Image description
জাকসু নির্বাচন

৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। ইতোমধ্যে তফশিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফশিল অনুযায়ী ১১ সেপ্টেম্বর ভোট। ক্যাম্পাসের আবাসিক হল, বিভাগ থেকে শুরু করে বটতলা, ক্যাফেটেরিয়া, চৌরঙ্গী পয়েন্টসহ সব আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু এখন এই নির্বাচন। এদিকে প্যানেল তৈরি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছে রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। এর পাশাপাশি মতাদর্শের ভিত্তিতে জোট গঠনের বিষয়েও আলোচনা করছে কেউ কেউ। এতে সরগরম পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা-জাকসু নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের সার্বিক অধিকার আদায়ে কাজ করবেন।

জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. একেএম রাশিদুল আলম জানিয়েছেন, সোম ও মঙ্গলবার দুদিনে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন ৩২৮ জন। এর মধ্যে জাকসুর জন্য ৮৭ জন এবং হল সংসদের জন্য ২৪১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ছাত্র সংগঠনগুলোর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময়সীমা আজ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। জাকসু ঘিরে শাখা ছাত্রদলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভক্তি দেখা গেছে। ৮ আগস্ট ১৭টি আবাসিক হল ও শাখা কমিটি বর্ধিত করার পর নবগঠিত কমিটিতে বিতর্কিত ব্যক্তিদের পদ দেওয়ার অভিযোগে একাংশ বিক্ষোভ করেন। এরপর থেকে ওই অংশের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে নিয়মিত শোডাউন করছেন। ছাত্রদলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে ছাত্রদল থেকে দুটি প্যানেল হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। একটি প্যানেল শাখা ছাত্রদলের সুপার ফাইভের অনুসারীদের মধ্য থেকে, অন্যটি বিদ্রোহী গ্রুপ থেকে। বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক, সদস্য সচিবসহ সুপার ফাইভের নেতাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, তফশিল অনুযায়ী ২৫ আগস্ট খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর জাকসু ও হল সংসদের জন্য পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করব। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের সার্বিকভাবে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, প্যানেল ঘোষণার ক্ষেত্রে যারা শিক্ষার্থীদের কাছে বেশি জনপ্রিয় এবং যাদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি, তাদের আমরা ছাত্রদলের প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করব।

প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তত দুটি প্যানেল হওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। একটি প্যানেলে থাকতে পারে ছাত্র ইউনিয়ন একাংশ (অদ্রি-অর্ক), জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট (ফাইজা), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীসহ কয়েকটি সমমনা সাংস্কৃতিক সংগঠন। অন্য প্যানেলে থাকছে ছাত্র ইউনিয়নের অপর অংশ (জাহিদ-তানজিম), জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট (মেঘ), জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার।

এদিকে ৩৬ বছর পর ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনীতি করছে ছাত্রশিবির। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত জাকসু নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করেনি। সংগঠনটির দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমাদের একক প্যানেল রেডি আছে। তবে অনেকের সঙ্গে এখনো আমাদের আলোচনা চলছে। সবার সঙ্গে আলোচনা শেষে আমরা আমাদের প্যানেল ঘোষণা করব।

এবারের জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ছাত্র সংগঠন হিসাবে নির্বাচন করছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। এককভাবে প্যানেল ঘোষণা করতে চায় সংগঠনটি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, আমরা চাচ্ছি এককভাবে প্যানেল ঘোষণা করতে। তবে আমরা আলোচনার সুযোগ রেখেছি। আমাদের সংগঠনের বাইরেও দীর্ঘদিন যারা শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে কাজ করেছেন, তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলমান। এছাড়াও শোনা যাচ্ছে, গণ-অভ্যুত্থানে অবদান রাখা আবদুর রশিদ জিতু এবং ছাত্র ফ্রন্টের জাবি শাখার সংগঠক সোহাগী সামিয়া পৃথক প্যানেল নিয়ে জাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। যদি তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন, তবে নির্বাচনের সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে মনে করছেন অনেকে।

এছাড়াও জাকসুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মতাদর্শের বেশকিছু প্রার্থী প্যানেলের বাইরে গিয়ে ‘স্বতন্ত্র’ নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব একেএম রাশিদুল আলম বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করছি। নির্বাচনের সামগ্রিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পালন করার জন্য সবার মতামত নিচ্ছি। ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে সব ধরনের অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশ, কর্মসূচি এবং মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

সংগঠন নয়, প্রার্থী দেখে ভোট : শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো দলীয় মতাদর্শ নয়, তাদের ব্যক্তিগত যোগ্যতা কেমন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করবেন কি না-এসব দেখে ভোট দেবেন তারা। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, সংগঠন দেখে ভোট দেওয়ার ইচ্ছা নেই। আমি আসলে মনে করি, জাকসুতে যারাই প্রার্থী হোক না কেন, একজন ভোটার হিসাবে আমি তাকেই ভোট দেব যে প্রকৃত অর্থে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করবে।

আলোচনায় দুই পদ : নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদ ঘিরেই সবখানে আলোচনা। বাকি পদগুলোয় এখনো তেমন তৎপরতা নেই। ক্যাম্পাসে ভিপি পদে আলোচনায় রয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জল, শাখা শিবিরের প্রচার ও অফিস সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। ছাত্রদলের আব্দুল গাফফার জিসান ও মীর মশাররফ হোসেন, হল সভাপতি শেখ সাদী, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের (একাংশ) আহ্বায়ক মাহফুজ ইসলাম মেঘ, এছাড়া গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা আবদুর রশিদ জিতু ভিপি পদে নির্বাচন করতে পারেন।

জিএস পদে আলোচনায় রয়েছেন ছাত্রদলের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল সভাপতি হামিদুল্লাহ সালমান, ছাত্রশিবিরের প্লানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক সাফায়েত মীর, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) জাবি শাখার সদস্য সচিব আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম, জাবি ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ইমন।