
ভারত ও চীনের তুলনায় বাংলাদেশি পণ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্ক কম হওয়ার ফলে বাংলাদেশ সাময়িকভাবে লাভবান হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে রপ্তানি অর্ডার আসছে। বাড়ছে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি। তবে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ ব্যাংকিং খাতের সংকট না কাটলে এ সুবিধা দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখা যাবে না।
সংশ্লিষ্টদের মতে, শুল্ক সুবিধার বাড়তি তৈরি পোশাক অর্ডার নিতে এই মুহূর্তে তিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে কারখানা মালিকরা। এগুলো হলো- ১. গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে কারখানা পুরোদমে চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না; ২. বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এলসি জটিলতা রয়ে গেছে এবং ৩. বন্দরে কাস্টমসে জটিলতা ও পণ্য ছাড়ে ধীরগতি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পশ্চিমা ক্রেতাদের অসন্তোষের অন্যতম কারণ হলো : কাস্টম ক্লিয়ারেন্সের দীর্ঘসূত্রতা। কাঁচামাল আমদানি ও তৈরি পণ্য ডেলিভারি উভয় ক্ষেত্রে কারখানা মালিকরা বিমান এবং সমুদ্র দুই ধরনের বন্দরেই হয়রানির শিকার হন। শিল্পের কাঁচামাল কিংবা স্যাম্পল ছাড়ের জন্য বিমানবন্দরে আট দিন এবং সমুদ্রবন্দরে অন্তত ১৬ দিন সময় লাগে বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি গ্যাস সংকট ও ব্যাংকে এলসি জটিলতারও কোনো সুরাহা হয়নি।
কারখানা মালিকরা বলছেন, সাভার, ধামরাই, মানিকগঞ্জের কিছু এলাকায় গ্যাসের চাপ এত কম থাকে যে কারখানা চালু রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। অনেক কারখানা গ্যাসের আবেদন করেও সংযোগ পাচ্ছে না। এমনকি পুরোদমে কারখানা চালু রাখার মতো বিদ্যুৎ সরবরাহও পায় না তারা। ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, মানিকগঞ্জের কারখানাগুলো ব্যাপকভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে আছে।
পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, কম লোড বৃদ্ধির আবেদনকারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগ দিতে হবে। এ ছাড়া সাভারের ধামরাই ও মানিকগঞ্জের মতো যেসব এলাকার গ্যাস পাইপলাইনের শেষ প্রান্তের কারখানাগুলোয় গ্যাসের চাপ কমে যায়, সেখানে অন্তত তিন থেকে চার পিএসআই চাপ নিশ্চিত করতে হবে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান উদ্যোক্তারা।
ওই প্রস্তাবনা জমা দিয়ে বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হাসান খান বলেন, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না পাওয়া এবং পর্যাপ্ত গ্যাসের চাপ না পাওয়ায় অনেক কারখানা পূর্ণ উৎপাদন সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছে না। বিষয়টি রপ্তানি ও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পোশাক খাতের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ট্রাম্পের শুল্ককাঠামো এই মুহূর্তে যেমন আছে- সেটি বাংলাদেশের পোশাক খাতের জন্য ‘সুবিধাজনক’ বলা যায়। তবে এই সুবিধা ‘সাময়িক’ বলেই মনে হচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তে শুল্ককাঠামো বদলে যেতে পারে। সে কারণে, এখন যেসব বর্ধিত অর্ডার আসছে- সেগুলো সময়মতো সরবরাহ দিয়ে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে সামনে।
ফজলুল হক বলেন, ক্রেতাদের অর্ডারকৃত পণ্য সময়মতো সরবরাহ দিতে হলে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সুবিধা লাগবে; তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর জন্য বিশেষ বিবেচনায় ব্যাংকিং সুবিধা বাড়াতে হবে এবং বন্দরে কাস্টমস জটিলতা নিরসনসহ দ্রুত পণ্য ছাড়ের উদ্যোগ নিতে হবে।
নিট তৈরি পোশাক খাতের এই উদ্যোক্তা বলেন, করোনা মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এই তিন কারণে অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কারখানা আবার সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে নতুন করে রপ্তানি এলসি করতে পারছে না। বেশির ভাগ অন্য কারখানার অর্ডার ধরে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করছে। ঋণগ্রস্ত এই কারখানাগুলোকে শতভাগ মার্জিন রেখে বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় এলসি করার সুযোগ দিলে তারা নতুন অর্ডার ধরতে পারবে। এতে করে যেমন দেশের রপ্তানি আয় বাড়বে-তেমনি লোকসানি কারখানাগুলো শুল্ক সুবিধা থেকে প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাভবান হতে পারবে। ফলে ব্যাংকঋণ পরিশাধের সুযোগও সৃষ্টি হবে।