Image description
এখনো ৭০০ বন্দি পলাতক

গত বছরের ৫ই আগস্ট জেল ভাঙার ঘটনায় ২ হাজার ২০০ বন্দি পালিয়ে যায়, যার মধ্যে এখনো মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তসহ ৭০০ জন পলাতক রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ জেলের নাম পরিবর্তন করে ঈড়ৎৎবপঃরড়হ ঝবৎারপবং ইধহমষধফবংয করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার  কারা সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোতাহের হোসেন। এসময় তিনি কারা অধিদপ্তরের বিগত এক বছরের কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। 

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোতাহের হোসেন বলেন, গত বছরের ১১ই আগস্ট একটি ভঙ্গুর অবস্থায় দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। মূলত তিনটি ধাপে কার্যক্রম পরিচালনা করেছি- অভ্যন্তরীণ সংস্কার, কারারক্ষীদের মান উন্নয়ন ও বন্দি ব্যবস্থাপনা।  গত ৫ই আগস্ট জেল ভাঙার ঘটনায় ২ হাজার ২০০ বন্দি পালিয়ে যায়, যার মধ্যে এখনো ৭০০ জন পলাতক রয়েছে। এদের মধ্যে ৬৯ জন জঙ্গি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এ ছাড়া লুট হওয়া ২৯টি অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কারাগারের ভেতরে মাদক ও মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চলছে। গত এক বছরে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ৩৪ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং ৪৪০ জন কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে অভিযান চালিয়ে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও বলেন, কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুর কারাগারে বাইরে থেকে খাবার আনা পুরোপুরি বন্ধ করা গেছে। মাদকমুক্ত রাখতে ইতিমধ্যে ডোপ টেস্টের যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। কারারক্ষী ও বন্দিদের নিয়মিত ডোপ টেস্টের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কারাগারে নিরাপত্তা জোরদারে নেয়া পদক্ষেপের কথা জানিয়ে মহাপরিদর্শক বলেন, মোবাইল ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে বডি ক্যাম, মোবাইল ট্র্যাকার, জ্যামিং সিস্টেম, লাগেজ স্ক্যানার ও টেলিফোন সাক্ষাৎ ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে কাশিমপুর কারাগার ও হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে জ্যামিং সিস্টেম স্থাপন করা হবে, পর্যায়ক্রমে সব কারাগারেই এই ব্যবস্থা চালু করা হবে। ভবিষ্যতে এআই নির্ভর টেলিফোন ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে বন্দিরা নির্দিষ্ট সময়ে কেবল তাদের পরিবারের সদস্য বা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা শনাক্ত করে সতর্কবার্তা দেবে। কারাগারে বন্দিদের মোবাইল ব্যবহারের বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, মোবাইল ফোন ব্যবহারের ঘটনা নতুন নয়, এসব ফোন উদ্ধারে আমরা নিয়মিত ব্যবস্থা নিচ্ছি। এমনকি অবৈধ ফোনের মাধ্যমে বন্দিরা মাঝে মাঝে আমাকে ফোন দেয়। মূলত আরেকজনকে ধরিয়ে দিতে তারা ফোন দেয়, যারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। 

বন্দিদের পুনর্বাসনে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে সৈয়দ মোতাহের হোসেন বলেন, সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতায় কারাগারগুলোকে উৎপাদনমুখী করা হচ্ছে। প্রায় ৫০ হাজার বন্দির মধ্যে ২৫ হাজারকে উৎপাদনমুখী কাজে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে তারা পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারে। এ ছাড়া বন্দিদের জন্য হটলাইন ১৬১৯১ চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্দিদের অভিযোগ ও সহায়তার জন্য হটলাইন ১৬১৯১ চালু করা হয়েছে। বন্দি সিন্ডিকেট ভাঙতে যারা দীর্ঘদিন ধরে একই কারাগারে ছিল তাদের বিভিন্ন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। কারাগারে অতিরিক্ত চাপ সামলাতে ইতিমধ্যে দু’টি নতুন কেন্দ্রীয় কারাগার এবং চারটি জেলা কারাগার করা হয়েছে।  

কারা অধিদপ্তরের নিয়োগ ও পদোন্নতি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন হয়েছে বলে মহাপরিদর্শক বলেন, গত এক বছরে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে এবং ৯০০ জনকে নতুন করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আরও ৬০০ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে মেধাভিত্তিক অনুসারে হয়েছে। চিকিৎসা সুবিধার অভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, বন্দিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কেরানীগঞ্জে একটি সেন্ট্রাল কারা হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কারাগারে মোট ১৬৩ জন বন্দি ডিভিশন সুবিধা পাচ্ছেন। এ ছাড়া বন্দিদের খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। 

এআইজি কাজী মোস্তফা বলেন, আমরা অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে কারারক্ষী নিয়োগ প্রক্রিয়া সমপন্ন করেছি। টাকা এবং সুপারিশ ছাড়া যে চাকরি পাওয়া সম্ভব তা আমরা দেখিয়েছি। নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে একটি চক্র গড়ে ওঠে। এরা বিভিন্ন ধাপে কাজ করে, দেখা যায় লিখিত ও শারীরিক পরীক্ষায় অংশ নেয় আরেকজন আর মূল প্রার্থী ভাইবায় এসে অংশগ্রহণ করে। সামপ্রতিক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে আসা ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। এদের ১৯ জন পুরুষকে ১০ মাস এবং ১ জন মহিলাকে ৬ মাসের জেল দেয়া হয়েছে। অতীতে এসব ঘটনায় মামলা করা হতো না; তাই প্রক্সি চক্ররা সুযোগ নিতো।