Image description

যুব জনগোষ্ঠী একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে পারলে তারা মানবসম্পদ উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশের শ্রমশক্তির বড় অংশই যুব। যদিও বেশিরভাগ যুবক কোনো না কোনো কাজে যুক্ত, তবু বড় একটি অংশ বেকার। দেশের মোট বেকারের তুলনায় যুব বেকারের হারও বেশি। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই বেকার যুবকদের বেশিরভাগই উচ্চশিক্ষিত।

অন্যদিকে শ্রমশক্তির বাইরে আছে এক বড় যুব জনগোষ্ঠী, যাদের নেই শিক্ষা, নেই প্রশিক্ষণ, নেই কাজ। তারা দেশের কোনো উৎপাদনশীল কাজে যুক্ত নয়—শুধু জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। দেশে প্রায় ৮০ লাখ তরুণ (১৫-২৯ বছর বয়সী) এভাবে নিষ্ক্রিয়। সরকার তাদের চিহ্নিত করেছে ‘শিক্ষা, কর্ম বা প্রশিক্ষণে নেই’ এমন তরুণ (NEET) হিসেবে। দেশের কর্মক্ষমতার স্বর্ণযুগেও তারা বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বর্তমানে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর দুই-তৃতীয়াংশই তরুণ, কিন্তু এর বড় অংশই বসে আছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে শ্রমশক্তির আওতায় রয়েছে ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের সংখ্যা ২ কোটি ৬৭ লাখ ৬০ হাজার—পুরুষ ১ কোটি ৩৬ লাখ এবং নারী ১ কোটি ৩১ লাখ ৬০ হাজার। মোট শ্রমশক্তিতে যুবদের অংশ ৩৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গ্রামে এই হার ৩৮ দশমিক ৬ এবং শহরে ৩০ দশমিক ১ শতাংশ।

 

এই যুব শ্রমশক্তির মধ্যে কর্মে নিয়োজিত ২ কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার—পুরুষ ১ কোটি ২২ লাখ ৯০ হাজার, নারী ১ কোটি ২৫ লাখ ৩০ হাজার। অর্থাৎ কর্মে নিয়োজিত নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে কিছুটা বেশি। তবে ১৯ লাখ ৪০ হাজার যুবক-যুবতী কর্মক্ষম হয়েও বেকার—পুরুষ ১৩ লাখ ১০ হাজার, নারী ৬ লাখ ৩০ হাজার। মোট বেকারের মধ্যে যুব বেকারের হার গ্রামে ৮০ দশমিক ৭ শতাংশ এবং শহরে ৭৫ দশমিক ১ শতাংশ, যা সামগ্রিকভাবে ৭৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

 
 

উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যেই বেকারত্ব বেশি—স্নাতক পাস ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ, মাধ্যমিক ২১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং উচ্চ মাধ্যমিক ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। বেকার যুবকদের মধ্যে ১৩ লাখ ৪০ হাজার গ্রামে এবং ৬ লাখ শহরে বাস করে। শহরে যুব বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ৫ শতাংশ—নারীদের ক্ষেত্রে ১৩ দশমিক ৩, যা পুরুষদের ৯ দশমিক ৩ শতাংশের চেয়ে বেশি। গ্রামে এই হার ৬ দশমিক ৪ শতাংশ—পুরুষদের ৯ দশমিক ৮ এবং নারীদের ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

 

বিবিএসের জরিপে দেখা যায়, দেশে শিক্ষা, কর্ম বা প্রশিক্ষণে যুক্ত নয় এমন তরুণ-তরুণীর সংখ্যা ৮০ লাখ ৮০ হাজার। শহরে এ হার ৫৮ দশমিক ১ শতাংশ, গ্রামে ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ। এর মধ্যে নারীর হার প্রায় ৬২ শতাংশ, পুরুষের ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মমুখী শিক্ষা ও দক্ষতা না থাকায় এ তরুণরা উৎপাদনশীল জনশক্তিতে পরিণত হতে পারছে না। তাদের কাজে লাগাতে হবে জনমিতিক লভ্যাংশ বাস্তবায়নের জন্য, কারণ দেশের এই লভ্যাংশের দুই-তৃতীয়াংশই তরুণ।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ সারা দেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস। দিবসটি উপলক্ষে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আলোচনা সভা, র্যালি, চেক বিতরণ, রক্তদান কর্মসূচি এবং পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করেছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য—‘প্রযুক্তিনির্ভর যুবশক্তি, বহুপক্ষীয় অংশীদারত্বে অগ্রগতি’।

এদিকে সরকার জানিয়েছে, যুব দিবস উপলক্ষে ৪ হাজার ৯৮৫ জন যুবক-যুবতীকে ৪৭ কোটি ২৬ লাখ ১৪ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২ হাজার ৫৩৪ জন যুবক ও ২ হাজার ৪৫১ জন যুবতী থাকবেন। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ১২ আগস্ট (মঙ্গলবার) দিবসটি উদযাপন করা হবে। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ের গতি কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর যুবশক্তিকে মানবসম্পদে রূপান্তরের জন্য প্রশিক্ষণ, আত্মকর্মসংস্থান ঋণ, এবং স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে সম্পৃক্তকরণ অব্যাহত আছে। গত এক বছরে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ২ লাখ ৭১ হাজার ৭১৯ জনকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়েছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর।