকর্তা ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উল্লেখ করেনি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে- বিসি কমিটিতে নথি উপস্থাপনের জন্য নথিতে নোট প্রদানকারী সব কর্মকর্তার যোগসাজশে বানোয়াট ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্রে নির্মাণ অনুমোদন প্রদানে সুপারিশ করেন।

তদন্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ শেগুফতা শারমিন : তদন্ত প্রতিবেদন নিজের বিরুদ্ধে যাওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ রাজউকের জোন-৩/২ এর অথরাইজড অফিসার প্রকৌশলী শেগুফতা শারমীন আশরাফ। রিপোর্ট পরিবর্তন না করা হলে তদন্ত কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন-তার এমন একটি অডিও রেকর্ড রয়েছে এ প্রতিবেদকের হাতে। ওই রেকর্ডে তদন্ত কমিটির এক কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে বলতে শোনা যায়, আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এখন দেখা যাক, আমিও তো ছেড়ে কথা বলব না। উনি (তদন্ত কর্মকর্তা) রিপোর্ট পরিবর্তন না করলে তার নামে আমি দুদকে অভিযোগ করব। যদিও রেকর্ডটি তার নয় বলে দাবি করেন শেগুফতা। এ সময় পরে কথা বলবেন বলে কল কেটে দেন তিনি।