Image description
 

প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চলতি মাসে চীন যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। সফরে আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক কৌশল, বাণিজ্য ভারসাম্য, বিনিয়োগ ও রোহিঙ্গা ইস্যু প্রাধান্য পাবে। পাশাপাশি গুরুত্ব পাবে আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষার কৌশলও।তবে এবারের চীন সফরকে দেশের কূটনীতিতে নতুন বার্তা হিসেবে উল্লেখ করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্দিষ্ট কোনো দেশের ওপর নির্ভরশীল নয়। প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরের জন্য চীনকে বাছাই করা দেশের কূটনীতির জন্য নতুন বার্তা।

৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জে নেমেছে ঢাকা। দেশের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার বিষয়কে সামনে রেখে এগোচ্ছে সরকার। জানা যায়, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র আমন্ত্রণে চার দিনের সরকারি সফরে আগামী ২০ জানুয়ারি বেইজিং যাচ্ছেন তৌহিদ হোসেন। সফরটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে ঢাকা। ২১ জানুয়ারি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ ছাড়া দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন তিনি।

সূত্র জানায়, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের করা ২৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এই অর্থপ্রবাহের গতি আনতে চায় সরকার। এ ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সুদের হার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসার পাশাপাশি ঋণের প্রতিশ্রুতি ফি দশমিক ৫ শতাংশ বাতিল চাওয়া হবে। এ ছাড়া বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। অন্যদিকে চীনের পক্ষ থেকে বৈঠকে বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগে (জিডিআই) বাংলাদেশকে যুক্ত করার বিষয়টি জোর দিয়ে তোলা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কৃষি, শিক্ষা, বাণিজ্য এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা দূর করা ও বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ও গুরুত্ব পাবে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে ঢাকা-দিল্লির মধ্যকার দূরত্বের কারণে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে তা চীনকে দিয়ে কাটাতে চায় বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক কৌশল। এর মধ্যে রোহিঙ্গা একটি বড় বিষয়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা চারদিক থেকে বেইজিংকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে, এই প্রেক্ষিতে দক্ষিণ এশিয়া চীনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে আসন্ন বৈঠকে বেইজিং থেকে কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাবে ঢাকা। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রয়োজন মেটাতে চীন প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফর দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য। সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, রাজনৈতিক সহযোগিতা, সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির যৌথ উদযাপন এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আমাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সরাসরি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র জড়িত। ফলে এবারের চীন সফরে জাতীয় স্বার্থ বেশি বিবেচিত হবে। তবে এই পররাষ্ট্রনীতিকে টিকিয়ে রাখতে রাজনৈতিক সরকারগুলো কতটুকু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে, সেটি দেখার বিষয়।