
প্রচারের বদলে অন্যদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দিতে দিতে ছাত্রদল প্রার্থীদের দিনের বড় সময় কেটে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল প্যানেলের জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামীম।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের নানা অভিযোগে ব্যবস্থা নিতে বুধবার ডাকুস ভোটের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক জসীম উদ্দিনের কাছে চিঠি পৌঁছে দেওয়ার পর এ কথা বলেন তিনি।
ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী বলেন, “আমাদের দরকার ছিল প্রচার প্রচারণা করার, শিক্ষার্থীদের কাছে যাওয়ার কিন্তু দিনের বড় একটি অংশ কেটে যাচ্ছে এই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্টের অভিযোগ দিতে দিতে, কিন্তু কোনো প্রতিকার আমরা দেখছি না।”
ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, “চিঠিতে ভোটকেন্দ্র সংখ্যা কম হওয়ায় ভোটগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা, বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপ বন্ধ করা, কুয়েত মৈত্রী হলের রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং হিজাবোফোবিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে ছাত্রদল।”
অন্যদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে হামীম বলেন, “মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিন্ন ছাত্রসংগঠন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আচরণবিধি সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করেছে বিভিন্ন ব্যানার পোস্ট অফিস লাগিয়ে। ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কিন্তু আমরা সে ব্যানার দেখতে পাচ্ছি।”
আবিদ বলেন, “নির্বাচনে প্রায় ৪০ হাজার ভোটারের জন্য কেন্দ্র মাত্র আটটি। এখন ভোট দিতে হবে ৪১টি। প্রায় সাত পৃষ্ঠার ব্যালটে একটা ভোট দিতে প্রতিটা ভোটারের প্রায় আট থেকে ১০ মিনিট সময় লেগে যাবে।
“এটুকু লাগবে স্বাভাবিক, মানে বেশি লাগবে না। সেখানে ঘণ্টায় ঘণ্টায় মাত্র আটটা ভোট দেয়া যাবে। তো, যদি আপনি এখানে ২০টা বুথ হলে ঘণ্টায় ১৬০টা ভোট পড়বে। যদি সেখানে আপনি পুরো আট ঘণ্টার হিসাব করেন, ১ হাজার ২৮০টা ভোট পড়বে।”
তিনি বলেন, “গত ২০১৯ সালের নির্বাচনে যেটা হয়েছিল, যে প্যাক্ট লাইন, কৃত্রিম লাইন হয়েছিল, যার কারণে অনাবাসিক ছেলেমেয়েরা ভোট দিতে পারেনি। তো এইটা নিয়েও ছেলেদের মেয়েদের মধ্যে আতঙ্ক এবং শঙ্কা কাজ করছে, যে ৮-১০ মিনিট লাগবে ভোট দিতে। একটা ভোট কেন্দ্রে এত হাজার ভোটার, আরেকটা হচ্ছে যে আমরা কীভাবে ভোটটা দেব এত অল্প সময়ের মধ্যে।”
কুয়েত মৈত্রী হলের রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে আবিদ বলেন, “যেখানে যে কোনো পে-স্লিপ বা কাগজ থাকলে হলে গিয়ে প্রচার চালাতে পারার কথা, কিন্তু মৈত্রী হলের রিটার্নিং অফিসার রিফাত আরা প্রার্থীর বৈধ কাগজপত্র থাকার পরেও তাকে ডেকে এনে বলেছেন, আবাসিক কার্ড ছাড়া প্রচার চালাতে পারবে না।
“যেটা কোনোভাবে কাম্য নয়। শুরুতে এই অবস্থা হলে পরে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কী হবে, সেটা নিয়ে শঙ্কা থেকে যায়।”
তিনি বলেন, যেসব ফেইসবুক গ্রুপ বা পেইজ বন্ধের দাবি ছাত্রদল জানিয়ে আসছে, সেগুলোর বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিটিআরসিকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে সেই গ্রুপগুলোর নাম পরিবর্তন করা হয়ে গেছে।
“এই পেজগুলো অনবরত বিভিন্ন প্রার্থীদের সম্পর্কে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। যেটা কোনোভাবে নির্বাচনের মাঠকে শান্ত রাখার কোনো প্রমাণ মেলে না। একটা ঘৃণা চর্চা হচ্ছে, এই গ্রুপগুলো যতক্ষণ না পর্যন্ত বন্ধ হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সেইফ ফিল করছি না।”
‘হিজাবোফোবিয়া’ ছড়ানোর অভিযোগ তুলে আবিদ বলেন, “আমরা আশেপাশে দেখতে পাচ্ছি যে হিজাবোফোবিয়া। এবং নারী বিদ্বেষী একটা চক্র ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় হয়েছে, যেটা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের জন্য কোনভাবেই সুখকর নয়।
“এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা একটা সেইফ ক্যাম্পাসে রূপান্তরিত করতে চাই। এই ক্যাম্পাস তখনই সেইফ হবে, যখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা ইঞ্চি-মাটি আমাদের নারীদের জন্য, বোনদের জন্য নিরাপদ হবে। যেই মাটিতে নারীরা নিরাপদ থাকে, সেটাকেই নিরাপদ ক্যাম্পাস বলা হয়।”
তিনি বলেন, “আমরা এটাও জানিয়ে দিচ্ছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে, নারীদেরকে বিভিন্নভাবে যে হেনস্থা করা হয়, সেটা হিজাবকেন্দ্রিক হোক কিংবা ওয়েস্টার্ন কালচার যারা অনুসরণ করে তাদের ক্ষেত্রেই হোক, যে যেই মতের হোক, সে যেন তার অধিকার প্রপারলি রক্ষা করে নিরাপত্তা সহকারে চলতে পারে, সে পরিবেশ যেন বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি করে, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টা আমরা আহ্বান করেছি।
“কারণ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যে সন্ধ্যাকালীন আইন করেছে, যে নয়টার পরে, ১০টার পরে কোনো মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারবে না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা ডাকসু সে আইনকে কোনোভাবেই মেনে নেবে না।”
তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। এবার ডাকসুর ২৮ পদে প্রার্থী হয়েছে ৪৭১ জন। এর মধ্যে ভিপি পদে সর্বাধিক ৪৫ জন প্রার্থী হয়েছে।
হল সংসদগুলোতে ভোট হচ্ছে ভিপি-জিএসসহ ১৩ পদে। ছেলেদের ১৩টি ও মেয়েদের ৫টি হলে প্রার্থী হয়েছেন মোট ১০৩৫ জন।