পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ভারত জড়িত ছিল, তা ঘটনার ক'দিনের মধ্যেই পরিস্কার হয়ে যায়। যেসব অফিসার বেঁচে ফিরেছিলেন, তাদের পরিবারের সদস্য ও ৪৬ ব্রিগেডসহ অন্যান্য ব্রিগেডের যেসব অফিসার পরে রিকভারি অপারেশনে গিয়েছিলেন, তারা এসব বিষয়ে পরবর্তী সময়ে অনেক তথ্য প্রকাশ করেছেন। সেদিন সেনাকুঞ্জে শেখ হাসিনার সঙ্গে মিটিংয়েই একাধিক সিনিয়র অফিসার সংক্ষুব্ধ জুনিয়রদের ধমক দিয়ে চুপ থাকতে হুকুম দেন। এ সময় হুমকি দিয়ে সংক্ষুব্ধদের উদ্দেশে বলা হয়, আক্রমণের জন্য ইন্ডিয়ান ফোর্স রেডি, সাবধানে কথা বলো। পিলখানা ম্যাসাকারের পর ভারত শেখ হাসিনাকে রেসকিউ মিশনের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিল। পরে ওইদিন সংক্ষুব্ধ সেনাদের কাউকে কাউকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়; আবার কাউকে দেওয়া হয় বাধ্যতামূলক অবসর। কাউকে কাউকে নির্যাতনও করা হয়েছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশে ভারতের আধিপত্যবাদ জেকে বসে, ৩৬ জুলাইয়ের পর আধিপত্যবাদের এ শৃঙ্খল ভেঙে গেছে।
সম্প্রতি আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আমার দেশ-এর সঙ্গে জুমে যুক্ত হয়ে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক।
যিনি মেজর দিয়ে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে প্রচারণা চালানো হতো মেজর জিয়াউল ট্রেনিং দিয়েছেন তাদের। এক পর্যায়ে জিয়াউলকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৪০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল যরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জিয়াউল হক সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার মোস্তফাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ জিহ্বল হক একজন ব্যবসায়ী। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির ৪১তম দীর্ঘ কোর্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন জিয়াউল। সিলেট ক্যাডেট কলেজের এ ছাত্র সেনাবাহিনীতে প্রথম ধাপেই ট্রেনিং শেষ করে সর্বোচ্চ সম্মান 'সোর্ড অব অনার' লাভ করেছিলেন। তিনি মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে পড়াশোনা করেন। সেনাবাহিনীতে কমিশন পাওয়ার পর তিনি পার্বত্য অঞ্চলে ২৬ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে প্রায় দেড় বছর ছিলেন। তারপর ময়মনসিংহে ইউনিটসহ পোস্টিং হয়। পরে খাগড়াছড়িতে এবং বান্দরবানে তার ইউনিটের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকেই সেনাবাহিনীর এ ব্রিলিয়fন্ট অফিসার নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজ জিয়াউলকে নিয়ে ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি আমার দেশ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল 'মেজর জিয়াকে নিয়ে রহস্য' শিরোনামে। জুমে আমার দেশ-এর সঙ্গে মেজর জিয়াউল পুরোনো দিনের কথা বলেছেন প্রাণ খুলে। জানিয়েছেন তাকে অপহরণের চেষ্টা ও অপহরণকারী সেনাদের বোকা বানিয়ে পালিয়ে বাঁচার কৌশল সম্পর্কে।
কেন জিয়াউলকে সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছিল, সে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল তার কাছে। জিয়াউল তখন অনেক অজানা কথা বলেন। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পিলখানায় সেনা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে সেনাবাহিনীর অফিসাররা ছিলেন সংক্ষুব্ধ।