
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল চত্বরে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যার মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি হামলা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর কর্মস্থলে নিরাপত্তা দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দিয়ে বিক্ষোভে নামে কর্মচারীরা। তারা আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে পুলিশে তুলে দেন। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আন্দোলনকারীরা হাসপাতাল চত্বর ছেড়ে চলে যান এবং ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নেয় কর্মচারীরা। এ সময় গোটা হাসপাতাল এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করতে থাকে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রধান গেট বন্ধ করে দেয় পুলিশ এবং জরুরি বিভাগে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। তবে অরাজক পরিস্থিতির কারণে চিকিৎসা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এর আগে আন্দোলন শুরুর পর থেকে বুধবার পর্যন্ত হাসপাতালের ভেতরে একাধিক চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীকে লাঞ্ছিত করা হয় এবং শিশু বিভাগে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মেডিসিন ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেন। মিছিল শেষে হঠাৎ কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং হামলা-পাল্টা হামলায় কয়েকজন আহত হন।
শেবাচিম হাসপাতালের মিড লেভেল চিকিৎসক ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সখাওয়াত হোসেন সৈকত কালবেলাকে বলেন, গত ১৮ দিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা নানাভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। শিক্ষার্থী পরিচয়ে কিছু লোক চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালিয়েছে, ফলে কর্মপরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। নিরাপদ কর্মস্থলের দাবিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার সকালে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন শেষে কাজে ফেরার পর তাদের স্টাফদের ওপর হামলা চালানো হয়, একজনের হাত ভেঙে দেওয়া হয় এবং কয়েকজনকে মারধর করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার পরও তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অন্যদিকে, আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা মহিউদ্দিন রনি অভিযোগ করেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হাসপাতালের স্টাফ পরিচয়ে কিছু লোক তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তিনি দাবি করেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বরিশালে বৈঠকে তাদের আন্দোলনকারীদের কাউকে রাখা হয়নি, এ জন্য তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তার অভিযোগ, একাংশ আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করলেও তারা আন্দোলন শেষ করেননি, বরং বৃহস্পতিবার থেকে গণঅনশন শুরু করেছেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বেল্লাল হোসাইন কালবেলাকে বলেন, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল এবং কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। কাউকে আটক করা হয়নি, তবে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় বুধবার রাতে আন্দোলন প্রত্যাহার করে তারা; কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে একদল আন্দোলনকারী প্রধান গেট আটকে অনশন শুরু করে। একই সময় নিরাপদ কর্মস্থলের দাবিতে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা বিক্ষোভ করছিলেন। এরপর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় কয়েকজন কর্মচারী গুরুতর আহত হন। তিনি জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে তিনি রাজি করিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ দিন ধরে ছাত্র-জনতার ব্যানারে আন্দোলনকারীরা স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে। তবে মহিউদ্দিন রনির নেতৃত্বাধীন অংশ গণঅনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। বৃহস্পতিবার সকালে অনশন চলাকালে দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি করানোর সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নারী চিকিৎসক ও নার্সদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে, যা থেকে শুরু হয় হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা।