
দেশের সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত পরিমাণে সাপের কামড়ের ভ্যাকসিন অ্যান্টিভেনম অবিলম্বে সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে হাইকোর্টের এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে আগামী দুই মাসের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিটের শুনানি শেষে গতকাল সোমবার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে রিটকারী এ কে এম নুরুন নবী উজ্জ্বল নিজেই শুনানি করেন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. ইসমাঈল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও তানিম খান।
আদেশের পর আইনজীবী এ কে এম নুরুন নবী উজ্জ্বল বলেন, দেশের বিভিন্ন উপজেলায় সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যুর খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। এতে দেখা যায়, উপজেলা হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সাপের কামড়ের ওষুধ (অ্যান্টিভেনম) না থাকায় আহত রোগীর মৃত্যু ঘটছে। বিষয়টি জনস্বার্থ বিবেচনায় আমরা উচ্চ আদালতে রিট করি। আদালত রিটের শুনানি শেষে দেশের সব উপজেলা হাসপাতালে অবিলম্বে অ্যান্টিভেনম সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে আগামী দুই মাসের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এর আগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ১৭ আগস্ট সাপের কামড়ের অ্যান্টিভেনম দেশের সব উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে সরবরাহের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন অ্যাডভোকেট মীর এ কে এম নুরুন নবী। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে এ রিট দায়ের করা হয়।
পত্রিকায় একটি পরিসংখ্যান দিয়ে বলা হয়, সারা দেশে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত সাপের কামড়ে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই পাঁচ মাসে সাপের দংশনের শিকার হয়েছেন ৬১০ জন। রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে রাসেলস ভাইপার নিয়ে জনসচেতনতা বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এসব তথ্য উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে রাসেলস ভাইপার নিয়ে সারা দেশে বিভিন্ন তত্ত্ব, তথ্য, গুজব, কিছুটা ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশে সর্পদংশন নীতিগতভাবে একটি স্বীকৃত গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। ২০২২ সালে পরিচালিত জাতীয় জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের চার লাখের বেশি মানুষ সাপের দংশনের শিকার হন, যার মধ্যে দুঃখজনকভাবে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। সাপ বিষয়ে অপর্যাপ্ত তথ্য থাকা সত্ত্বেও প্রধান বিষধর সাপের মধ্যে গোখরা, ক্রেইট (কালাচ), চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার ও সবুজ সাপ অন্যতম। কিছু কিছু সামুদ্রিক সাপের দংশনের তথ্যও আছে।
ডা. রোবেদ আমিন জানান, বিষধর সর্পদংশনের স্বীকৃত চিকিৎসা হচ্ছে অ্যান্টিভেনম। দেশের প্রধান বিষধর সাপের বিষ সংগ্রহ করে তা ঘোড়ার শরীরে প্রয়োগ করা, ঘোড়ার রক্তের সিরাম থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয় না। ভারতে তৈরি (৪টি প্রধান বিষধর সাপের বিষয়ে বিরুদ্ধে প্রস্তুত) অ্যান্টিভেনম সংগ্রহ করে অসংক্রামক ব্যধি কর্মসূচি বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে সরবারহ করা হয়ে থাকে। অ্যান্টিভেনম ক্রয়, বিতরণ, সংরক্ষণ, ব্যবহার, ব্যবহার পরবর্তী প্রভাব (নজরদারি) দেখার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কমসূচি না থাকা সত্ত্বেও অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের সুফল লক্ষণীয়।