Image description

প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের আঁধার সিলেট বিভাগের চার জেলা। ধান,মাছ  বালি, পাথর, চুনা পাথর সহ অফুরন্ত প্রাকৃতিক,খনিজ ও বনজ সম্পদে ভরপুর সিলেট। খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় থেকে নেমে আসা সফেদ ঝর্ণার কোল ঘেষে  সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তা, জাফলং, কানাইঘাট, সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার, ছাতক, সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলায় নেমে আসে অজস্র পাথর ও বলি।

এখানকার বালি-পাথর কোয়ারী মূলত: ভারত সীমান্তের ওপার থেকে সৃষ্টি। এখানেই শেষ নয় এই এলাকায়  সবুজ পাহাড় ঘেষে সাদা মেঘের উড়াউড়ির দৃশ্য বিরল। এলাকাটি প্রাকৃতিক পর্যটন স্পট। প্রশাসনের যথযথ হিসাব না থাকলেও  স্থানীয়রা জানান, প্রতি বর্ষায় কোটি কোটি টাকার পাথর নেমে আসে সীমান্তের ওপার থেকে। হাজার কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে সীমান্তের ওপার থেকে শুধু বালি পাথর খাতে। তাছাড়া একে ঘিরে গড়ে উঠেছে নানা কর্মসংস্থান। কিন্তু অপরিকল্পিত পরিবেশ ধংশ করে  এখানে চলছে পাথর আহরণ।  বৃহস্পতিবার ধোপা গোল থেকে ৩৪ হাজার ঘন ফুট লুটের পাথর উদ্ধার কওে যৌথ বাহিনী।

এদিকে শিল্প যোগেও সিলেটে তেমন শিল্প-কারখানা গড়ে না উঠায় এলাকার জীবিকার একমাত্র বোরো ফসল ও বিকল্প কর্মসংস্থান হিসাবে কিছু মানুষ বেছে নিয়েছে সীমান্তে চোরাচালান বা বালি-পাথর আহরণ ও ব্যবসা। এই ব্যবসাকে ঘিরে নৌপথে বড় বড় কারগো, স্টীল ও কাঠের নৌকা,  বাল্কহেড  ইত্যাদি চলাচল করে ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সারা বছর চলে। আবহাওয়ামান কাল থেকে এলাকার শ্রমজিবী মানুষেরা কোদাল, বেলাচা দিয়ে বালি-পাথর আহরণ করে বিক্রয় করে আসছে। এগুলো দেশের নির্মাণ কাজে অবদান রেখে চলছে। একসময় পাহাড়ী নদী ধলাই, যাদুকাটা, রাংপানি, লোভাছাড়া, শ্রীপুর জাফলং সহ যে কোন পাহাড়ী নদীর কাছে গেলেই সোনশান নিরবতার মধ্যে নৌকায় বালি তোলার ছলাত-ছলাত ও বড় বড়  বোল্ডা পাথরে খুট-খাট শব্ধ নিরবতা ভাঙতো। পর্যটকদের মুহিত করতো।

কিন্তু ৯০‘র দশকে ‘বোমা’ মেশিন, তার পর ‘সেইভ’ মেশিন নেমে বাড়ীঘর, জমি জিরাত গুরুত্তপূর্ণ স্থাপনা ধংশ শুরু হয়,পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে পড়ে তেমনি বালি পাথর ব্যবসায় কঠিন হয়ে পড়লো। পরিবেশ ধংশের অভিযোগে বালি পাথর উত্তোলন আদালতের নির্দেশে বন্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু এই বালি পাথর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ‘চোর-পুলিশ’ খেলা চলে। কতিপয় অসাধু রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, প্রশাসন, সংস্লিষ্ট থানার পুলিশ সীমান্ত রক্ষা বাহিনী মিলে মিশে এই ব্যবসায় নিয়োজিত। মাঝে মধ্যে অভিযান হয় বালি পাথর আটক হয়। সেই পাথর নিলামও হয়। নিলাম পাথরের কাগজে অবৈধ মাল বৈধ হয়।  এমনি অবস্থা চলতে থাকে  থাকে বছরের পর বছর। আর প্রাকৃতিক পর্যটন স্পটগুলো ধীরে সাবাড় হতে থাকে। সাবাড় হয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ  বিশাল শাহ-আরপিন টিলা, ভোলাগঞ্জে রেলওয়ের বাংকার এলাকা, সর্বশেষ সাদাপাথর এলাকা কত মনোরম স্পট। তলে তলে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যে মেতে উঠেন তারা।

বিগত সরকার আমলে সাদা পাথর সহ বিভিন্ন কোয়ারী লুটে পুটে খান সংস্লিষ্ট এলাকার নেতারা। গত ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তনের পর এর সাথে যুক্ত হন বিএনপি, জামায়ত এনসিপি সহ আরো কয়েকটি রাজনৈতিক  নেতা। ইতমধ্যে লুট পাটে জড়িত ১০৩ জনের নাম তালিকায় উঠেছে।  তবে যেসব রাজীনতেক নেতার নাম প্রকাশ হয়েছে তারা তা অস্বিকার করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।  সূত্র মতে,  সাদাপাথর চুরি করে উত্তোলন থেকে শুরু করে তা ভেঙে বিক্রি করা পর্যন্ত কয়েকটি  স্তরের লোকজন জড়িত। এর সাথে অন্তত:  দেড় শতাধিক ব্যক্তি।  লুটপাট, দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ইতোমধ্যে কোমপানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের পদও স্থগিত করা হয়েছে।