
অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করে বাড়িঘরে হামলা ও অপহরণের চেষ্টার অভিযোগে ভারতীয় নাগরিকদের গণপিটুনিতে আকরাম হোসেন (৩০) নামে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে ঝিনাইগাতীর বাকাকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মুসা মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সোমবার বিকেলে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি হিলস জেলার খনজয় কৈথাকোণা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আকরামসহ ৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছিলেন।
নিহত আকরাম হোসেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাঁকাকুড়া গ্রামের জহির উদ্দিনের ছেলে বলে জানা গেছে। তিনি দীর্ঘদিন এলাকায় নিয়মিত বসবাস করে না। তিনি কিভাবে কাদের সঙ্গে ভারতে গিয়েছেন, সেটি জানেন না তার স্বজনরাও। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে আত্মীয়-স্বজন লাশ দেশে ফেরানোর জন্য স্থানীয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি’র সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
নিহতের বড় ভাই পান ব্যবসায়ী শেখ ফরিদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমরা আকরামের মৃত্যুর খবর জানতে পারি। তবে কী উপায়ে সে ভারতে গেল, সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। তার লাশ ফেরত আনার জন্য আমরা বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন ৩৯ বিজিবির আওতাধীন নকশী বিওপির সুবেদার আব্দুল লতিফ জানান, ঘটনার বিষয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম ও স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৯ আগস্ট মধ্য রাতে আকরামসহ ৮ জন বাংলাদেশি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসি হিলস জেলার রোংদাংগাই গ্রামে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেন।
পরে ওই গ্রামের এক বাসিন্দাকে অপহরণের চেষ্টা এবং বাড়িঘরে হামলার অভিযোগে ৫ বাংলাদেশিকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা।
আটকদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশি পুলিশ কনস্টেবল পরিচয়দানকারী জামালপুরের মারুফুর রহমান, জামালপুর সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম, নারায়ণগঞ্জের সায়েম হোসেন, কুমিল্লার মেহফুজ রহমান ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের মোবারক হোসেন।
এদিকে সোমবার বিকেলে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার মহেশখোলা সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খনজয় কৈঠাকোনা গ্রামের একটি বন থেকে আকরামকে আটক করে গণপিটুনি দেয় স্থানীয়রা। পরে আহত অবস্থায় তাকে ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলে পুলিশ তাকে স্থানীয় মহেশখোলা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আকরাম।
পুলিশ জানিয়েছে, আকরামসহ বাকীদের অনুপ্রবেশ এবং অপহরণের চেষ্টার সন্দেহে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় এখনো স্থানীয় কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি।
ভারতের খাসি হিলস জেলার পুলিশ সুপার বানরাপলাং জিরওয়া স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, আটকদের কাছ থেকে একটি রিভলভার, পরিচয়পত্র, তিনটি ওয়্যারলেস সেট এবং একটি ম্যাগাজিন জব্দ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশি নাগরিক আটকদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকরাম হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। ৩ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার ওসি আল-আমীন বলেন, ভারতে নিহত আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলার একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। সে দীর্ঘদিন পলাতক ছিল।