Image description

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা মোড় ও আশপাশের এলাকা এখনো ভয়ংকর এক অপরাধ চক্রের আতঙ্কে জর্জরিত। মেলান্দহ উপজেলার সিঁড়িঘাট মিলন বাজার এলাকার মোবারক হোসেনের ছেলে কেটু মিজান ও তাঁর স্ত্রী গোলাপী আক্তার গোলাপী  দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় ছিনতাই, মাদক, ধর্ষণ, প্রতারণাসহ বিভিন্ন জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িয়ে রয়েছেন। সম্প্রতি এই ভয়ংকর চক্রের নৃশংসতার শিকার হয়েছেন দৈনিক প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিন, যাঁকে প্রকাশ্যে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

জানা গেছে, ২৫-৩০ বছর আগে মেলান্দহ থেকে রংপুর চলে আসা কেটু মিজান পরবর্তীতে গাজীপুরে এসে অপরাধ জগতের এক ভয়ংকর রাজত্ব গড়ে তোলেন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী গোলাপী এক সঙ্গে মিলে গাজীপুর মহানগরের ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা মোড়সহ আশপাশের এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন। এখানে প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ চলাচল করলেও এই চক্রের ছায়া অন্ধকারাচ্ছন্ন।

গোলাপী প্রধানত প্রতারণার ফাঁদ (হানিট্র্যাপ) পেতে যুবকদের তাঁর কাছে নিয়ে এসে লুটতরাজ চালাতেন। কেটু মিজান ও গোলাপীর নেতৃত্বাধীন এই চক্র ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, ধর্ষণ, হত্যা, মুক্তাগৃহ থেকে পালানো বন্দিদের আশ্রয় প্রদানের মতো অপরাধে জড়িয়ে রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে শেরপুরের বাদশা মিয়া নামের এক যুবককে প্রতারণার ফাঁদে ফেলার সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছান সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। সাংবাদিক হিসাবে খবর সংগ্রহ করার জন্য তিনি মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে শুরু করলে ভয়ংকর এই চক্রের সদস্যরা তুহিনের ওপর রোষানলে পড়েন।

তুহিনকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করে এবং গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও র‍্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে কেটু মিজান, গোলাপী আক্তার এবং তাদের সহযোগীসহ মোট আট জনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার হওয়া আট আসামির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন জেলার তরুণরা, যারা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন থানায় হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই ও মাদক সংক্রান্ত ২৯টি মামলার আসামি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—

মো. স্বাধীন (২৮), পাবনার ফরিদপুর উপজেলার সোনাহারা গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে, যিনি তুহিন হত্যা মামলার সরাসরি অভিযুক্ত। আল আমিন (২১), খুলনার সোনাডাঙ্গা উপজেলার ময়লাপোতা এলাকার হানিফের ছেলে। শাহ জালাল (৩২), কুমিল্লার হোমনা থানার আন্তপুর গ্রামের হানিফ ভূঁইয়ার ছেলে, ফয়সাল হাসান (২৩), পাবনার চাটমোহর থানার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের কিয়ামুদ্দিনের ছেলে, সাব্বির সুমন (২৬), শেরপুরের নকলা থানার চিতলিয়া গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে, শহীদুল ইসলাম, ত্রিশালের বাসিন্দা।

গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় গত শনিবার কেটু মিজানকে আদালতে তোলা হয়। এই সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে হুমকি দেন, ‘আপনারা নাটক-সিনেমা-ছবি করেন, আমি করি রিয়েল।’ তাঁর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের চোখ পাকিয়ে দেখে হুমকিও দেন। পুলিশি কঠোর পাহারা ও হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় আদালতে উপস্থিত হলেও তাঁর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ থেমে ছিল না।

গাজীপুর মহানগর পুলিশ ও র‍্যাব-১ এর যৌথ অভিযানে মাত্র একদিনে অপরাধী চক্রের মূলে থাকা সদস্যরা গ্রেপ্তার হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন প্রশংসিত হলেও, শহরবাসী ও সাংবাদিক সমাজ এখনও গভীর শোকে ও আতঙ্কে আছেন। এই হত্যাকাণ্ড দেশব্যাপী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।