Image description

সেদিন বাংলাদেশ টেলিভিশন বিটিভি প্রাঙ্গনে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেছিলেন ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর শমী কায়সার। হাসিনার যেমন দেড় হাজার ছাত্র জনতাকে মেরেও কোন অনুশোচনা ছিলো না, উল্টো মেট্রোরেল নিজেদের খুনি ছাত্রলীগের চ্যালাদের দিয়ে গুঁড়িয়ে সেটি ধরে কান্না করেছিলেন। একই স্টাইলে শমী কায়সারের কান্না যেনো বারবার মনে করিয়ে দেয় ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ দেওয়া সেই শহীদ আবু সাঈদ কিংবা মুগ্ধ এর কথা। এরপরও শমী কায়সার বারবার জামিন পেয়ে যায়। আজও আবার জামিন পেয়েছেন পতিত স্বৈরচারের এই দালল দোসর। তাই তো সাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে পিছন থেকে কে কলকাঠি নাড়ছে এই ফ্যাসিস্টের দালালের জামিনের জন্য?

 

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় জুবায়ের হাসান ইউসুফ নামে এক শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় জামিন পেয়েছেন ফ্যাসিস্ট হাসিনার এই দোসর। আজ সোমবার (১১ আগস্ট) হাইকোর্ট থেকে এ জামিন আদেশ পেয়েছেন তিনি। গত বছরের ৫ নভেম্বর উওরা থেকে আটক করা হয় শমী কায়সারকে। পরদিন ৬ নভেম্বর ইশতিয়াক মাহমুদ হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

 

গত বছরের ৮ ডিসেম্বর রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় হাইকোর্টে জামিনের জন্য আবেদন জানান এই অভিনেত্রী। আবেদনের শুনানি নিয়ে তাকে ৩ মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। পরে গত ১২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হকের নেতৃত্বাধীন চেম্বার জজ আদালত স্থগিত করেন তার জামিন। চলতি বছরের ৯ এপ্রিল ঢাকার উত্তরায় টঙ্গী সরকারি কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী জুবায়ের হাসান ইউসুফকে হত্যাচেষ্টার মামলায় শমী কায়সারকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন ঢাকার সিএমএম আদালত।

 

এভাবে বারবার পতিত স্বৈরাচারের দোসরকে জামিন দেওয়ায় বেশ ক্ষুব্ধ সাধারণ আমজনতা থেকে শুরু করে নেট নাগিরকরাও। গত বছর হাসিনা পালানোর আগে এক আগষ্ট বিটিভি প্রঙ্গনে স্বৈরাচারের সব দোসর মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা একজোট হয়ে ছাত্র জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছিলেন এমনকি সেদিন বিটিভির অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শমী। উল্টো বিচার চান নিরীহ আমজনতার। সেদিন তার চোখে পড়েনি শহীদ আবু সাঈদ কিংবা মুগ্ধ এর মৃত্যুর করুণ দৃশ্য। সেদিন তার মাথায় আসেনি হাসিনার নৃশংসতার কথা।

 

এক সময়ের ছোট পর্দার অভিনেত্রী শমী কায়সার নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী, নেতা কিংবা বড় ব্যবসায়ীদের সাথে অবৈধভাবে সম্পর্ক রেখে তাদের হাতের মুঠোয় রেখেছিলেন। নির্ভরযোগ্য কিছু সূত্রের তথ্যমতে, নিজের প্রয়োজনে এসব প্রভাবশালীদের বিছানায় যেতেও দ্বিতীয়বার ভাবতেন না স্বৈরাচারের এই দোসর। এক সময় গ্ল্যামার দেখিয়ে দর্শকের মন কেঁড়ে নিলেও পরবর্তীতে যেনো আওয়ামী মন্ত্রীদের মন ভরানোই ছিলো তার কাজ। বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপি ব্যবসায়ীদের কাছে নারী সাপ্লাইও দিতেন শমী।

 

মন্ত্রী আর আমলাদের মন ভরিয়ে সচিবালয়কে নিজের কবজায় রেখেছিলেন শমী। তার কোন তদবির কখনোই ফেলতে পারতেন না, মন্ত্রী কিংবা আওয়ামী পন্থী সব আমলারা। সেই প্রভাবকে কাজে লাগিয়েই নিজে বনে যান ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের সংগঠন ই-ক্যাব দখলে নেন তিনি। এছাড়া ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর পরিচালক পদও বাগিয়ে নেন।

 

বিমানবন্দরকেও ছাড় দেননি নামধারী এই অভিনেত্রী। শহাজালাল বিমানবন্দরের ধাঁনসিড়ি লাউঞ্জ টি তিনি কোন ধরণের প্রতিযোগীতামূলক দরপত্র ছাড়াই বাগিয়ে নেন এরপর সিটি ব্যাংককে ভাড়া দিয়ে মাসে ২ কোটি টাকা কামাতেন ফ্যাসিস্টের এই দোসর। সব মিলিয়ে এখান থেকেই দেড়’শো কোটি টাকা হাতিয়েছেন শমী এমনটিই জানা যায়।

 

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর কাছে গোপন তথ্য ফাঁস করতেন ফ্যাসিস্ট হাসিনার এই দোসর। এমন তথ্যও পাওয়া যায় বিভিন্ন সূত্রে। নানা সময় দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করতেন বিদেশীসহ দেশদ্রোহীদের সাথে মিলে এমন কথাও মেলে শমীর বিরুদ্ধে।

 

শমী কায়সাররা লোক দেখানো কান্না দেখিয়ে কেঁদে কেঁদে কিংবা মন্ত্রীদের বিছানায় গিয়ে নিজেদের হাজার কোটি টাকার স্বপ্ন পূরণ করেছে ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে। সেই শমীর মতো ছোট মনের অধিকারী নিকৃষ্ট কিংবা স্বৈরাচার হাসিনার দালাল কিভাবে খুব সহজেই বারবার জামিন পেয়ে যান এই প্রশ্ন জনমনে। চারিদিকে খুব করে গুঞ্জন দুই জন উপদেষ্টা রয়েছেন এর পিছনে। তাদের সহযোগীতাই বারবার জামিন পেয়ে মুক্ত হচ্ছেন শমী। সরকারের দুজন প্রভাবশালী উপদেষ্টার নাম ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছে।