Image description
 

মাছ-মাংসের দাম বেশি থাকায় স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ডিম ও সবজি প্রধান ভরসা হয়ে ওঠে। এই নিত্যপণ্য দুটির বাজারে এখন বেশ অস্বস্তি রয়েছে। ডিমের দাম যেমনি বেড়েছে, তেমনি সব ধরনের সবজির দামও বেশি। ভোক্তাদের অভিযোগ, সরকারের দুর্বল তদারকির কারণে ব্যবসায়ীরা আগের মতো কারসাজিতে লিপ্ত হচ্ছে। নানা ছুতোয় জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে। এতে বেশ বিপাকে পড়ছেন কম আয়ের মানুষেরা। 

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্রীষ্মকালীন সবজির উৎপাদন স্বাভাবিকভাবেই কম। তাছাড়া সম্প্রতি বৃষ্টির কারণে সবজির উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সবজি পচে গেছে। এ জন্য সরবরাহ কম, যা দামকে উস্কে দিচ্ছে। অন্যদিকে সবজির সরবরাহ কম থাকায় ডিমের চাহিদা বাড়ছে। যে কারণে দাম বাড়ছে ডিমের।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁও, মহাখালী ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি গোল বেগুন ১০০ থেকে ১৪০ টাকায় আর লম্বা বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পটোল, কাঁকরোল ও ড্যাঁড়শের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায়, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল ও ঝিঙ্গের কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বরবটি, উচ্ছে বা করলার কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকারের প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। অন্যদিকে প্রতি কেজি মূলা ৪০ থেকে ৫০ ও পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। লাউ ও কুমড়োর পিচ কিনতে গেলে ক্রেতাকে খরচ করতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এছাড়া মানভেদে প্রতি কেজি টমেটো ১৪০ থেকে ১৭০ ও কাঁচামরিচ ২২০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর দরে পরিবর্তন নেই। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে। কয়েক মাস ধরে এই দামেই বিক্রি হচ্ছে আলু। 

 
 

মহাখালী কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী আবু বকর বলেন, উৎপাদন এলাকা থেকে কারওয়ান বাজারে সবজি তুলনামূলক কম আসছে। এ জন্য পাইকারিতে সব সবজির দাম বাড়তি। সরবরাহ না বাড়লে দাম কমবে না।

কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে অনেক জায়গায় সবজির ফলন নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে সবজি কম আসছে। তাছাড়া কিছু সবজি আছে যেগুলোর এখন মৌসুম নয়। সেগুলোর দাম বেশি। 

সবজির দাম বাড়ার প্রভাব দেখা গেছে ডিম ও মুরগির বাজারে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। পাড়া-মহল্লায় প্রতি ডজন ডিম কিনতে গেলে ক্রেতাকে খরচ করতে হচ্ছে ১৫০ টাকা। সপ্তাহ দুয়েক আগে ডিমের ডজন ছিল ১৩০ টাকার আশপাশে। ডিমের মতো মুরগির দামও কিছুটা চড়া। গত ১০-১২ দিনে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় এবং সোনালি মুরগি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে বাড়ছে ডিমের দাম। ডজন ১৩০ থেকে বেড়ে এখন দেড়শ টাকার কাছাকাছি হয়ে গেছে। পাইকারি পর্যায়ে বাড়ার কারণে খুচরায় দর বাড়তি। তবে প্রতিদিনই বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের লোকজন আসে। দাম বেশি রাখার সুযোগ নেই।

ভারত থেকে আমদানির প্রভাবে বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত দেখা গেছে। দেশি প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুনের কেজি ৮০ থেকে ১২০ এবং আমদানি করা রসুনের কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে কিছুটা বেড়ে খোলা আটা ৪৫ থেকে ৫০ এবং প্যাকেট আটা ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হলেও বাজারে এর প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। খুচরায় প্রতি কেজি সরু চালের কেজি ৭৫ থেকে ৮০, মাঝারি চাল ৬০ থেকে ৬৫ এবং মোটা চালের কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

দেশি মসুর ডাল সংকটের অজুহাতে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতি কেজি কিনতে খরচ করতে হবে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। তবে আমদানি করা মসুর ডাল কেনা যাচ্ছে ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা দরে। 

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকালের বাজার দরের তথ্যে দেখা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে গড়ে ১২ শতাংশ বেড়েছে চালের দাম। এছাড়া এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে খোলা আটা, ডিম, ডাল, মুরগির দর। 

কারওয়ান বাজার থেকে সবজি কেনার পর হামিমুর রহমান নামের এক ক্রেতা বলেন, সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের তদারকির ধারাবাহিকতা নেই। ফলে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে। এখনই লাগাম টেনে ধরতে না পারলে কম আয়ের মানুষেরা সামনে আরও বড় বিপদে পড়বেন।