
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হিসাবে বিভিন্ন জেলার ১২ হাজার ৫৩১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে আছে। এর মধ্যে ভাউন্ডারি বা সীমানা প্রাচীর নেই অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে দরজা ও জানালা। ভোটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এসব প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার ও মেরামতের জন্য অর্থ উপদেষ্টার কাছে ১২৪ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়ে সম্প্রতি আধা সরকারিপত্র (ডিও) দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
চলতি বাজেটের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন খাতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কার ও মেরামত কার্যক্রমের বিপরীতে কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। তবে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে অর্থের কোনো সমস্যা হবে না। চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের ব্যয়ের অর্থ দেওয়া হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার ডিওতে বলেছেন, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা ব্যয়ের আওতায় অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বিশেষ বরাদ্দ হিসাবে ১২৪ কোটি টাকা দেওয়ার অনুরোধ করছি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ভোটকেন্দ্র হিসাবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কার ও মেরামত প্রয়োজন। বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আমরা শিক্ষা উপদেষ্টার ডিও পেয়েছি। চাহিদা অনুযায়ী বিশেষ অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আছে। এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি মন্ত্রণলয়কে বরাদ্দ দেওয়া আছে। সে বরাদ্দের বাইরে এ অর্থ চাওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ এটি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। যেহেতু বিষয়টি জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সূত্রমতে, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৮৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ইতোমধ্যে পুরো অর্থ খরচ হয়েছে। ছোট খাত মেরামত বাবদ ১৩৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের সমুদয় অর্থ ইতোমধ্যে ব্যয় হয়েছে। ফলে এই দুই খাতে কোনো অব্যয়িত অর্থ অবশিষ্ট নেই। ফলে ভোটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামত ও সংস্কারের লক্ষ্যে পিইডিপিও এর আওতায় বরাদ্দ প্রদানের কোনো সুযোগ থাকছে না। অপরদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জন্য পরিচালন ব্যয়ের আওতায় ‘অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা’ কোডে ৮০ কোটি টাকা সংস্থান আছে। এই অর্থ দিয়েও পুরো সংস্কার ও মেরামত কার্যক্রমের চাহিদা (১২৪ কোটি টাকা) মেটানো সম্ভব নয়।
অর্থ উপদেষ্টাকে দেওয়া ডিওপত্রে বলা হয়েছে, ভোটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার ও মেরামতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। চিঠিতে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হয়েছে এবং আগামী দিনে ব্যবহার হতে পারে, সেগুলোর মধ্যে সংস্কার ও মেরামতের প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করতে বলা হয়। পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার ও মেরামত করে ভোটগ্রহণের উপযোগী করে গড়ে তোলার তাগিদ দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশন থেকে।
নির্বাচন কমিশন থেকে চিঠি পাওয়ার পর সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ২০ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে মাঠ পর্যায় থেকে প্রতিবেদন আসে মন্ত্রণালয়ে। সে প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজর ৫৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬২৪ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ১২ হাজার ৫৩১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কার ও মেরামত প্রয়োজন। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে অর্থ উপদেষ্টাকে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান যে ৮০ কোটি টাকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে আছে, সেটি দিয়ে ১২,৫৩১টি বিদ্যালয় সংস্কার ও মেরামত করা হলে অবশিষ্ট ৫৩,০৩৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো কাজ করা সম্ভব হবে না। কারণ, বাজেটে আর কোনো অর্থ থাকছে না। এতে আগামী দিনে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা বিঘ্নিত হতে পারে। এ বিবেচনায় যেগুলো ভোটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হবে, ওইসব বিদ্যালয়ের জন্য জরুরি ভিত্তিতে অতিরিক্ত বিশেষ বরাদ্দের প্রয়োজন।