Image description

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদলের কমিটিতে এক কলেজ শিক্ষার্থীর নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। পরে সেই পদকে কাজে লাগিয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা করে নেন।

অভিযোগ ওঠা ওই নেতা আ হ মুহাম্মদ খোকন। বর্তমানে তিনি ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। এর আগে তিনি ঢাবি ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তারও আগে খোকন ঢাবির সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের নথি অনুযায়ী আ হ ম খোকন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি কলেজে পড়াশোনা করেছেন তিনি।

রাজনৈতিক সূত্র জানায়, খোকন কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন এবং বর্তমান সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের রাজনীতি করেন।

ঢাবি ছাত্রদলের কোনো পদে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত খোকন। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলাম। আমার কর্মকাণ্ড দেখে দল আমাকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলে স্থান দিয়েছে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নই, ঢাবি শাখার পদেও ছিলাম না। কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন এমন অনেকেই ঢাবির শিক্ষার্থী নন।’ তবে এ সংক্রান্ত তালিকা দেওয়ার অনুরোধ করা হলে তা এড়িয়ে যান পাশাপাশি সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান।

ঢাবি ছাত্রদলের কমিটিতে আ হ ম খোকন

ছাত্রদলের দলীয় নথিপত্রে দেখা যায়, ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বর্ধিত কমিটির প্যাডে আ হ ম খোকনের নাম সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিল। এছাড়া ২০২০ সালে গঠিত ১২টি হলের আংশিক কমিটিতে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সহ-সভাপতির পদও পান তিনি। সংগঠনের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, এই দুই পদই তার কেন্দ্রীয় ছাত্রদলে উন্নীত হওয়ার পথ তৈরি করেছে।

ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ঢাবির হল কিংবা শাখার কমিটিতে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাই থাকতে পারেন। কলেজের শিক্ষার্থী হয়েও দীর্ঘদিন হল ও ঢাবি ছাত্রদলের পদে থাকার বিষয়টি অস্বাভাবিক এবং এর দায় শাখা কমিটির নেতৃত্বসহ কেন্দ্রীয় নেতাদেরও নিতে হবে।

এদিকে খোকনের ফেসবুক ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রোফাইলের বায়োতে ২নং সহ-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ পরিচয় দিয়েছেন তিনি। এর নিচেই লেখা 'স্টাডিড এট ঢাকা ইউনিভার্সিটি'। প্রোফাইলে কেন্দ্রীয় সংগঠন তো বটেই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত বিভিন্ন প্রোগ্রামের কর্মসূচিতেও তার উপস্থিতির ছবি পাওয়া পাওয়া গেছে।

অভিযুক্ত খোকনের ফেসবুক প্রোফাইল

২০২২ সালে ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্বে থাকা খোরশেদ আলম সোহেল দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আ হ ম খোকন জহুরুল হক হলের সহ-সভাপতি ছিলেন। যারা হল কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকেন, তারাই পরবর্তীতে শাখা কমিটিতে জায়গা পান। খোকন যেহেতু হলের পদে ছিলেন, আমরা তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবেই জানতাম। সে অনুযায়ী পদও দেওয়া হয়। ওই সময় আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমান এই কমিটি অনুমোদন করেছিলেন।’ তিনি মনে করেন, খোকন ঢাবি শিক্ষার্থী না হলে বিষয়টি তদন্ত হওয়া উচিত।

নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে ছাত্রদলের এক নেতা জানান, ৫ আগস্টের পর মামলায় ভয় ও চাকরি বাঁচানোর হুমকি দিয়ে এলাকা থেকে বিপুল অংকের অর্থ লেনদেন করেছেন খোকন। তদবির বাণিজ্য করেছেন খোদ সচিবালয়েও। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের অনুসন্ধানেও খোকনের সচিবালয়ে আসা-যাওয়ার ছবি পাওয়া গেছে। ওই সূত্রের তথ্য, মূলত অবৈধ ওই লেনদেনের অর্থেই খোকন এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছেন, চিন্তা করছেন সংসদ নির্বাচনের; যা নিয়ে দলের মধ্যেই অস্বস্তি রয়েছে বলে জানান ওই নেতা।

সচিবালয়ে আ হ ম খোকন

দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, এলাকায় বেশ প্রভাবশালী নেতা খোকন। সম্প্রতি তার গণসংযোগ বেড়েছে। গত ১৮ জুলাই সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ-সলঙ্গা) আসন থেকে পরপর চার বার নির্বাচিত বিএনপির সাংসদ আব্দুল মান্নান তালুকদার মারা যাওয়ার পর এলাকায় তার এমপি প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন উঠেছে। এজন্য নিয়ম করে মোটর সাইকেল শোডাউন, ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করছেন তিনি। রায়গঞ্জ থানাধীন স্থানীয় বিএনপির এক নেতা জানান, এলাকায় খোকন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এর আড়ালে অন্য কিছু আছে কিনা, তাদের জানা নেই। তিনি বলেন, সম্প্রতি এলাকায় খোকনের আসা-যাওয়া বেড়েছে। অনেকেই তাকে নেতা হিসেবে মেনেও নিয়েছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘খোকন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়, বিষয়টি তার জানা নেই। খোকন কীভাবে হল কমিটিতে পদ পেয়েছিলেন, সেটি খোঁজ নিতে হবে। তারপর বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।