
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ আশপাশের সরকারি হাসপাতালগুলোর বেসরকারি ব্যবসা দখলকে কেন্দ্র করে নাশকতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে বহিরাগতদের অস্ত্রের মহড়ায় সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সেদিনের হামলায় তিন জন আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় পৃথক পৃথক সাধারণ ডাইরি দায়ের করা হয়েছে স্থানীয় থানায়।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আওয়ামীলীগের শাসনামলের প্রায় পুরোটা সময় পঙ্গু, শিশু, চক্ষু, জাতীয় হৃদরোগ ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ক্যান্টিন, বিভিন্ন মালামাল সাপ্লাই আনসার নিয়োগ, কর্মচারি নিয়োগ, এ্যাম্বুলেন্স সেক্টর সবটাই নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামীলীগের দোসর প্রিন্স মহব্বত। প্রিন্স মহব্বত এ হাসপাতালগুলোতে গড়ে তুলেছিলেন বিশাল এক সন্ত্রাসী সি-িকেড। যে সি-িকেড এত দিনে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রিন্স মহব্বত গা ঢাকা দিলেও হাসপাতালগুলোতে এখনো অবস্থান করছে তার অনুসারি ক্যাডাররা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে হাসপাতালের পার্কিং উম্মুক্ত ছিলো। এরই মধ্যে গত ২৩ আগস্ট জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের বাইরে অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ডটি দলবল নিয়ে দখল করতে আসে আদাবর থানার ৩০ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের জাহিদ হোসেন জন। এ ঘটনায় জুয়েল রেদোয়ান, সাব্বির, মাসুমসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন।এ সময় একজনকে গলা ধাক্কা দিয়ে দূরে কোথাও নিয়ে যেতে দেখা যায়। এমন একটি ভিডিও ঘটনার পর থেকে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় প্রথমে শেরেবাংলানগর থানায় অভিযোগ করেন ভূক্তভোগী মাসুম। অভিযোগটি পরে জিডি আকারে গ্রহণ করা হয়।
অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড দখলে নেওয়ার ঘটনায় পৃথক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন কৃষকদল নেতা আব্দুল আলীম। জিডিতে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। তারাও বিএনপির সাথে জড়িত বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, গত ২৩ আগস্ট শনিবার রাতে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের বাইরে অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটায় জন।
মো. মাসুম নামে একজন প্রথমে অভিযোগ ও পরে তা জিডি হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। যেখানে সালামত উল্লাহ খান সজীব, ওমর ফারুক, রাসেদ ও মো. আব্দুল আলীমকে অভিযুক্ত করা হয়।
জিডিকারী মাসুম জানায়, তার সহকারী তিনজনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। তিন থেকে চারজনকে মারধর করে আহত করা হয়েছে। আহতরা সবাই শহিদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় রয়েছে।
এ ঘটনায় শেরে বাংলা নগর থানার শ্রমিক দলের ভুক্তভোগী হাসান জানান, এ এলাকায় আওয়ামী লীগের সরকার পতন আন্দোলনে আমাদের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। কিন্তু আমরা হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্স রাখলেই সেখানে চাঁদা নিতে আসে একটি গ্রুপ। আমরা চাঁদা দেব না জানালে জন ঘটনার দিন আমাদের মারধর করতে থাকে। এর প্রতিবাদ করতে গেলে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। তিনি আরো জানান, এ এলাকাটি এতদিন আওয়ামী লীগের নেতারা নিয়ন্ত্রণ করত। এখন তাদেরই দোসররা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। আনিতা নামে একটি কোম্পানি হাসপাতালের ক্যান্টিন এবং পার্কিং ইজারা নিয়ে ১৬ বছর চালিয়ে এসেছে। এই কোম্পানিটর মালিনায় রয়েছে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। আনিতার ইজারার মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে। জন জানিয়েছেন, এখানকার পার্কিং এবং কেন্টিন তাদের ইজারা নেওয়া।
অপরদিকে অপর জিডির বাদি আবদুল আলিমকে গতরাতে ইনকিলাব থেকে ফোন করা হয়। তবে ফোনটি রিসিভ করেন জুয়েল নামে তার এক আত্মীয়। হৃদরোগ হাসপাতালে ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জুয়েল বলেন, এ বষিয়ে তার জানা নেই। এমনকি আলীমের সেখানে কোনো ব্যবসাও নেই।
এদিকে জিডির তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলানগর থানার এসআই মিরাজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, আইনগতভাবে জিডির তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। তবে প্রাথমিক তদন্ত চলমান রয়েছে। ঘটনার দিন অস্ত্রের প্রদর্শন এবং ভাইরালকৃত ভিডিও প্রসঙ্গে মিরাজুল বলেন, তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।