Image description
রুম ডেট কালচার ♦ পড়ালেখার নামে মাদক গ্রহণ থেকে অনৈতিক কার্যক্রম ♦ অনেক কিশোর অপরাধে জড়াচ্ছে ♦ বাড়ছে পরকীয়া ভাঙছে সংসার ♦ সামাজিক অবক্ষয়কে দায়ী করলেন সমাজবিজ্ঞানীরা

কোচিংয়ের নাম করে উঠতি ছেলেমেয়েরা এখন রাজধানীর বিভিন্ন ভাড়া বাসায় গোপনে সময় কাটাচ্ছে। এদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও তারা সে বাসায় মাদক গ্রহণ ও অনৈতিক কার্যক্রম করছে। অভিভাবকদের মিথ্যা কথা বলে কখনো গ্রুপ স্টাডি আবার কখনো কোচিংয়ের কথা বলে এ ধরনের রুম ডেট করছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মা-বাবারা এসব সন্তানের রুম ডেট সম্পর্কে প্রথমে জানতে পারছেন না। পরে খোঁজখবর নিয়ে যখন জানতে পারছেন, তখন অনেক বেশি দেরি হয়ে যাচ্ছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে যারা রুম ডেটের জন্য ব্যবহৃত বাসা ভাড়া দিচ্ছেন, তারা খোঁজ রাখছেন না যে সেখানে আসলে কী হচ্ছে। তবে উদ্বেগের বিষয়, রুম ডেটে গিয়ে ছেলেমেয়েরা যৌন মেলামেশার সঙ্গে মাদকের আড্ডায় ঢুকে পড়ছে। অনেকে বিভিন্ন বড় বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এ ধরনের রুম ডেট থেকে অনেকে কিশোর অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে। মোট কথা রুম ডেট থেকে সামাজিক অবক্ষয়ের রুট তৈরি হচ্ছে।

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট এলিনা খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা ইউটিউব ও সমাজমাধ্যমে রুম ডেট কালচার সম্পর্কে দেখে এগুলো শিখছে। এরপর নিজেদের সুবিধামতো বিভিন্ন স্থান ঠিক করে সেখানে অবস্থান করে অনৈতিক কার্যক্রমে জড়াচ্ছে। এ ধরনের কার্যক্রমের দ্বারা আমরা সামাজিকভাবে খুবই অবক্ষয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। যারা এ ধরনের রুম ডেটে অভ্যস্ত, তারা বড় হয়ে যখন পেশাগত ও বৈবাহিক জীবনে প্রবেশ করছে তখন এর নেতিবাচক প্রভাব সংসারজীবনে পড়ছে। সংসারের অশান্তি থেকে বিবাহবিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়াচ্ছে। অনেকেই বৈবাহিক জীবনে সঙ্গীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় রুম ডেটে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে রুম ডেট কালচার এখন সমাজে এক ধরনের মারাত্মক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, আবাসিক এলাকার ভাড়া বাড়ি, রিসোর্ট, পর্যটন এলাকার হোটেলে এ ধরনের রুম ডেট অহরহ দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে এ ধরনের ঘটনা সামনে উঠে আসে। রুম ডেট কালচারে কম বয়সি ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বেশি জড়ালেও বিভিন্ন পেশাজীবী ও চাকরিজীবী রুম ডেট কালচারে অভ্যস্ত। বিবাহিত নারী-পুরুষ যারা রুম ডেট কালচারে জড়িয়ে পড়ে, এ পরকীয়ার কারণে তাদের সংসারে অশান্তি তৈরি হয়; যার পরিণতি গড়ায় বিবাহবিচ্ছেদ পর্যন্ত।

রাজধানীর কিছু হোটেলে উঠতে হলে নারী-পুরুষের মধ্যে কী ধরনের সম্পর্ক তা খতিয়ে দেখা হয় না। অর্থাৎ নিকাহনামা চাওয়া হয় না। আর এ সুযোগে অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও ছেলেমেয়েরা সহজেই এসব হোটেলে উঠে রুম ডেট করার সুযোগ পাচ্ছে বা তাদের করতে দেওয়া হচ্ছে। আবার ঢাকাসহ বিভাগীয় ও বড় জেলা শহরগুলোর ব্যাচেলর মেস ও আবাসিক ভাড়া বাড়িতেও এ ধরনের রুম ডেট করছে অনেকে।

সমাজমাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন পেজে রুম ডেট করার জন্য অর্থের বিনিময়ে পার্টনার খোঁজা হয়। এসব পেজে আবার ঢাকার কোন কোন হোটেল ও স্থানে রুম ডেট করা যায় তার তথ্য দেওয়া থাকে। আশঙ্কাজনক হলেও বর্তমানে বিভিন্ন ইউটিউব-ওটিটি প্ল্যাটফর্মের নাটকে রুম ডেট কালচারের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। আর এসব নাটকের ভুল বার্তা যাচ্ছে কম বয়সি শিক্ষার্থীদের কাছে। কিছু ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররাও রুম ডেট কালচারের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছে।